‘ডেটলাইন ঢাকা’ বইমেলায় নিয়ে এলো বিপিএল

অমর একুশে গ্রন্থমেলার ২৬তম দিনে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক আরও একটি বই এসেছে বিপিএলের স্টলে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Feb 2015, 07:31 PM
Updated : 26 Feb 2015, 07:31 PM

বৃহস্পতিবার ভারতের দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার সাংবাদিক পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের লেখা মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক প্রামাণ্যগ্রন্থ ‘ডেটলাইন ঢাকা’র নতুন সংস্করণ মেলায় আনে বিপিএল।

দেশের সর্বপ্রথম ইন্টারনেট সংবাদ মাধ্যম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সহযোগী প্রতিষ্ঠান প্রকাশনা সংস্থা বিপিএল। এ বছরই যাত্রা শুরু করা এই প্রকাশনা থেকে ইতোমধ্যেই ১২টি বই বাজারে এসেছে।

সাংবাদিক পার্থ চট্টোপাধ্যায় ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ভারতের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকার হয়ে বাংলাদেশে এসেছিলেন। সাংবাদিক হিসেবে দীর্ঘদিন অবস্থান করে যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক পটপরিবর্তন প্রত্যক্ষ করেন তিনি।

কলকাতায় ফিরে পরের বছরই নিজের অভিজ্ঞতা নিয়ে ‘ডেটলাইন ঢাকা’ বইটি প্রকাশ করেন পার্থ চট্টপাধ্যায়।

প্রথম প্রকাশের কয়েক বছরের মধ্যেই বইটির সব কপি ফুরিয়ে যায়। দুই দশক পর আরও একটি সংস্করণ ছাপা হলে সেটিও শেষ হয়ে যায় পাঠক চাহিদার কারণে। বর্তমানে বাজারে অনুপস্থিত এই প্রমাণ্য গ্রন্থটি পুনরায় বিপিএল থেকে প্রকাশ করেন প্রবীণ এই সাংবাদিক।

বিপিএল-এর নির্বাহী পরিচালক অনিন্দ্য রহমান বলেন, বইটিতে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে দেখা বিভিন্ন ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন লেখক। এছাড়া ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয়ের পর যুদ্ধ থেকে উত্তরণের পরবর্তী পরিস্থিতিগুলোও তুলে ধরেছেন তিনি।

আঙ্গিকে নতুনত্ব ও বিষয়ে বৈচিত্রের প্রতিশ্রুতি দিয়ে একুশে গ্রন্থমেলায় ছয়টি বই নিয়ে আত্মপ্রকাশ করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর পাবলিশিং লিমিটেড (বিপিএল)।

বইমেলায় বিপিএলের স্টল

বইগুলোর মধ্যে রয়েছে- অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের প্রবন্ধের সংকলন ‘সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতা’, একাত্তরের স্মৃতি নিয়ে নাজিম মাহমুদের ‘যখন ক্রীতদাস’, মাহবুব আজাদের রাজনৈতিক ব্যঙ্গ রচনা ‘আশাকর্পূর’ ইকবাল করিম হাসনুর কিউবা ভ্রমণ নিয়ে লেখা ‘মুখ ঢাকিনি বিজ্ঞাপনে’।

এছাড়াও রয়েছে বাংলা সাহিত্যের দুর্লভ রচনা রবীন্দ্রনাথ মিত্রের ‘মানময়ী গার্লস স্কুল’ ও প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ের ‘পারসীক গল্প’ বইয়ের পুনঃমুদ্রণ।

মেলার শুরুর দিকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ নামে একটি প্রবন্ধ সংকলন আনে বিপিএল। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক প্রয়াত আলী আনোয়ারের সম্পাদিত এই সংকলে প্রয়াত ইতিহাসবিদ সালাহ উদ্দীন আহমদ, প্রয়াত শিক্ষাবিদ খান সারওয়ার মুর্শিদ, প্রয়াত অধ্যাপক আলী আনোয়ার, অধ্যাপক সনৎ কুমার সাহা, লেখক-গবেষক গোলাম মুরশিদের প্রবন্ধ রয়েছে।

মেলায় আসার পর থেকেই পাঠক সমাজে ব্যাপক সমাদৃত হয়েছে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’।

বিপিএলের বিক্রয়কর্মীরা জানান, মেলা চলাকালীন বিভিন্ন সময়ে তাদের স্টলে এস. ওয়াজেদ আলীর গল্পের সংকলন ‘মাশুকের দরবার’, পশ্চিমবঙ্গের চলচ্চিত্র সাময়িকীগুলোতে উঠে আসা বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের প্রাসঙ্গিক রচনাগুলোর সংকলন ‘প্রসাদ’, পূরবী বসুর লেখা ‘নারী দীপাবলী’ এবং নাদির জুনাইদ এর লেখা ‘বাংলা রাজনৈতিক চলচ্চিত্র: সত্যজিৎ-ঋত্বিক-মৃণালের প্রতিবাদী ছবি’ বইগুলো মেলায় আসে।

বাংলা একাডেমির বিক্রিতে রেকর্ড

বইমেলায় বাংলা একাডেমির স্টলে প্রথম ২৫ দিনের বিক্রি গত বছরের সারা মাসের রেকর্ড ছাড়িয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

একাডেমির বিক্রয়, বিপণন ও পুনঃমুদ্রণ শাখার উপ পরিচালক আফজাল হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, মেলায় বাংলা একাডেমির পাঁচটি স্টলে প্রথম ২৫ দিনে এক কোটি ৩০ লাখ টাকার বই বিক্রি হয়েছে। গত বছর পুরো মাসে বিক্রি হয়েছিল প্রায় এক কোটি ১৮ লাখ টাকা।

মেলার শেষ পর‌্যন্ত বিক্রি দেড় কোটি টাকা হবে বলে আশা করেন তিনি।

এ বছর মূল ভবনের বিপণন কেন্দ্র ছাড়াও একাডেমি চত্বরে পুকুর পাড়ে একটি, শিশু কর্নারে একটি এবং নির্মাণাধীন ভবনের নিচে একটি স্টল চালু করেছে বাংলা একাডেমি।  সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রয়েছে আরেকটি স্টল।

বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত বাংলা থেকে ইংরেজি, ইংরেজি থেকে বাংলা এবং বাংলা থেকে বাংলা অভিধানগুলো সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে জানান আফজাল।

২৬তম দিনের নতুন বই

২৬তম দিনে বইমেলায় ১৩৪টি নতুন বই এসেছে এবং নতুন ৮টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে বলে একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ থেকে জানান হয়েছে।

বিকেলে মেলার মূল মঞ্চে ‘গত বছরে বাংলাদেশের কবিতা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। অধ্যাপক রফিকউল্লাহ খান অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সাহিত্য বিভাগের সম্পাদক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা, লেখক রেজাউদ্দিন স্ট্যালিন আলোচনায় অংশ নেন। সভাপতিত্ব করেন কবি আসাদ চৌধুরী।

সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন কণ্ঠশিল্পী অমিয় বাউল, খগেন্দ্রনাথ সরকার, বাবু সরকার, মনিরুজ্জামান ভূঁইয়া, রহিমা খাতুন, পল্লবী সরকার মালতী, মোঃ মিলন, সুধীর মন্ডল, বিমল বাউল, জাকির জাফরান এবং আব্দুল আলীম। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন অভিজিৎ রায় (তবলা), ইব্রাহীম মিয়া (বাঁশি), রতন কুমার রায় (দোতারা), মহিন শাহ (মন্দিরা), হুমায়ুন কবির (ঢোল) এবং নাজমুল আলম খান।