কাদের মোল্লাকে এখনি না ঝোলানোর আহ্বান

যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের রায় এখনি কার্যকর না করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলের স্বাধীন দুই বিশেষজ্ঞ।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Dec 2013, 07:13 PM
Updated : 9 Dec 2013, 07:14 PM

আইন প্রক্রিয়া শেষে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা-ধর্ষণের দায়ে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত জামায়াত নেতার মৃত্যু পরোয়ানা রোববার জারির পর তা মঙ্গলবারের মধ্যে কার্যকর হচ্ছে বলে জানতে পেরে এক বিবৃতিতে এই আহ্বান জানিয়েছেন গাব্রিয়েলা নাউল ও ক্রিস্তফ হেইন্স।

কাদের মোল্লার দণ্ড কার্যকরের ক্ষেত্রে এখন সরকারের নির্দেশ হলেই চলবে বলে সোমবার বলেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তবে কাদের মোল্লার দল জামায়াতে ইসলামী বলছে, ‘তড়িঘড়ি’ করে মঙ্গলবারই এই দণ্ড কার্যকরের আলোচনার খবর পেয়েছে তারা।

এরপরই জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের স্বাধীন বিশেষজ্ঞদের এই বিবৃতি আসে।  আবেদনকারীরা জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলের কর্মকর্তা নন। তারা দুইজনই মানবাধিকার কাউন্সিলে স্বাধীন বিশেষজ্ঞ ও বিশেষ র‌্যাপোটিয়ার হিসাবে কাজ করেন।

মানবাধিকার কাউন্সিলে এসব বিশেষজ্ঞদের নিয়োগ দেয়া হয় নির্দিষ্ট কোনো দেশ বা ইস্যুতে মানবাধিকার বিষয়ে পর্যবেক্ষণ করে তা কাউন্সিলে তুলে ধরার জন্য।

কাদের মোল্লার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ না থাকার বিষয়টি মানবাধিকার কাউন্সিলের নজরে আনার চেষ্টা করেছে গাব্রিয়েলা নাউল ও ক্রিস্টফ হেইনস।

কাদের মোল্লার বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ আখ্যায়িত করে বিবৃতিতে গাব্রিয়েলা নাউল বলেন, “মৃত্যুদণ্ডের মতো সাজায় আপিলের অধিকার থাকা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।”

গত ৫ ফেব্রুয়ারি যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে রায়ের পর আব্দুল কাদের মোল্লা (ফাইল ছবি)

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিল। ওই রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াত নেতা ও প্রসিকিউশন দুই পক্ষই আপিল করে।

আপিলের রায়ে আপিল বিভাগ কাদের মোল্লার অপরাধের জন্য তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়। গত বৃহস্পতিবার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের পর রোববার মৃত্যু পরোয়ানা জারি হয়।

বাংলাদেশের সংবিধানে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত ব্যক্তিদের চূড়ান্ত রায় পর্যালোচনার সুযোগ থাকলেও গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধের মতো অপরাধে অভিযুক্তদের জন্য তা প্রযোজ্য নয়। ফলে কাদের মোল্লা এই রায় পর্যালোচনার সুযোগ পাচ্ছেন না বলে প্রসিকিউটররার বলছেন।

নাউল বলেন, “মানবাধিকার রক্ষায় আন্তর্জাতিক নাগরিক ও রাজনৈতিক নীতিমালা অনুযায়ী কোনো অপরাধে সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি অবশ্যই শাস্তির বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য আপিল করতে পারবে। আর বাংলাদেশও এর আওতার বাইরে নয়।

“কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ডের মতো চূড়ান্ত শাস্তি রিভিউ করার সুযোগ না দিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের ওই নীতিমালা মারাত্নকভাবে লঙ্ঘন হচ্ছে।”

অন্য অনেক দেশে না থাকলেও বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে আসামির জন্য আপিলের সুযোগ রাখার মধ্য দিয়ে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ সুযোগ দেয়ার কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে।   

ক্রিস্তফ হেইন্স বলেন, “ যেসব দেশে এখনো অপরাধের সাজা হিসাবে মৃত্যুদণ্ড রয়েছে, সেসব দেশে অভিযুক্তরা এই দণ্ডে দণ্ডিত হওয়ার আগে ও পরে নিরপেক্ষ বিচার এবং আইনি সব সুবিধা পাওয়ার সুযোগ পায়।”

মৃত্যুদণ্ডের বিরোধী বিভিন্ন সংগঠন  বাংলাদেশের ট্রাইব্যুনালের সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া নিয়ে আপত্তি জানালেও যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটররা তাদের দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার যুদ্ধাপরাধীদের কথা মনে করিয়ে আসছেন।  ন্যুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালে ১২জন নাৎসির মৃত্যুদণ্ডের রায়ের কথাও বলছেন তারা।  

কাদের মোল্লাকে ‘পূর্ণাঙ্গ সুযোগ’ না দিয়ে রায় বাস্তবায়ন করলে বাংলাদেশে চলমান সহিংসতা ও অস্থিতিশীলতা আরো বাড়বে বলে তিনি সতর্ক ক্রিস্তফ হেইন্স।