কুড়িগ্রামে  আবারো বন্যা: ৪ উপজেলা প্লাবিত

কুড়িগ্রামে চার দিন থেকে টানা ভারি বৃষ্টির কারণে নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। দ্বিতীয় দফা বন্যায় চার উপজেলায় নতুন করে ৬০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।

আহসান হাবীব নীলু কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2014, 03:54 PM
Updated : 23 Sept 2014, 03:54 PM

বন্যার পনিতে তলিয়ে যাওয়ায় আবারো ফসল নষ্ট হওয়ার আশংকা করছেন কৃষকরা। ভেসে গেছে শত শত পুকুরের মাছ। প্রায় অর্ধশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ওঠায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজার রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তা ও ধরলা  নদীর পানি ফেরিঘাট পয়েন্টে ৪৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।

নদ-নদীর তীরবর্তী ৬০টি গ্রাম নতুন করে প্লাবিত হয়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে রৌমারী উপজেলায় রয়েছে ৪০টি। তবে, ব্রক্ষপুত্র ও দুধকুমোর নদীর পানি কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। 

কুড়িগ্রাম কৃষি বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক আফছার আলী জানান, জেলায় ১১ হাজার হেক্টর জমির রোপা আমন ক্ষেত এখন পানির নীচে রয়েছে। ২/৩ দিনের মধ্যে পানি সরে না গেলে কৃষকরা মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়বে।

সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়নের ঘনশ্যামপুর গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন জানান, দ্বিতীয় দফা বন্যায় তার ২ বিঘা জমির রোপা আমন ক্ষেত এখন নষ্ট হওয়ার উপক্রম।

সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের কাচিরচর গ্রামের কৃষক ইয়াকুব আলী জানান, প্রথম দফা বন্যায় নষ্ট হওয়া ৬ বিঘা জমিতে নতুন করে আমন লাগিয়েছেন তিনি ৬ হাজার টাকা দাদন নিয়ে। সে ক্ষেত এখন ৪ দিন থেকে দ্বিতীয় দফা বন্যার পানির নীচে।

ঘোগাদহ ইউনিয়নের চান্দের খামার বিল এলাকার বর্গাচাষি আইয়ুব  বলেন, “বাহে ২ হাজার টেকা খরচ করি দুই বিঘা আধি জমিত মালশিরা ধান নাগাইছিনু, তাক বানে খায়া গেইল।

“ফির ২৪ শ টেকা খরচ করি গুটি স্বর্ণা ধান নাগানু। সে ধান ৩দিন থাকি পানিত পড়ি আছে। হামরা খালি খরচ করি, বানে খালি খায়া যায়। এ্যালা বাহে কী করি কন তো।”

রৌমারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মজিবর রহমান জানান,  শৌলমারী, রৌমারী ও যাদুরচর  ইউনিয়নের ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার ১ হাজার ৫৭৩ হেক্টর আমনসহ অন্যান্য ফসল ডুবে গেছে।

এছাড়াও  ভেসে গেছে ৩০টি পুকুরের মাছ। ১৫টি স্কুল জলমগ্ন হয়ে পড়ায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে।

রাজারহাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল হাশেম জানান, নতুন করে বন্যায় প্রায় ১ হাজার হেক্টর জমির রোপা-আমন, ১৫ হেক্টর জমির সবজি, দু’শতাদিক পুকুর এখন পানির নীচে।

পানিবন্দি হয়ে পড়েছে দেড় হাজার পরিবার। হরিশ্বর তালুক উচ্চ বিদ্যালয় ও হরিশ্বর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে হাঁটু পানি জমায় ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।

রাজারহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাজেদুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এ পর্যন্ত ২৫০টি পানিবন্দি পরিবারের তালিকা হাতে পেয়েছেন।

ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শরিফুল আলম মিয়া সোহেল বলেন, দ্বিতীয় দফা বন্যায় এ ইউনিয়নের ২ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

দেড় শতাধিক হেক্টর জমির রোপা আমন ক্ষেত চারদিন থেকে পানির নীচে। ভেসে গেছে অর্ধশত পুকুরের মাছ। বিপাকে পড়েছে কৃষক ও মৎস্য চাষিরা।

জেলা শিক্ষা অফিসার ভব শংকর জানান, গত দুই তিন দিনে কুড়িগ্রাম জেলায় চারটি উপজেলায় অর্ধশত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি ওঠায় শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ হয়ে আছে। তবে পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত শিক্ষা কার্যক্রম চালু করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এর আগে অগাস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে প্রায় ১৫দিনব্যাপী বন্যায় এ জেলাসহ উত্তরের কয়েকটি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকার ফসল নষ্ট হয়।