‘পোশাক খাতে উন্নয়ন উদ্যোগের ৯১ শতাংশে অগ্রগতি’

রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক খাতে উন্নয়নে গৃহীত উদ্যোগের প্রায় ৯১ শতাংশে অগ্রগতি হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে বলেছে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 April 2014, 02:14 PM
Updated : 21 April 2014, 02:47 PM

পোশাক খাতের দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নে তদারকি ও সমন্বয়ের জন্য ‘তৈরি পোশাক খাত সুশাসন কর্তৃপক্ষ’ গঠনেরও অনুরোধ জানিয়েছে সংস্থাটি।

সোমবার রাজধানীতে ‘তৈরি পোশাক খাতের সুশাসন: প্রতিশ্রুতি ও অগ্রগতি’গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশকালে এ তথ্য জানান সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।

সমীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছরের ৩১ অক্টোবর টিআইবির এক গবেষণায় চিহ্নিত ৬৩ ধরনের সুশাসনের সূচকের মধ্যে ৫৪টি সূচক সংশ্লিষ্ট ১০২টি উদ্যোগ গ্রহণ করে তৈরি পোশাক শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন অংশীদাররা।

এই ১০২টি উদ্যোগের মধ্যে ৩১ শতাংশ উদ্যোগ পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়েছে বলে টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

এছাড়া ৬০ শতাংশ উদ্যোগের ক্ষেত্রে বিভিন্ন পর্যায়ের অগ্রগতি হয়েছে। তবে নয় শতাংশ উদ্যোগ এখনো ফলপ্রসূ হয়নি বলে টিআইবি জানিয়েছে।

পোশাক খাতের উন্নয়নে সন্তোষ প্রকাশ করে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, “সম্পূর্ণ ও অগ্রগতি মিলিয়ে ৯১ শতাংশ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন খুবই ইতিবাচক বিষয়। সরকার বিষয়টিকে খুবই গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলবে।”

বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাক শিল্পের এ অগ্রগতি ধরে রাখার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন তিনি।

‘তৈরি পোশাক খাত: সুশাসনের সমস্যা ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক ২০১৩ সালে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ধারাবাহিকতায় এবার এ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে টিআইবি।

সংস্থাটির মতে, গার্মেন্টে কম্প্লায়েন্স ঘাটতি, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় যথাযথ শাস্তি না হওয়া, বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা, বিচার না হওয়া ইত্যাদি পোশাক খাতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বাধা হিসেবে রয়েছে।

টিআইবি বলেছে, রানা প্লাজা পরবর্তী বিভিন্ন পর্যায় থেকে সরকারের ওপর ‘চাপ’ সৃষ্টির কারণে এ খাতে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় বেশ কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ লক্ষ করা গেছে।

“তবে রানা প্লাজা সংক্রান্ত মামলাগুলোতে চার্জশিট না দেয়া, শ্রম আদালতে মামলা পরিচালনায় দীর্ঘসূত্রতা, মামলা পরিচালনায় মালিকপক্ষের সঙ্গে আইনজীবীদের যোগসাজস ও বিভিন্ন তদারকি প্রতিষ্ঠানের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে শিথিলতা-নেতিবাচক প্রভাবক হিসেবে এখনো রয়েছে।”

পোশাক খাতের লিড মিনিস্ট্রি স্থাপন, শ্রমিক কল্যাণ তহবিল গঠন, ট্রেড ইউনিয়ন ও ফেডারেশনের কার্যাবলী সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে এখনো কোনো অগ্রগতি হয়নি বলে জানান ইফতেখারুজ্জামান।

 

রানা প্লাজা ধসের পর সরকার, বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, বিজিএমইএ, কারখানার মালিক ও তাদের প্রতিনিধিত্বশীল ফোরামের গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগের সাধুবাদ জানান তিনি।

টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, “গার্মেন্ট খাতের সুশাসনের সমস্যা বহুমাত্রিক এবং যোগসাজসমূলক দুর্নীতির ঘটনার ব্যাপকতার কারণে উক্ত সমস্যাসমূহের সমাধানে অসাধারণ প্রচেষ্টার প্রয়োজন ছিল এবং সকল অংশীজন সেই সমস্যার মোকাবেলায় তাদের দৃঢ় প্রতিশ্রুতির স্বাক্ষর রেখেছেন।”

শ্রমিকদের স্বার্থের বিষয়ে যথাযথ সমন্বয় জরুরি বলে মনে করেন টিআইবির ট্রাস্টিবোর্ডের সভাপতি সুলতানা কামাল।

শ্রমিকদের দীর্ঘমেয়াদি ও মৌলিক স্বার্থের বিষয়ে সরকার ও মালিকপক্ষের আরো বেশি ভূমিকার প্রত্যাশার কথা জানান তিনি।

ইতিবাচক উদ্যোগগুলো সুশাসনের জন্য প্রয়োজনীয় ভিত্তি তৈরি করলেও টেকসই পরিবর্তনের জন্য তা পর্যাপ্ত নয় বলে প্রতিবেদনে অভিমত দেয়া হয়।

এতে বলা হয়, সরকারের প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও প্রস্তাবিত গার্মেন্টস পল্লীতে কল-কারখানাগুলো সরিয়ে নেয়ার ক্ষেত্রে দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়নি।

“দুর্ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার ক্ষেত্রে দীর্ঘসূত্রতা হতাশার জন্ম দিয়েছে। সরকার, ক্রেতাপক্ষ এবং তাদের ফোরাম কর্তৃক কারখানা পরিদর্শনে গতি খুবই শ্লথ এবং কিছু ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত মানের স্বচ্ছতা ছিল না। ক্রেতার প্রতিনিধিত্বকারী কিছু পরিদর্শকদের ক্ষেত্রে স্বার্থের দ্বন্দ্বের ঝুঁকি রয়ে গেছে।”

টিআইবির উপ-নির্বাহী পরিচালক সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। গবেষণা ও পলিসি বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার শরীফ আহমদ চৌধুরী ও সহকারী প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজমুল হুদা মিনা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন।

গত বছরের ২৪ এপ্রিল সাভারের রানা প্লাজা ধসে এক হাজার ১৩১ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই পোশাক শ্রমিক ছিলেন।