শ্যালকের ‘পরিকল্পনায়’ জাহাঙ্গীরকে খুন

পারিবারিক বিরোধে শ্যালকের পরিকল্পনায় রাজধানীর আগারগাঁওয়ের আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম খুন হন বলে র‌্যাবের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 August 2014, 04:42 PM
Updated : 26 August 2014, 04:48 PM

এই হত্যাকাণ্ডে ‘জড়িত’ তিনজনকে গ্রেপ্তারের পর মঙ্গলবার র‌্যাবের এক সংবাদ সম্মেলনে  বলা হয়, জাহাঙ্গীরের স্ত্রীর বড় ভাই মিন্টু ভারতে থেকে ভাড়াটে খুনি দিয়ে ভগ্নিপতিকে খুনের পরিকল্পনা করেন।

জাহাঙ্গীরের শ্বশুর হাজী নুর মোহাম্মদ ছিলেন ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি। কয়েক বছর আগে ওই ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক হত্যাকাণ্ডের পর নিখোঁজ হন তিনি। পরিবারের দাবি, র‌্যাব তাকে গুম করেছে।

হাজি নুরের ছেলে মিন্টু বিভিন্ন মামলা মাথায় নিয়ে ভারতে পালিয়ে আছেন। তার অন্য দুই ছেলের মৃত্যুর পর জামাতা জাহাঙ্গীরই শ্বশুর বাড়ির ব্যবসা-সম্পত্তি দেখাশোনা করে আসছিলেন।

র‌্যাবের মুখপাত্র মুফতি মাহমুদ বলেন, সম্পত্তি নিয়ে জাহাঙ্গীর ও তার শ্যালক মিন্টুর মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব চলছিল।

“মিন্টুর ধারণা ছিল, তার বাবা ও বোন স্বপ্নার স্বামী মান্নানের নিখোঁজের পেছনে জাহাঙ্গীরের হাত ছিল। পরবর্তী সময়ে এলাকায় মাদকসহ অন্যান্য ব্যবসা জাহাঙ্গীর তার নিজের নিয়ন্ত্রণে নেয়ায় ভাগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছিল মিন্টু।”

এই কারণেই মিন্টু ভারতে থেকে জাহাঙ্গীরকে হত্যার পরিকল্পনা করে জানিয়ে র‌্যাব বলছে, এজন্য তিন লাখ টাকা খরচ করেন তিনি।

গ্রেপ্তার তিনজনের মধ্যে রয়েছেন মিন্টুর বন্ধু কবিরের স্ত্রী আমেনা খাতুন (২৭),জান্নাতুল ফেরদৌস নাঈম (২২) এবং ইয়াসিন সরকার (৩৪)।

র‌্যাব কর্মকর্তা মুফতি মাহমুদ বলেন, আমেনাকে সাভারের নবীনগর বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার স্বামী কবির ভারতে রয়েছে, সেও সীমান্ত পাড়ি দিচ্ছিল।

আমেনার দেয়া তথ্যে নাইমকে রাজধানীর আদাবর এলাকা থেকে এবং নাইমের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে ইয়াসিনকে পশ্চিম আগারগাঁও থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার তিনজনই হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে মিন্টুর কথা জানিয়েছে বলে র‌্যাব জানায়।

মুফতি মাহমুদ বলেন, মিন্টু তার বড় ভাইয়ের ছেলে জসীম ও হাজী বাবুকে এই হত্যাকাণ্ডের কাজে লাগায়। জসীমকে দেয়া হয় অস্ত্র সংগ্রহের দায়িত্ব। আর বন্ধু কবিরের স্ত্রী আমেনাকে ৩ লাখ টাকা দেয়া হয় ভাড়াটে খুনি সংগ্রহ করতে।

“তারা তাদের পরিচিত  শুটার নাইমকে এই কিলিং মিশন সফল করার জন্য নির্বাচন করে এবং মিন্টুর সাথে নাইমের মোবাইলে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। নাইমকে নগদ দুই লাখ টাকা দেয়া হয়।  পরে এক লাখ টাকা দেয়ার কথা ছিল।”

নিহত জাহাঙ্গীর আলম

শ্বশুরের অন্তর্ধাণের পর জাহাঙ্গীর ৪১ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে প্রার্থী ছিলেন। রাজনৈতিক ও ব্যবসা নিয়েও স্থানীয় পর্যায়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

গত ৯ অগাস্ট রাতে পশ্চিম আগারগাঁওয়ে নিজের বাসার সামনে গুলিতে নিহত হন জাহাঙ্গীর। ১৫ অগাস্ট থানা পর্যায়ের কর্মসূচি নিয়ে বৈঠক থেকে ফিরছিলেন তিনি।

২০১১ সালের জানুয়ারিতে ওই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক হত্যার পর যে মামলা হয়, তাতে জাহাঙ্গীরও আসামি ছিলেন।

ফজলুল হত্যাকাণ্ডের পর ২০১১ সালের অক্টোবর থেকে নিখোঁজ হাজী নুর। তার দুই মাস পর নিখোঁজ হন তার আরেক মেয়েজামাই মান্নান।

হাজী নুরের তিন ছেলের মধ্যে মিন্টু ছাড়া এক ছেলে মামুন খুন হন এবং অন্যজন বাঘার স্বাভাবিক মৃত্যু হয়।