শাহবাগে সমাবেশে বাধা, আটক ৭

শাহবাগে প্রজন্ম চত্বরে পাল্টাপাল্টি সমাবেশের চেষ্টারত দুই পক্ষকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে পুলিশ। এ সময় গণজাগরণ মঞ্চের পাঁচ জনসহ সাত জনকে আটক করা হয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 April 2014, 11:53 AM
Updated : 4 April 2014, 08:37 PM

পুলিশের লাঠিপেটায় জাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ও বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক লাকি আক্তার, মাহমুদুল হক মুন্সী ওরফে বাঁধনসহ বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। তাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

পুলিশের রমনা জোনের সহকারী কমিশনার শিবলী নোমান বলেন, “শুক্রবার বিকালে এখানে দুই পক্ষ সমাবেশ ডেকেছিল। আমরা আগেই বলেছি কেউ সমাবেশ করতে পারবে না। সমাবেশের অনুমতি না থাকায় আমরা তাদের সরিয়ে দিই। এ সময় কয়েকজনকে আটক করা হয়।”

শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক কৃষ্ণ চন্দ্র দাস জানান, গণজাগরণ মঞ্চের কর্মী শামস রশীদ জয়, ধীমান আজিজ, ফরিদ আহমেদ, সোহাগ আজিজ ও টিটুকে আটক করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার রাতে শাহবাগে রাখা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের চেয়ারে বসা নিয়ে দুই পক্ষের মারামারিতে জাগরণ মঞ্চের দুই কর্মী আহত হন। এর প্রতিবাদে শুক্রবার বিকালে শাহবাগে সমাবেশের ডাক দেয় গণজাগরণ মঞ্চ।

এদিকে জাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ এনে তার প্রতিবাদে একই সময় শাহবাগে পাল্টা সমাবেশের ডাক দেয় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ও মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কেন্দ্রীয় সংসদ; যাদের ব্যানারে গণজাগরণ মঞ্চের নামও ছিল।

পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিকাল ৩টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ও মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কেন্দ্রীয় সংসদের নেতাকর্মীরা শাহবাগে জড়ো হওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশি বাধায় পিছু হটে তারা। পরে কয়েকদফা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন সংগঠন দুটির নেতারা। সে সময়ও পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

এরপর ৪টার দিকে শাহবাগে আসেন মাহমুদুল হক মুন্সীসহ গণজাগরণ মঞ্চের বেশ কিছু নেতাকর্মী। বিকাল সোয়া ৪টার দিকে ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে গণজাগরণ মঞ্চের আরো কয়েক নেতাকর্মীরা শাহবাগে আসেন।

এ সময় রায়ট কারের লাউড স্পিকারে পুলিশ তাদের সরে যেতে বলে। জাদুঘরের সামনে তাদের জটলা ধীরে ধীরে বড় হতে শুরু করে। এক পর্যায়ে পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়। পরে ইমরান সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলা শুরু করেন। সেখান থেকেও পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। পরে পুলিশ তাদের ধাক্কাতে ধাক্কাতে পিছু হটাতে থাক।

পুলিশি বাধায় পিছু হটে সাড়ে ৪টার দিকে জাদুঘরের পূর্ব-উত্তর কোণ থেকে মিছিল শুরু করে জাগরণ মঞ্চের কর্মীরা।

মিছিলটি আজিজ সুপার মার্কেট ঘুরে ফের শাহবাগের দিকে এগোতে থাকে। এ সময় কয়েক দফা পুলিশ বাধা দিলেও তারা বাধা উপেক্ষা করেই এগিয়ে আসে। পূবালী ব্যাংকের সামনে আসলে পুলিশ তাদের ওপর চড়াও হয়।

এ সময় পুলিশের লাঠিপেটায় লাকি আক্তার ও মাহমুদুল হক মুন্সী আহত হন। সেখান থেকে জাগরণ মঞ্চের পাঁচ কর্মীকে আটক করে পুলিশ।

এরপর বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ফের শাহবাগে সমাবেশ করতে চাইলে সংগঠনের সভাপতি মেহেদি হাসান এবং কর্মী পারভেজ আহমেদকে আটক করা হয়।

টিএসসি কেন্দ্রীক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সংগঠন ৫টার পর শাহবাগে যাওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তারাও পুলিশি বাধার মুখে পড়ে। পুলিশ কয়েকজনকে লাঠিপেটা করে।

সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন ইমরান এইচ সরকার।

তিনি বলেন, “কাল রাতে আমরা দুই দফা হামলার শিকার হয়েছি। প্রথম দফায় জাতীয় জাদুঘরের সামনে আমাদের উপর হামলা হয়। এরপর থানায় দ্বিতীয় দফায় আমরা হামলার শিকার হই।

“আজ আমরা ওই হামলার প্রতিবাদ জানাতে শাহবাগে আসি। পুলিশ আমাদের সমাবেশ করতে না দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেছে। পুলিশের সঙ্গে সরকার দলীয় লোকজন ছিল। তারা আমাদের লোকজনকে চিনিয়ে দিচ্ছিলো। তারাও হামলায় অংশ নিয়েছে। পুলিশ ও সরকার দলীয় লোকজনের হামলায় আমাদের ১০জনের মতো আহত হয়েছে। ১০ জনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেছে।”

শাহবাগে সমাবেশের অনুমতি ছিল কি না-এ প্রশ্নের জবাবে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র বলেন, “অতীতেও দিবস কেন্দ্রিক অনুষ্ঠানে আমরা অনুমতি নিতাম। নিয়মিত অন্য কর্মসূচিতে অনুমোদনের প্রয়োজন হতো না। সেজন্য আমরা অনুমোদন নেইনি। আর আমাদের উপর হামলা হয়েছে। হামলায় আক্রান্ত মানুষ তাদের জায়গায় প্রতিবাদ করতে চাইলে তার জন্য অনুমোদন নিতে হবে কেন?”

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড ও মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম কেন্দ্রীয় সংসদের নিজেদের গণজাগরণ মঞ্চ দাবি করার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইমরান বলেন, “প্রধানমন্ত্রীও আমাদের কর্মসূচির সঙ্গে একাত্ম হয়ে মোমবাতি জ্বালিয়েছিলেন। এখানে এক সময় সরকার দলের লোকজনও এসেছিল।

“তাই বলে এখানে যারা এসেছিলেন তাদের রাজনৈতিক পরিচয় চলে যায়নি। আমাদের ওপর হামলাকারীরা নিজেদের যে পরিচয়ই দিক না কেন তারা মূলত সরকার দলের কর্মী হিসাবেই কাজ করে।”