রানীশংকৈলে পিটিয়ে হত্যা: বাড়িঘরে ভাংচুর, আগুন

তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে বুধবার রাতে ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল উপজেলায় এক হোটেল ব্যবসায়ীকে পিটিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষের লোকজন।

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Oct 2014, 03:31 PM
Updated : 23 Oct 2014, 03:31 PM

পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন জানায়, এ ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার প্রতিপক্ষের লোকজনের বাড়িঘরে হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। রানীশংকৈল-ঠাকুরগাঁও সড়কের বিভিন্ন স্থানে কাঠের গুড়ি ও টায়ার জ্বালিয়ে অবরোধ করলে উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

ঠাকুরগাঁও পুলিশ লাইন থেকে কয়েক প্লাটুন পুলিশ গিয়ে ব্যর্থ হলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে দাঙ্গা পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

নিহত একরামুল হক খান (৫২) রানীশংকৈল উপজেলার মহলবাড়ি মহল্লার বাসিন্দা। তাদের আদি নিবাস ফেনী জেলায়। দেশ স্বাধীনের আগে তারা এখানে এসে বসবাস শুরু করেন।

উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে ওখানে বসতি স্থাপনকারী কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে বিরোধের জেরে এ হত্যার ঘটনা ঘটে বলে নিহতের পরিবার দাবি করছে।

হত্যার ঘটনায় ৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আরো ৩০/৩৫ জনের নামে নিহতের ভাই রফিকুল ইসলাম রানীশংকৈল থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।

স্থানীয়দের বরাতি দিয়ে রানীশংকৈল থানার ওসি সুকুমার রায় জানান, একরামুল হকের নাতনী দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী তুসরাত জাহানসহ বেশ কয়েকজন মহলবাড়ি জামে মসজিদের হাবিবুল্লাহ আল হাবিবের কাছে প্রাইভেট পড়ে। প্রাইভেট পড়ানোর সময় ওই শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রহার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ নিয়ে বুধবার রাতে একটি সালিশ বৈঠক বসে। বৈঠক চলাকালে একরামুল হকের সঙ্গে ওই শিক্ষকের পক্ষের লোকজনের কথা কাটাকাটি হয়।

এক পর্যায়ে লোকজন একরামুল হককে মারধর শুরু করে। স্থানীয় অন্য লোকজন তাকে উদ্ধার করে রানীশংকৈল উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

হামলার প্রত্যক্ষদর্শী আব্দুল মতিন, আব্দুল লতিফসহ কয়েকজন জানান, হামলার জেরে বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কয়েকশ লোক প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা চালায়।

কিন্তু অবস্থা আন্দাজ করতে পেরে বুধবার রাতেই প্রতিপক্ষের লোকজন পরিবার পরিজন নিয়ে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যায়।

ওসি বলেন, “বৃহস্পতিবার বাড়িতে কাউকে না পেয়ে লোকজন মহলবাড়ি এলাকার ২৭টি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে।”

রানীশংকৈল উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আশরাফুল ইসলাম জানান, লোকজন রানীশংকৈল-ঠাকুরগাঁও সড়কের বিভিন্ন স্থানে কাঠের গুড়ি ও টায়ার জ্বালিয়ে রাস্তা অবরোধ করে রাখে। এতে ওই উপজেলায় সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। উপজেলা সদরের সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও বন্ধ থাকে দিনভর।

থানা পুলিশ তা সামাল দিতে না পারায় বেলা ১১টার দিকে ঠাকুরগাঁও থেকে ২ প্লাটুন পুলিশ ও দাঙ্গা পুলিশ গিয়ে ঘটনা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়।

এরপর দুপুর ১টার দিকে একজন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সেখানে বিজিবি মোতায়েন করা হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে।

ইউএনও আরো জানান, উপজেলায় পর্যাপ্ত পুলিশ ও বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া লোকজনের খোঁজ করা হচ্ছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর তাদের বাড়ি ফিরে আসার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

নিহতের ভাই রফিকুল ইসলাম জানান, তার ভাই একরামুল একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। তাকে ষড়যন্ত্র করে হত্যা করা হয়েছে।