'আইজ শুধু আনন্দ'

রাস্তায় ঘুরে কাগজ কুড়ানো, বাজারে ব্যাগ টানায় অভ্যস্ত জীবনে ‘ক্ষণিকের’ আনন্দের ছোঁয়া যেন উৎসব আর উচ্ছ্বলতায় ভরিয়ে দিয়েছে পথশিশুদের মন।

সালাহউদ্দীন ওয়াহিদ প্রীতমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Nov 2013, 04:02 PM
Updated : 23 Nov 2013, 04:20 AM

‘সার্বজনীন’ শিশু দিবস উপলক্ষে শুক্রবার রাজধানীর বনানী সোসাইটি মাঠে আয়োজন করা হয় পথশিশু মেলার, যেখানে সমবেত হয়ে আনন্দে মেতে ওঠে ছিন্নমূল শিশুরা।

মনিকা, সাব্বির, সাকিব, বাবু, সাবিনা, কল্পনা- এদের কেউ কাগজ কুড়ায়, কেউ করে কাঁচাবাজারে মিন্তির কাজ, কেউ গ্যারেজ মিস্ত্রির সহকারী, কেউ টেম্পোচালকের সহকারী। এসব করেও স্কুলে যায় অনেকে।

কেউ থাকে কড়াইল বস্তিতে, কেউ বনানী ২৮ নম্বর রোডে, কেউ থাকে ডালিবাড়ি বস্তিতে। তবে সবারই একটি সাধারণ পরিচয়- তারা পথশিশু।

জাগো ফাউন্ডেশন আয়োজিত পথশিশু মেলায় এদিন নাগরদোলা, বায়োস্কোপ আর পুতুল নাচ দেখে আনন্দে কাটে তাদের দিন।   

নতুনবাজার কাঁচাবাজারে মিন্তির কাজ করে কাটে সাকিবের দিন।

“সকাল থাইক্যা আছি। খেললাম, নাগরদোলায় উঠলাম, পুতুল নাচ দেখলাম। সারা দিন মজা করসি,” উচ্ছ্বলতায় ভরা কণ্ঠে বলে এই শিশু।

কড়াইল বস্তির কল্পনা পড়ে গুলশান প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে।

মেলার জন্য এদিন স্কুলে যেতে হয় নাই। তার ওপর বিভিন্ন খেলার সুযোগ।

কল্পনা বলে, “তাই মনটা খুব ভালো। আইজ আমাগো আনন্দের দিন।”

মেলায় উপস্থিত পথশিশুদের প্রায় সবাই জানায়, সকাল থেকেই তারা মেলায় আছে। সারা দিন খেলাধুলা শেষে সন্ধ্যায় ফিরে যাবে নিজ নিজ ঠিকানায়।

জাগো ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা করভী রাকশান্দ জানান, সার্বজনীন শিশু দিবস উপলক্ষে গত পাঁচ বছর ধরেই ২২ নভেম্বর তারা এই মেলার আযোজন করছেন।

তিনি জানান, প্রথম তিন বছর ওয়ান্ডার ল্যান্ডে এই মেলা হয়। গতবছর থেকে বনানী সোসাইটি মাঠেই হচ্ছে এ মেলা।

করভী বলেন,“ জাগো ফাউন্ডেশন মূলত সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের শিক্ষা বিস্তারে কাজ করার পাশাপাশি তাদের নানা ধরনের সহযোগিতা দেয়।

“আমরা মনে করি জাতি, ধর্ম,বর্ণ ও অর্থনৈতিক অবস্থা নির্বিশেষে প্রতিটি শিশুর শিক্ষার সমান অধিকার রয়েছে।”

তিনি বলেন,এই মেলা আয়োজনের আরো একটি উদ্দেশ্য রয়েছে। তা হল- সুবিধাবঞ্চিত  এই শিশুদের শিক্ষা কার্যক্রমে তরুণদের যুক্ত করা।

প্রতিষ্ঠানটির অধিকাংশ স্বেচ্ছাসেবক ঢাকার বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বলেও জানান তিনি।

মেলায় স্বেচ্ছাসেবকের দায়িত্ব পালন করেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ছাত্র ইফতেসান রহমান।

মেলা সম্পর্কে তিনি বলেন, “এটা আসলে পথশিশুদের জন্য জাস্ট একটা সেলিব্রেশন। ওরা যেন সোসাইটিতে ওদের রাইট অ্যান্ড পজিশন সম্পর্কে কনসার্ন হয় আমরা সেই চেষ্টা করে যাচ্ছি।”

একই কথা বলেন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আফসান, সিলভানা, ফাইয়াজও।