বলী খেলাকে ঘিরে বৈশাখী লোকজ মেলা বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকতায় গড়ালেও বুধবার থেকেই জমে উঠেছে লালদীঘি এলাকা। শুক্রবার হবে বলীখেলা।
প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে মেলায় দোকান বরাদ্দের কোনো বালাই নেই। শত বছর আগে থেকেই বিক্রেতারা পণ্য নিয়ে যে যার পছন্দ মতো জায়গায় বসে পড়েন। ধারাটি রয়ে গেছে এখনো।
লালদীঘি মাঠ, কে সি দে সড়ক, সিনেমা প্যালেস, কোতোয়ালী মোড়, জেল রোড, হাজারী গলি হয়ে আন্দরকিল্লার মোড়ের কাছাকাছি পর্যন্ত ছড়িয়েছে মেলার পরিধি।
কাঠ-বাঁশ-পলিথিনে তৈরি হয়েছে অস্থায়ী দোকান। সড়কের ওপর চৌকি পেতে তাতে বাহারি সব পণ্য নিয়ে বসেছেন বিক্রেতারা।
মাটির খেলনা, তাল পাখা, পুতুল, ফুলদানি, মাটির হাড়ি-পাতিল, মাছ ধরার চাঁই, মাটি-কাঠ-লোহার তৈজসপত্র, কাঠ-বাঁশ-বেতের আসবাব, ঝাড়–, কুলা, শীতল পাটি, পলো, মুড়ি-মুড়কি, নাড়–, গাছের চারা, দা-বঁটি, দেশি ফল- কি নেই মেলায়।
কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার পেরিয়ে এগোলেই রাস্তার দুপাশে কাঠের আসবাবের পসরা। সিনেমা প্যালেস মোড়, কে সি দে সড়কে মাটির হাড়ি-পাতিল, লালদীঘি পেট্রোল পাম্প ঘিরে বড় মাটির ফুলদানি আর ঘর সাজানোর উপকরণের ছড়াছড়ি।
লালদীঘির সামনের সড়কে মুড়ি-মুড়কি, পোষা পাখি, তালপাখা আর বাঁশির বিকিকিনি।
মেলা শুরুর কয়েকদিন আগেই থেকে আসতে শুরু করেন বিক্রেতারা। এদের মধ্যে এমন বিক্রেতাও রয়েছেন, যারা বংশপরম্পরায় এই মেলায় আসছেন।
তেমনই একজন মৃৎশিল্পী টাঙ্গাইলের মীর্জাপুরের কৃষ্ণ পাল।
সিনেমা প্যালেসসংলগ্ন ফুটপাতে বসে মাটির ফুলদানি রং করতে করতে বললেন, “মাটির জিনিস বানানো বাপ-দাদার পেশা। এ নিয়ে নয় বছরের মতো মেলায় আসলাম। এবার টব, ফুলদানি, মাটির ব্যাংক, হাড়ি-পাতিল নিয়ে এসেছি।”
চট্টগ্রাম ছাড়াও দেশের নানা প্রান্ত থেকে উৎসবপ্রেমী মানুষ ছুটে আসেন বছরের এ সময়টিতে। অনেকে রীতিমত মেলার অপেক্ষাতেই থাকেন।
ছেলেকে নিয়ে মেলায় আসা সাফায়াত হোসেন জানান, শৈশবে বাবার হাত ধরে আসতেন আর এখন আসেন নিজের ছেলেকে নিয়ে।
ছেলের বায়নার কাছে হার মেনেছে তীব্র গরম।
“মেলা থেকেই পরিবারের প্রতি বছরের প্রয়োজনীয় তৈজস, ঝাড়ু, দা-বটি আর শখের নানা উপকরণ কিনে নেয়ার রেওয়াজ দীর্ঘদিনের।”
মল্লযুদ্ধে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই
১৯০৯ সালে লালদীঘি সংলগ্ন স্থানীয় বদরপাতি এলাকার বাসিন্দা আবদুল জব্বার সওদাগর ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামের যুবশক্তিকে উদ্বুদ্ধ করতে শুরু করেছিলেন “বলীখেলা”।
ওই বছরের ১২ বৈশাখ শুরু হওয়া দেশীয় কুস্তির এ লড়াই চলছে আজও। এবার বসছে ১০৫তম আসর।
শক্তিপরীক্ষার লড়াইয়ে অংশ নিতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকা ছাড়াও কুমিল্লা, ভোলা, ব্রাক্ষণবাড়িয়াসহ দেশের নানা অঞ্চল থেকে বলীরা জড়ো হন লালদীঘিতে।
শুক্রবার বিকাল তিনটার পর শুরু হবে মল্লযুদ্ধ। লালদীঘি মাঠের মাঝখানে বানানো হয়েছে মঞ্চ।
মেলা কমিটির সভাপতি আন্দরকিল্লা ওয়ার্ড কাউন্সিলর জহর লাল হাজারী বলেন, দেড় শতাধিক বলী এবার খেলায় অংশ নিতে পারেন।
“চ্যাম্পিয়নকে ২৫ হাজার টাকা ও রানার আপকে ১৫ হাজার টাকার পাশাপাশি ট্রফিও দেয়া হবে।”
বলী খেলায় প্রধান অতিথি থাকবেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ মন্জুর আলম, বলেন কাউন্সিলর জহর লাল।
আবদুল জব্বার স্মৃতি কুস্তি প্রতিযোগিতা ও বৈশাখী মেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এবং আবদুল জব্বারের নাতি শওকত আনোয়ার বাদল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এই বলী খেলা এখন চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
“আশা করি সবার সহযোগিতায় সফলভাবে আয়োজন শেষ করতে পারব।”