মঙ্গলবার সকালে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে সর্বশেষ নিয়োগ পাওয়া বিচারকদের একটি প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্বোধনের পর আইনমন্ত্রী এ কথা বলেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, “আইনের শাসনের ওপর গণতন্ত্র নির্ভর করে। আইনের শাসনের ভিত হচ্ছে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা। এর ওপর সবার আস্থা থাকতে হবে। নয়তো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা ও গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ এগিয়ে যেতে পারে না।”
গত ১ অগাস্ট এক রিট আবেদনের রায়ে হাই কোর্ট রাজনৈতিক দল হিসাবে নির্বাচন কমিশনে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করার পর মঙ্গল ও বুধবার টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডাকে জামায়াত।
দলের প্রচার বিভাগের নেতা মো. ইব্রাহিমের পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে হরতালের পাশাপাশি রায়ের বিরুদ্ধে কর্মসূচি অব্যাহত রাখারও ঘোষণা দেন জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল রফিকুল ইসলাম খান।
রায়ের বিরুদ্ধে হরতাল ডাকায় ইতোমধ্যে রফিকুল ও ইব্রাহিমকে তলব করেছে হাই কোর্টের একটি বেঞ্চ। তাদের বিরুদ্ধে কেন আদালত অবমাননার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হবে না, তার কারণ জানাতে ১৬ সেপ্টেম্বর হাজির হতে বলা হয়েছে।
আইনমন্ত্রী বলেন, হাই কোর্ট বা কোনো আদালত কোনো রায় দিলে তা সবারই মেনে নেয়া উচিত। রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের ব্যবস্থা আছে। আপিল বিদ্যমান থাকা অবস্থায় বা আপিলের রায় আসার পর বা কোনো রায়ের পর এর বিরুদ্ধে হরতাল ও রাস্তায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি আইনের শাসনের পরিপন্থী।
“এক কথায় বলা যায়, আইনের শাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতা রক্ষা করতে বিচারকদেরকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। হরতাল বা সভা সমিতি করে রায় বদলানো যায় না।”
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের মামলার সবগুলো রায় ঘিরেই হরতাল করেছে একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী দলটি।
সর্বশেষ ১৭ জুলাই জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের রায়ের সূচনা বক্তব্যে এ বিষয়ে এক পর্যবেক্ষণে ট্রাইব্যুনাল-২ এর প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, “রায়ে কেউ খুশি না হলে তারা এটাকে প্রত্যাখ্যান করেন। রায়ে কেউ সংক্ষুব্ধ হতে পারেন। কিন্তু রায় প্রত্যাখ্যান করা যায় না। এটা আদালত অবমাননার শামিল।
হরতাল, ভাংচুর বা প্রত্যাখ্যান করে রায় বদলানো যায় না উল্লেখ করে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটাতে বলেন এই বিচারক।
জুডিশিয়াল সার্ভিসে নিয়োগ পাওয়া ৩৫ জন বিচারক বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের এই প্রশিক্ষণে অংশ নিচ্ছেন। আগামী ১২ অক্টোবর পর্যন্ত এই প্রশিক্ষণ চলবে।
উদ্বোধনী বক্তব্যে আইনমন্ত্রী বলেন, “২০০৭ সালের ১ নভেম্বর বিচার বিভাগ পৃথক হওয়ার পর আমরা নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের বিচারিক ক্ষমতা নিয়ে নেয়া হয়েছে। কারণ আমরা জানি, বিচার বিভাগে নিয়োজিতদের কাজ আলাদা। এ বিভাগের কর্মকর্তাদের প্রতি নাগরিকের শ্রদ্ধার কারণ আপনারা জানেন।”
বিচারপ্রার্থীরা অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তির আশা করেন- এ কথা মনে করিয়ে দিয়ে বিচারকদের উদ্দেশে মন্ত্রী বলেন, “বাস্তব চিত্রটি ভিন্ন। মামলাজট দিনদিন বাড়ছে। শুনানি করতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সাক্ষী-সাবুদ এনে কাজ এগোচ্ছে না। এর মাধ্যমে বিচারপ্রার্থী মানুষ কেবল আর্থিকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হয় না, মানসিকভাবেও সমস্যায় পড়েন। বিচারকদের দরদী মন থাকতে হবে, যাতে বিচারপ্রার্থী অল্প সময়েই সুবিচার পায়।”
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক খোন্দকার মুসা খালেদ।