শাহবাগে মারামারি, গণজাগরণ মঞ্চের ২ কর্মী আহত

শাহবাগে প্রজন্ম চত্বরে বৃহস্পতিবার রাতে দুই পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়েছে, যাতে গণজাগরণ মঞ্চের  দুই কর্মী আহত হয়েছেন।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 April 2014, 03:38 PM
Updated : 3 April 2014, 09:04 PM

ছাত্রলীগ ও যুবলীগকর্মীরা জাগরণ মঞ্চের কর্মীদের ওপর হামলা করেছে বলে মঞ্চের মুখপাত্র  ইমরান এইচ সরকার দাবি করলেও তারা তা অস্বীকার করেছেন। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীরাও হামলায় ছাত্র ও যুবলীগ কর্মীদের জড়িত না থাকার কথা জানিয়েছেন।

ইমরান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রজন্ম চত্বরে আমাদের কর্মীদের ওপর হামলা চালায় ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতাকর্মীরা। তারা মঞ্চের কর্মী তানভিরের গায়ে কেতলি ভরা গরম পানি ছুড়ে মারে।

“এরপর মঞ্চের কর্মীরা শাহবাগ থানায় মামলা করতে গেলে সেখানে ওসির সামনেই তাদের ওপর হামলা চালানো হয়।”

হামলাকারীরা অরণ্য শাকিল নামে গণজাগরণ আন্দোলনের এক কর্মীর মাথা ফাটিয়ে দেয় এবং জয় নামে আরেকজনের হাত ভেঙে দেয় বলে জানান ইমরান।

তবে ঘটনার একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, গণজাগরণ মঞ্চের সঙ্গে আন্দোলন চালিয়ে আসা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের রাখা চেয়ারে বসা নিয়ে জাগরণ মঞ্চের কয়েক কর্মীর বাক-বিতণ্ডা ও মারামারির ঘটনা ঘটে।

গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক বাপ্পাদিত্য বসু বলেন, শাহবাগে প্রজন্ম চত্বরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের রাখা চেয়ারে বসা নিয়ে বিরোধের জের ধরে মঞ্চের কর্মী নবেন্দু সাহা জয় মঞ্চেরই  কর্মী আবির, শিশির ও বাবুলের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ান।

এরপর জাগরণ মঞ্চের কর্মীরা শাহবাগ থানায় গেলে সেখানে তাদের ওপর হামলা হয়, যাতে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের লোকজনও ছিলেন। হামলায় মঞ্চের কর্মী শাকিলের মাথা ফেটে যায়।

এদিকে গণজাগরণ কর্মীদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগ এনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সভাপতি মেহেদি হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা জাদুঘরের মূল ফটকের উত্তর পাশে সন্ধ্যা থেকেই বসে ছিলাম। পৌনে ৯টার দিকে ইমরান এইচ সরকারের নেতৃত্বে শতাধিক লোক আমাদের ওপর হামলা চালায়।

“হামলায় আবির, শিশির, বাবুল নামে তিন ব্যক্তি আহত হয়েছে। আবির হামলা থেকে বাঁচতে থানায় আশ্রয় নিলেও সেখানে তার পেছনে পেছনে ‘ধর ধর’ করে ইমরানের লোকরা আক্রমণ করে।”

মঞ্চের সঙ্গে কোনো বিরোধ রয়েছে কি না,- জানতে চাইলে মেহেদি বলেন, শাহবাগে বসার জন্য মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কিছু চেয়ার আছে।

“সেগুলোতে কয়েকদিন আগে ইমরানরা বসে ছিল। আমাদের লোকজন এসে তাদেরকে উঠে যেতে বলে। এটা নিয়ে তাদের সঙ্গে ওইদিন কথা কাটাকাটিও হয়। এরপর আজ পরিকল্পিতভাবে আমাদের ওপর হামলা হয়।”

ছাত্রলীগ কিংবা যুবলীগের কেউ এই ঘটনায় সম্পৃক্ত ছিলেন না দাবি করে তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক সময়ে সব কিছুতেই ছাত্রলীগের নাম জড়ানো ফ্যাশন হয়ে গেছে।”

তবে গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের ওপর হামলার সময় ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা শেখ আসমানকে দেখা গেছে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন।

ইমরান এইচ সরকারের অভিযোগ, ইসলামী ব্যাংকের টাকা নিয়ে জাতীয় সঙ্গীতের অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করার কারণে কয়েক সপ্তাহ ধরেই মঞ্চের কর্মীদের হুমকি দিয়ে আসছিল ছাত্রলীগের নেতারা। তারই জের ধরে এ হামলা হয়েছে।

তার অভিযোগ অস্বীকার করে এই মারামারির ঘটনাটি গণজাগরণ মঞ্চেরই দুই পক্ষের বিষয় বলে মন্তব্য করেন যুবলীগ নেতা নাসিম আল মামুন রূপক।

ছাত্রলীগের রংপুর মেডিকেল কলেজের এক সময়ের নেতা ইমরানের অভিযোগের সমালোচনাও করেছেন তিনি।

“ইমরান এইচ সরকার দীর্ঘদিন ধরে ফেইসবুকে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগ ও বর্তমান সরকারকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছিল। এ ঘটনায়ও ইচ্ছাকৃতভাবে আওয়ামী পরিবারকে জড়ানো হয়েছে। এটা তারই ধারাবাহিকতা মাত্র,” বলেন তিনি।

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা গণজাগরণ মঞ্চের ত্রি-সীমানায় যাই না। তবে গত তিন দিন ধরে মঞ্চের মধ্যে অভ্যন্তরীণ কোন্দল-মারামারির খবর পাচ্ছিলাম।”

ছাত্রলীগের কেউ বৃহস্পতিবারের এ হামলায় জড়িত নয় বলেও দাবি করেন তিনি।

ঘটনার বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হোসেন সরদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম বলেন, “দুপক্ষের সঙ্গে কথা না বলে আমি কিছু বলতে পারছি না।”

শাহবাগ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, “দুপক্ষই গণজাগরণ মঞ্চের। তারা বাইরে মারামারি করে থানায় আসে। ডিউটি অফিসারের সামনে খালি জায়গায় তারা দ্বিতীয় দফায় মারামারি করে।”

ইমরানের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি আমার কক্ষে ছিলাম। আমার সামনে কোনো মারামারির ঘটনা ঘটেনি।”

যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে আন্দোলনকারীরা নিয়মিত শাহবাগে প্রজন্ম চত্বরে বসেন।