তারা বলছেন, একজন আইন প্রণেতার নেতৃত্বে অমানবিক এই কাজের বিরুদ্ধে আইনের আশ্রয় নেবেন তারা।
পাথরঘাটা উপজেলায় গহরপুর গ্রামে রোববার ওই গৃহবধূর ওপর এই নির্যাতন চালানো হয়। তবে পুলিশ অজুহাত দেখিয়েছে, কেউ অভিযোগ না করায় তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
মিথ্যা মামলা ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভিন্ন জনকে হয়রানির অভিযোগে ওই গৃহবধূকে নিয়ে সালিশ বসে, যাতে স্থানীয় সংসদ সদস্য ছাড়াও কয়েকজন জনপ্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন।
এদের মধ্যে রয়েছেন পাথরঘাটা উপজেলা নারী ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা পারভীন, পাথরঘাটা পৌরসভার নারী কাউন্সিলর ইয়াছিন আরা, পৌর কাউন্সিলর মোজাম্মেল হক, বাবুল মিস্ত্রি।
ফাতিমা পারভীন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এলাকার অনেক লোককে হয়রানি করায় সালিশে বিচারে দোষী সাব্যস্ত করা হয় ওই গৃহবধূকে।
এরপর আওয়ামী লীগ সংসদ সদস্য হাচানুর ওই নারীকে জুতাপেটা করে মাথায় মানুষের বিষ্ঠা ঢেলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। তখন উপস্থিত কয়েকজন পাশের শৌচাগার থেকে এক বালতি মলমূত্র এনে ওই গৃহবধূর মাথায় ঢেলে দেন।
ফাতিমা পারভীন বলেন, “অভিযোগ প্রমাণিত হলেও আমি নিজে এ শাস্তি মেনে নিতে পারছি না। কিন্তু যেহেতু সংসদ সদস্য রায় দিয়েছেন, তাই তা মেনে নিতে হয়েছে।”
এই বিষয়ে হাচানুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ওই নারী যে ‘অন্যায়’ করেছেন, তাতে তাকে পেটানো উচিত ছিল।
“তবে গায়ে হাত তুললে নারী নির্যাতন মামলা হত।আর সালিশে উপস্থিত সকলেই তাকে (গৃহবধূ) মানুষের বিষ্ঠা খাওয়াতে বলেছিল। আমি বিষ্ঠা না খাইয়ে মাথায় ঢালার নির্দেশ দিই।”
এ ঘটনা শুনে বেসরকারি উন্নয়ন সংগঠন ‘জাগো নারী’র প্রধান নির্বাহী হোসনে আরা হাসি ওই এলাকায় যান।
সেখান থেকে ফিরে বৃহস্পতিবার তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাংসদ যে রায় দিয়েছেন তা অমানবিক। এটা কিছুতেই একজন নারী হিসেবে মেনে নেওয়া যায় না।”
তবে ওই নারীর যে ধরনের কাজ করেছেন, তা-ও সমর্থনযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বরগুনা জেলা মহিলা পরিষদের সভানেত্রী নাজমা বেগম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তাদের একটি তদন্ত দল শুক্রবার পাথরঘাটা গিয়ে তদন্ত করবে।
“পরবর্তীতে আমরা এই বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেব।”
গৃহবধূর ওপর সালিশে নির্যাতন নিয়ে পাথরঘাটা থানার ওসি জিএম শাহনেওয়াজের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঘটনাটি তাদেরও জানা আছে।
“কিন্তু নির্যাতিত গৃহবধূর পক্ষে কেউ অভিযোগ না করায় আমাদের পক্ষে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সুযোগ নেই।”
রংপুরের এক গৃহবধূকে নির্যাতনের ঘটনায় ২০১১ সালে এক আদেশে হাই কোর্ট ‘সালিশ-ব্যবসা’ বন্ধ করার নির্দেশ দিয়ে বলেছিল, পুলিশের দায়িত্ব তা বন্ধ করা। তারা তা না করলে আদালত ব্যবস্থা নেবে।