‘মানুষ কি শুধু তারাই’

মানবতাবিরোধী অপরাধে মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ডের রায় নিয়ে উদ্বেগ জানানোয় মানবাধিকার বিষয়ে পশ্চিমাদের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 Oct 2014, 02:03 PM
Updated : 30 Oct 2014, 05:50 PM

মানবাধিকার নিশ্চিতের লক্ষ্যেই বাংলাদেশে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার করা প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

আগের দিন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রায়ে যুদ্ধাপরাধে জামায়াতের আমির মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর বিবৃতি দিয়ে তার সমালোচনা করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল।

বৃহস্পতিবার বিকালে গণভবনে সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এই বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “মানবাধিকার লংঘনকারীদের মানবাধিকার নিয়ে তারা কেন উদ্বেগ প্রকাশ করছে?”

তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশে মানবাধিকার লংঘিত হয়েছে বলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর তারা উদ্বেগ প্রকাশ করছে।

“আমাদের মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। জঙ্গি দমন করতে হবে। এজন্য মানবতাবিরোধী এই অপরাধীদের আমাদের দেশের আইনেই বিচার হবে।”

মানবাধিকার বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমি আপনাদের (সাংবাদিক) মাধ্যমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে জানতে চাচ্ছি যে, এই উদ্বেগটা তাদের কোথায় ছিল যখন ইসরায়েল গাজায় অন্তঃসত্ত্বা নারী আর ছোট ছোট শিশুদের হত্যা করেছে? তখন তাদের উদ্বেগটা কোথায় ছিল? তখন তাদের উদ্বেগ দেখলে খুশি হতাম।”

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের দেশের আদালতে বিচার হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সকল বিষয় লক্ষ্য রেখেই বিচার হচ্ছে।”

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সংঘটিত গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিচারের প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, “এখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধীদের ধরে এনে বিচার হচ্ছে। ৯০ বছরের বৃদ্ধের বিচার করা হচ্ছে। 

“তাদের দেশের মানুষ- মানুষ। আর আমার দেশের মানুষ, মানুষ না?”

“নিজামী কে ছিল এটা সবাই জানে,”বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে হত্যার জন্য পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানে জেএমবি সংগঠিত হচ্ছিল বলে  ভারতীয় গণমাধ্যম সম্প্রতি জানিয়েছে।

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “জঙ্গি তৎপরতা এদেশে ছিল- এটা ঠিক। আমরাই তা বন্ধ করেছি। তারা ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে।” 

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এ সংক্রান্ত তথ্যের আদান-প্রদানের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই বিষয়ে আমি বেশি কিছু বলতে চাই না।”

তবে বর্ধমানের বোমা বিস্ফোরণের ঘটনার পর বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ভারতে গেছে বলে জানান তিনি।

জঙ্গি তংপরতা বন্ধে সবার ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা দরকার বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশের সরকার প্রধান।

নিজের নিরাপত্তা নিয়ে মোটেই উদ্বিগ্ন নন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “আমি তো এক্সটেনডেড (অতিরিক্ত) লাইফ পেয়েছি। অনেক আগেই তো মরে যাওয়ার কথা ছিল। আমি মোটেই উদ্বিগ্ন নই।

“৭১-এ বন্দী ছিলাম। বন্দী অবস্থায় আমার সন্তান জয়ের জন্ম। ৭৫-এ ভাগ্যগুণে বেঁচে গেছি। ৮১ সালে দেশে ফেরার পর থেকেই হামলা।

“যে জন্মাবে, তাকে মরতেই হবে।  জীবন দেওয়ার মালিক আল্লাহ, নিয়ে যাওয়ার মালিকও আল্লাহ। যেদিন নিয়ে যাওয়ার সেদিন নিয়ে যাবে।”

শেখ হাসিনা বলেন, “আমার উপরে তো অনেকবারই হামলা হয়েছে। মৃত্যু অবধারিত। তাই আমার ভাগে যতটুকু কাজ করা বাকি আছে ততটুকু শেষ করব। বাংলাদেশটাকে মধ্যম আয়ের দেশ করব। তারপর আমার ছুটি।”

আরেক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতিটি সরকারের মেয়াদ সাংবিধানিকভাবে পাঁচ বছর। নির্বাচন সময় মতো আসবে। একটা নির্বাচন হলে তো পরের নির্বাচন আসবেই। এটা নতুন কিছু না। 

প্রধানমন্ত্রীর সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর ব্যর্থ বলে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের মন্তব্যের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, “তারা তাদের দেখা দেখুক। আমি আমার দেশের মানুষের উন্নয়ন করে এগিয়ে যাব।”