সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া এই শিক্ষার্থীর সঙ্গী ছিল ‘হ্যালো’র জন্য নির্বাচিত আরো ৪০ শিশু; যারা বাছাইয়ে বাদ পড়েছেন তারাও এসেছিলেন উৎসাহ দিতে।
কচিকাঁচার উচ্ছ্বাস, আর তাদের প্রতি অভিভাবক ও অতিথিদের আশা প্রকাশের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রাম নগরীর থিয়েটার ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হল শিশু সাংবাদিকতা উৎসব।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের উদ্যোগে শিশুদের জন্য, শিশুদের দ্বারা পরিচালিত সংবাদভিত্তিক ওয়েবসাইটের শিশু সাংবাদিক বাছাইয়ের আয়োজনের সমাপনী দিন ছিল এদিন।
‘আমার কথাও যাবে বহুদূর’ স্লোগানকে সামনে রেখে বিকালে শুরু হওয়া এই সম্মেলনের পর্দা নামে সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ও অতিথিদের আলোচনার মধ্য দিয়ে।
‘হ্যালো’র কার্যক্রমকে সাধুবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “শিশুরা সুস্থধারায় এগিয়ে যাবে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এ উদ্যোগ শিশুদের কল্পনা, তাদের মনোজগতকে বিকাশে সুযোগ করে দেবে।”
শিশুদের সাংবাদিক হিসেবে গড়ে তুলতে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এই উদ্যোগের প্রশংসা করে চট্টগ্রামের মেয়র মনজুর আলম বলেন, “এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে শিশুরা উৎসাহিত হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে।”
‘হ্যালো’র সাংবাদিক বাছাইয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ২৩ জেলায় একযোগে চলছে এই শিশু সাংবাদিক উৎসব।
মন্ত্রী মোশাররফ হোসেন বলেন, “যে প্রক্রিয়ার মধ্যে তারা বাছাই হয়েছে তা বেশ গুণগত। এ সব শিশুরাই একদিন বড় সাংবাদিক হবে। শিশু কিশোররা তাদের ভাবনার কথা বলবে। তাদের ইচ্ছে, ভালো লাগা, ভবিষ্যতের স্বপ্ন আর কল্পনার কথাও বলবে এখানে।”
সাংবাদিক হিসেবে কাজ শুরুর অনুভূতির বর্ণনায় আয়েশা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলে, “আমি প্রতিদিন অনেক কিছু জানছি, এসব এখন জানাতে চাই। সুযোগ এসেছে অন্যকে জানানোর। দেশ গড়ায় ভূমিকা রাখতে তুলে ধরব চারপাশের নানা কিছু।”
স্কুল ম্যাগাজিনে লেখার অভ্যাস রয়েছে আয়েশার। আশা করছে, তা কাজে লাগবে সাংবাদিকতায়। নিজের পড়াশোনার পাশাপাশি সংবাদ, গল্প, নিজের মনের কথাও লিখবে সে।
ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী সৈয়দা হুমায়রা ইসলামের তো বিশ্বাসই হচ্ছে না যে সে এখন সাংবাদিক। নির্বাচিত হওয়ার পর এখন শিশু সাংবাদিক হিসেবে দেশ গড়ায় ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি তার।
উৎসবের অতিথি বাওয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আনোয়ারা বেগম এই বয়েসে এসে আক্ষেপ প্রকাশ করেন তাদের ছেলেবেলায় সময়ে এই ধরনের কিছু না পাওয়ার জন্য।
“আমরা এ বয়সে এ ধরনের সুযোগ পাওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাবিনি। তোমরা তথ্য প্রযুক্তির যুগে জন্ম নিয়েছ এবং তার ব্যবহারের মধ্য দিয়ে নিজেদের বিকাশের সুযোগ পাচ্ছ, তা অনেক বেশি আনন্দের। সুতরাং আমরা যা পারিনি, তোমরা তা পারবে-এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
শিশুদের সাংবাদিক হিসেবে গড়ে তোলার মধ্য দিয়ে তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ জাগ্রত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন এই শিক্ষক।
শিশুদের বিকাশে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম এ উদ্যোগকে সঠিক ও যথার্থ বলেই মত দেন তিনি।
চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার বনজ কুমার মজুমদার হ্যালো’র সাংবাদিক বাছাইয়ের এই কার্যক্রমের প্রশংসা করেন।
“এখান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আগামীতে সাংবাদিক হতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। তাদের জন্য সামনে বহু সুযোগ। আসলে দেশ সাজাতে হলে চলমান একটা বাছাই প্রক্রিয়ার মধ্যে থাকতে হয়।”
“একই সঙ্গে দুটি প্রতিভা সত্তরের দশকে পেয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি আরেকজন স্টারের অপেক্ষায় রয়েছে। বাংলাদেশও পারবে। এ দেশে শিশুরাই পারবে, এখান থেকে কেউ বেড়ে উঠবে।”
নারী সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান শিশুদের উৎসাহিত করার জন্য অভিভাবকদেরও অভিনন্দন জানান।
সাংবাদিকতায় শিশু-কিশোরদের আগ্রহ, প্রশিক্ষণ ও তাদের ভাবনা নিয়ে অনেকটা কথোপকথনের ঢঙেই বক্তব্য দেন তিনি।
সংসদে আপনার কাজ কী? শিশু অধিকার বাস্তবায়ন নিয়ে আপনার কী ভূমিকা থাকবে? তথ্য প্রযুক্তির যুগে কবে হাতে হাতে ই-বুক পৌঁছবে? - এমনতর সব প্রশ্ন আসছিল সংসদ সদস্যের দিকে।
জবাবে শিশুদের জন্য তথ্য প্রযুক্তির সুবিধা, বই বিতরণসহ সরকারের নানা পদক্ষেপ তুলে ধরেন ওয়াসিকা।
গ্রামীণফোনের অংশীদারিত্বে এই উৎসব সফলভাবে অনুষ্ঠিত হওয়ায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বার্তা সম্পাদক গাজী নাসির উদ্দিন আহমেদ উপস্থিত সবাইকে ধন্যবাদ জানান।
শিশুদের সংগ্রহ করা খবর নিয়ে শিশুদের জন্য বিশেষায়িত ওয়েবসাইট যাত্রা শুরু হয় গত বছর ৩১ মার্চ। হ্যালোর জন্য সংবাদ সংগ্রহ থেকে পরিবেশন পর্যন্ত সব কাজেই যুক্ত রয়েছে শিশু ও কিশোর সাংবাদিকরা।
শিশু সাংবাদিকতায় বিশ্বের প্রথম বাংলা ওয়েবসাইট ‘হ্যালো’। বর্তমানে পাঁচ হাজারেরও বেশি শিশু-কিশোর হ্যালো’র সঙ্গে যুক্ত রয়েছে।