ঢাবির চার হলে শঙ্কা নিয়ে বসবাস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বয়সের ভারে জরাজীর্ণ চারটি ছাত্রহলের শিক্ষার্থীদের প্রতিটি রাত কাটছে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে। দুই বছর আগে এসব হলের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো সংস্কারের জন্য অর্থ বরাদ্দ হলেও অজ্ঞাত কারণে তা আর শুরু হয়নি।

তপন কান্তি রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 April 2015, 08:09 AM
Updated : 2 April 2015, 10:34 AM

এই অবস্থায় যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার শঙ্কায় আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন, সার্জেন্ট জহুরুল হক, মাস্টারদা সূর্যসেন ও শহীদুল্লাহ হলের শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী ‘আমলাতান্ত্রিক জটিলতাকেই’ ভবনগুলোর সংস্কার কাজের ‘মূল বাধা’ হিসাবে দেখছেন।

দেশে উচ্চ শিক্ষার সবচেয়ে বড় এ শিক্ষায়তনে ১৯৮৫ সালের ১৫ অক্টোবর রাতে জগন্নাথ হল মিলনায়তনের ছাদ ধসে ছাত্র-কর্মচারীসহ ৩৯ জন প্রাণ হারান। প্রতিবছর দিনটি শোক দিবস হিসাবে পালন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

দুই বছর আগে ২০১৩ সালের ৮ মে দুপুরে হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলের টিভি রুমের ছাদের পলেস্তর খসে পড়ে। আর বুধবার সকালে ঝুঁকিপূর্ণ সূর্যসেন হলের মিলনায়তনের সামনের বারান্দা ধসে দুইজন আহত হলে বিষয়টি নতুন করে সামনে আসে।

সূর্যসেন হলের প্রাধ্যক্ষ এএসএম মাকসুদ কামাল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, ১৯৬৭ সালে নির্মিত এই হলের বিভিন্ন ঝুঁকিপূর্ণ অংশ এর আগে বেশ কয়েকবার সংস্কার করা হয়েছে।

ছবি: আসাদুজ্জামান প্রামানিক/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ছবি: আসাদুজ্জামান প্রামানিক/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

“তবে এখন হলের ১০৫-১০৭টি কক্ষের ছাদ ও দেয়ালের পলেস্তর খসে পড়ছে। শিক্ষার্থীরা ঝুঁকিতে রয়েছে। এর স্থায়ী সমাধানের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার বলেও সাড়া পাওয়া যায়নি।”

মুহসীন হল ভবনেরও বিভিন্ন অংশেও পলেস্তারা খসে পড়ছে। বিশেষ করে উত্তর ও দক্ষিণ ব্লকের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। কয়েকদিন আগে চার তলার দক্ষিণ ব্লকে পলেস্তারার বিশাল একটি অংশ খসে পড়ে। প্যাসেজ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় টের পাওয়া যায় কাঁপুনি।

মুহসিন হলের ৬১৭ নম্বর কক্ষের আবাসিক শিক্ষার্থী ইয়াসিন আরাফাত বলেন, “প্রতিদিনই ভবনের কোথাও না কোথাও পলেস্তারা খসে পড়ছে। কয়েক দিন আগেও টেবিলে বসে পড়াশোনার সময় মাথার ওপর পলেস্তারা পড়েছে।

সেদিন কোনো ক্ষতি না হলেও যে কোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা আরাফাতের মতো অনেকেরই।

দীর্ঘদিন সংস্কারের ছোঁয়া না লাগায় ১৯৫৭ সালে নির্মিত সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের দক্ষিণের ভবনটিতে ভাঙন ও ফাটল দেখা দিয়েছে।

গত বছর এপ্রিলে হলের বর্ধিতাংশের পিলার ধসে পড়লে তড়িঘড়ি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মধ্যেই ফাটল দেখা দিয়েছে বর্ধিতাংশের ভবনেও। বৃষ্টির সময় এসব ফাটল দিয়ে পানি পড়ে। ছাদ-দেয়ালের অনেক জায়গায় পলেস্তরা খসে রড বের হয়ে গেছে।

ছবি: আসাদুজ্জামান প্রামানিক/বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে পুরনো ছাত্রাবাস শহীদুল্লাহ হল, ছয় বছর পর এটি শতবর্ষ পূর্ণ করবে। ১৯২১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় নির্মিত এ হলের ফাটল কয়েক দফা সংস্কার করেও টেকানো যায়নি।

এই হলের এক্স-১ ও এক্স-২ ভবনের অবস্থা সবচেয়ে বেশি খারাপ। এক্স-২ ভবনের পঞ্চম তলার বিভিন্ন কক্ষে ফাটল চুইয়ে বৃষ্টির পানি ঢোকায় ভোগান্তি পোহাতে হয় শিক্ষার্থীদের।

শহীদুল্লাহ হলের শিক্ষার্থী সাদিকুল ইসলাম বলেন, “সংস্কার করলে কিছুদিন পলেস্তারা খসে পড়া বন্ধ থাকে। কিন্তু এটি স্থায়ী সমাধান নয়। কাজেই আমাদের ঝুঁকির মধ্যেই থাকতে হচ্ছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, ঝুঁকিপূর্ণ চারটি হলে জরুরি সংস্কারের জন্য ২০১৩ সালের মে মাসে ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সেই বরাদ্দের অর্ধেক অর্থ কিছুদিন আগে হাতে পেয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সংস্কার কাজের নকশা নিয়ে বুয়েটের সঙ্গে দর কষাকষিসহ বিভিন্ন জটিলতায় এখনো কাজ শুরু করা যায়নি। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী মফিজুর রহমান জানান, বাজেট পাস হওয়ার পরপরই বুয়েট কর্তৃপক্ষকে নকশা প্রণয়নের জন্য বলা হয়েছিল।

“সেই নকশার নথি মার্চ মাসের শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছেছে। চূড়ান্ত নকশা প্রণয়ণে বুয়েট কর্তৃপক্ষের চাহিদা নিয়ে এখনো দর-কষাকষি চলছে।”

বুধবার সূর্যসেন হলে দুর্ঘটনার পর আগামী ৬ এপ্রিল বুয়েট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকের দিন ঠিক করা হয়েছে বলে জানান প্রকৌশলী মফিজ।

তবে কবে নাগাদ সংস্কার কাজ শুরু হবে, তা তিনি নিজেও জানেন না।