সেনা থাকবে ১৫ দিন

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নির্বিঘ্ন করতে ভোটের আগে-পরে ১৫ দিন সশস্ত্রবাহিনী মাঠে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Dec 2013, 12:49 PM
Updated : 21 Dec 2013, 05:48 AM

নির্বাচন সামনে রেখে শুক্রবার আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক বৈঠক শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, “২৬ ডিসেম্বর থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত সেনা থাকবে। পরিস্থিতি ভালো থাকলে কোনো কোনো স্থানে কম থাকবে; কোথাও অসুবিধা হলে সেনা সদস্য বাড়ানো হবে।”

সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য ছাড়াও বিজিবি, পুলিশ, র্যাব, কোস্টগার্ড, ব্যাটালিয়ন আনসার, আনসার, ভিডিপি, কোস্টগার্ড সদস্যরা ভোটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়োজিত থাকবেন।

এনইসি মিলনায়তনে বিকেল ৩টায় শুরু হয়ে এ বৈঠকে চলে সন্ধ্যা পৌনে ৭টা পর্যন্ত।

চার নির্বাচন কমিশনার, ইসি সচিব, স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, অর্থ ও তথ্য সচিব, সশস্ত্রবাহিনী বিভাগ, পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব, কোস্টগার্ড, আনসার ও ভিডিপি, এনএসআই, ডিজিএফআই এর প্রতিনিধি, সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশ সুপার এবং জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা এ বৈঠকে অংশ নেন।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সিইসি জানান, ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা কমিশন এখনো চূড়ান্ত করেনি। এ জন্য আরো কয়েকদিন সময় লাগবে।

তফসিল অনুযায়ী ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা, যদিও প্রধান বিরোধী দল বিএনপির বর্জনের কারণে একক প্রার্থী থাকায় ১৫৪টি আসনের ফল আগেই নির্ধারিত হয়ে গেছে। সে অনুযায়ী নির্ধারিত তারিখে ভোট হবে ১৪৬টি আসনে। 

সিইসি জানান, ভোট কেন্দ্র ও নির্বাচনী এলাকায় আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্য মোতায়েনে কর্মকর্তাদের প্রাথমিক রূপরেখা বৈঠকে উপস্থাপন করা হয়েছে। কোন এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কতোজন সদস্য মোতায়েন করা হবে, পরিস্থিতি বিবেচনা করে রিটার্নিং কর্মকর্তারা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। ২০০৮ সালের চেয়ে এ সংখ্যা বেশিও হতে পারে।

 

এক প্রশ্নের জবাবে কাজী রকিব বলেন, “আপাতত ৯ জানুয়ারির পর সেনাবাহিনী মাঠে থাকার প্রয়োজন অনুভব করছি না। প্রয়োজন অনুসারে স্থানীয় পরিস্থিতি দেখে এ সময়সীমার তারতম্য করা হবে। ওই সময়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।”

নির্বাচন বর্জন করে আসা বিরোধী দল তফসিল ঘোষণার পর থেকেই কেবল ছুটির দিনগুলো ছাড়া প্রতিদিন সারা দেশে অবরোধ চালিয়ে এলেও সিইসি মনে করছেন, ভোটের আগে বর্তমান পরিস্থিতি ‘সন্তোষজনক’।

জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপাররা সারাদেশের পরিস্থিতি সম্পর্কে বৈঠকে অবহিত করেছেন বলে জানান তিনি।

“তারা বলেছেন- পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। তারা আশ্বস্ত করেছেন, আপনারাও দেখে থাকবেন- ঢাকাসহ পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নতি হচ্ছে।”

নির্বিঘ্নে ভোট অনুষ্ঠানের জন্য পরিস্থিতির আরো উন্নতি ঘটাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন সিইসি।

“সন্ত্রাসী কারো দলের নয়, টাকার বিনিময়ে কাজ করে। তাদের ধরতে হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করতে হবে। তারা আশ্বাস দিয়েছেন- এ পরিস্থিতির আরো উন্নতি হবে, যাতে ভোটাররা নির্বিঘ্নে ভোট দিতে পারেন।”

সারা দেশে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে কাজ শুরু হয়েছে জানিয়ে সিইসি বলেন, এই চেষ্টা আরো জোরদার করা হবে।

প্রার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে সিইসি বলেন, “প্রার্থীরা যারা প্রোটেকশন চেয়েছেন তাদের তা দেয়া হয়েছে, এখানে দরখাস্ত এসেছে, আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে তা দেয়া হয়েছে।”

