র্যাব পাহারায় জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে ‘গরমিল’ পাওয়া গেছে দলটির বিভিন্ন নেতাদের ভাষ্যে।
Published : 13 Dec 2013, 10:05 PM
ঘটনার ২০ ঘণ্টায় এরশাদ নিজে কোনো কথা না বললেও নানামত এসেছে তার সঙ্গে দেখা করে আসা নেতাকর্মীদের কাছ থেকে।
কেউ বলছেন এরশাদ চিকিৎসার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, কেউ আবার বলেছেন আটক হওয়ার কথা।
বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত দলের একজন শীর্ষ নেতা এরশাদকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কথা বললেও বিকেলেই সুর পাল্টে বলেছেন, এরশাদকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে নেয়ায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এরশাদ বিষয়ে নিজ দলের নানা ভাষ্যের মধ্যে প্রধান বিরোধীদল বিএনপি এরশাদকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, নির্বাচনে না যাওয়ার কারণেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আর ‘আটক’ এরশাদের মুক্তি চেয়েছেন দল থেকে সদ্য বহিষ্কৃত কাজী জাফর।
অবশ্য এরশাদের স্ত্রী রওশন এরশাদ স্বামীকে হাসাতালে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কোনো বক্তব্য দেননি, যদিও সারাদিনে তিনি দলের কয়েকজন নেতা ও আওয়ামী লীগের একাধিক প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেছেন।
নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণার পর আওয়ামী লীগের সঙ্গে টানাপড়েনের মধ্যে এরশাদ যখন রাজনীতির কেন্দ্রে সেই সময়েই তার ‘আটক’ বা ‘চিকিৎসাধীন’ হওয়ার বিষয়ের পাশাপাশি গুজব ছড়ায় রওশন এরশাদের চেয়ারম্যান হওয়া নিয়েও।
সকাল থেকেই শোনা যাচ্ছিল এরশাদের অনুপস্থিতিতে রওশন এরশাদ দলের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করবেন।
তাই সারাদিনই সংবাদ কর্মীদের ছুটতে হয়েছে জাতীয় পার্টির বিভিন্ন নেতার বাসা ও কার্যালয়ে।
অবশ্য শুক্রবার দুটি পৃথক সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় পার্টির দুজন নেতা রওশন এরশাদকে দলের প্রধান করার গুজব উড়িয়ে দেন।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১ মিনিটে যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার লাশ নিয়ে নিরাপত্তাবাহিনী ফরিদপুরে উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই এরশাদের ‘আটকের’ খবর ছড়িয়ে পড়ে।
ওই সময় জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, তার দলের চেয়ারম্যানকে আটক করা হয়েছে।
এরপর রাত সোয়া ২টায় গুলশানে নিজের বাড়িতে সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, এরশাদ সিএমএইচে চিকিৎসা নিচ্ছেন। সুস্থ হলেই বাসায় ফিরবেন।
সে সময় এরশাদকে আটক করার কথাও অস্বীকার করেন তিনি।
শুক্রবার সকালে এরশাদ বিষয়ে প্রথম কথা বলেন তার ছোট ভাই ও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য জিএম কাদের।
রুহুল আমিন হাওলাদেরর বাড়িতে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, এইচ এম এরশাদ সুস্থ আছেন এবং তিনি নির্বাচনে না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় আছেন।
এ সময় তিনি রওশন এরশাদকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হওয়ার সম্ভাবনাও নাকচ করে দেন।
এরপর বিএনপি ও কাজী জাফরের বিবৃতি আসে।
বিকেলে বনানীতে এরশাদের কার্যালয়ে গিয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করে সংবাদ সম্মেলন করেন মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার।
এ সময় নিজের দেয়া আগের দিনের বক্তব্য থেকে সরে গিয়ে তিনি বলেন, “সব দলের অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের কথা বলায় তাকে (এরশাদ) সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে যেতে হয়েছে। এই ঘটনায় ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।”
রুহুল আমিন হাওলাদারের সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই রওশন এরশাদের বাসায় জাতীয় পার্টির কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতার সঙ্গে বৈঠকে বসেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা তোফায়েল আহমদ ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী।
ওই বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই এরশাদের উপদেষ্টা ববি হাজ্জাজের বরাত দিয়ে একটি বিবৃতি পাঠানো হয়।
বিবৃতিতে এরশাদকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, অসুস্থ না হলেও চিকিৎসার নামে সিএমএইচে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানকে আটকে রাখা হয়েছে।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজের মাধ্যমে গণমাধ্যমে নিজের বক্তব্য তুলে ধরতে চেয়েছেন বলেও বিবৃতিতে দাবি করা হয়।