একাত্তরের সাহসী শেহাব উদ্দীন চলে গেলেন

একাত্তরে পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে মুজিবনগর সরকারের প্রতি আনুগত্য স্বীকারকারী কূটনীতিক কে এম শেহাব উদ্দীন আর নেই।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 15 April 2015, 02:54 PM
Updated : 16 April 2015, 05:55 AM

বুধবার বিকালে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়েছে। বার্ধক্যজনিত নানা রোগের কারণে অবস্থার অবনতি হওয়ায় একদিন আগেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল।    

চট্টগ্রামে জন্ম নেওয়া শেহাব উদ্দীনের বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। তার চার মেয়ের সবাই স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত।

শেহাব উদ্দীনের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ এবং তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক শোকবার্তায় বলা হয়েছে, “১৯৭১ সালে যে সব কূটনীতিক বাংলাদেশের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন এবং পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করছেন, শেহাব উদ্দীন তাদের মধ্যে অন্যতম।”

অবসরপ্রাপ্ত কূটনীতিক শেহাব উদ্দীন আওয়ামী লীগের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ছিলেন।

শেহাব উদ্দীন একাত্তরে নয়া দিল্লিতে পাকিস্তান হাই কমিশনে সেকেন্ড সেক্রেটারি ছিলেন। তখন পাকিস্তান সরকারের চাকরি ছেড়ে তিনি সহকর্মী আমজাদুল হককে (অ্যাসিস্টেন্ট প্রেস অ্যাটাশে) নিয়ে মুজিবনগর সরকারের প্রতি আনুগত্যের ঘোষণা দেন।

স্ত্রী ও দুই শিশুসন্তানসহ ঝুঁকি নিয়ে তার ওই পদক্ষেপের প্রশংসা এখনও করেন সাবেক কূটনীতিকরা।

সাবেক কূটনীতিক মহিউদ্দীন আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শেহাব উদ্দীনই প্রথম কূটনীতিক, যিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আনুগত্যের ঘোষণা দিয়েছিলেন।”

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর শেহাব উদ্দীন পোল্যান্ড, লেবানন, কুয়েত, ফ্রান্স, যুক্তরাজ্য এবং সবশেষ যুক্তরাষ্ট্রে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেন।

২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের ঢাকা সফরের সময় শেহাব উদ্দীন ওই দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্বে ছিলেন।

পূর্ণ সচিব হিসেবে ২০০৩ সালে অবসর নেওয়ার পর রাজধানীর বারিধারা ডিওএইচএসের বাড়িতে থাকতেন শেহাব উদ্দীন।

ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে ‘দেয়ার অ্যান্ড ব্যাক এগেইন- এ ডিপ্লোম্যাটস টেল’ নামে প্রকাশিত তার আত্মজীবনীমূলক বইটি বেশ আলোচিত।

চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলার মোহাম্মদপুর গ্রামের কাজীবাড়িতে ১৯৩৭ সালের ১১ এপ্রিল জন্ম হয় শেহাব উদ্দীনের। ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান ফরেন সার্ভিসে যোগ দেন তিনি।

মেয়েরা বাংলাদেশের বাইরে থাকায় শেহাব উদ্দীনের দাফনের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রয়াতের ভাগ্নে জিয়াউদ্দিন আদিল।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মেয়েরা ঢাকায় ফিরছেন। কোথায় ও কখন জানাজা, দাফন হবে তা আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) ঠিক হবে। তবে চন্দনাইশের বাড়িতেই দাফনের সম্ভাবনা রয়েছে।”

রাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার জোহরের নামাজের পর গুলশান আজাদ মসজিদে শেহাব উদ্দীনের জানাজা হবে।