রাস্তায় গাছ কেটে অবরোধ করা হলে সে খবর গণমাধ্যমে আসে। সেই গাছ সরিয়ে সড়ক চালুর বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতাও গণমাধ্যমে প্রচারের আহ্বান জানান সিইসি।

“ক্লিয়ারের চিত্রটা দেখালে দেশবাসী আশ্বস্ত হবে।”

এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণে ইইউর প্রতিনিধি দল না পাঠানোর সিদ্ধান্ত তারা জানেন না।

“পর্যবেক্ষণ করা যার যার ব্যবস্থা। আইন-শৃঙ্খলা ও ব্যবস্থার উন্নতি হলে অনেকে পর্যবেক্ষণে আসবেন। যারা আসবেন না, তাদের ওপর তো জোর নেই। আমরা এ রকম কোনো ইনফরমেশন পাইনি।”

দেশের অর্ধেক আসনে প্রার্থীরা আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়ে যাওয়ার পরও কেন সেনা মোতায়েন করতে হচ্ছে- এমন প্রশ্নে সিইসি বলেন, “সাধারণভাবে আমিও তাই মনে করেছিলাম। কিন্তু ভোটকেন্দ্রের জন্য যে ফোর্স লাগে তা অ্যাডিশনাল, পুলিশ তো উইথড্র করতে পারব না। নরমাল আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা সব জায়গায় করতে হবে। পুলিশ, র্যাবের সংখ্যা পর্যাপ্ত নয়। এখনো যে আর্মি নিয়ে আসছি তারও প্রয়োজন রয়েছে।”

নির্বাচনে সেনা সদস্যরা নির্বাহী হাকিমের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ থাকবেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা বা প্রিজাইডিং অফিসারের চাহিদা ছাড়া ভোটকেন্দ্রে ভেতরে বা ভোট গণনাকক্ষে তারা কোনো দায়িত্ব নেবেন না।

একই নির্দেশনা থাকবে বিজিবি, কোস্টগার্ড, আর্মড পুলিশ ও র‌্যাবের ক্ষেত্রেও। তবে পুলিশ, আনসার, ভিডিপি সদস্যদের ভোটকেন্দ্রে দায়িত্ব পালনে কোনো বাধা নেই।

৫ জানুয়ারির নির্বাচন কেমন হবে- এ প্রশ্নে সিইসি কাজী রকিব বলেন, “আগেই তো বলা যাচ্ছে না। দেখি কেমন হয়।”

সব দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে- এমন প্রত্যাশাই ইসি সব সময় করে এসেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এটা একটা আইনি প্রক্রিয়া। আমরা যে আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি- এটা থেকে আমরা ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের জন্যে যাচ্ছি। এর জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে।”

আইন শৃঙ্খলা সভার জন্যে তৈরি করা ইসির কার্য্যপত্রে বলা হয় ভোটকেন্দ্রে মেট্রোপলিটন এলাকার সাধারণ ভোটকেন্দ্রে অস্ত্রসহ ২ পুলিশ নিয়ে ১৫ জন [অঙ্গীভূত আনসার পিসি-এপিসি, গ্রাম পুলিশ], ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৬ জন; মেট্রোপলিটনের বাইরে সাধারণ কেন্দ্রে ১৭ জন ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে ১৮ জন নিয়োগ করা হবে।

পার্বত্য ও দ্বীপাঞ্চলে এ সংখ্যা ১৭ জন সাধারণ ও ১৯ জন গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রে থাকবে।

ইসির নির্বাচন ব্যবস্থানা ও সমন্বয় শাখার এক জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব জানান, এখন মাত্র ১৮ হাজার ভোটকেন্দ্রে ভোট হবে।  পরিস্থিতি বিবেচনায় শেষমুহূর্তে কেন্দ্রপ্রতি আইনশঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য সংখ্যা বাড়ানোও হতে পারে।

আগামী ৫ জানুয়ারি ১৪৬টি আসনে ৩৮৬ জন প্রার্থীর মধ্য থেকে সংসদে নিজেদের প্রতিনিধি বেছে নেবেন ৪ কোটি ৩৬ লাখ ৮৫ হাজার ৬৭০ জন ভোটার।

ওইদিন ১৮ হাজার ১২৩টি ভোটকেন্দ্রের ৯০ হাজার ৭২৪টি ভোটকক্ষে ভোটগ্রহণ হবে।