রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলা সদরে পুলিশের উপস্থিতিতেই শহীদ মিনার ভেঙে দিয়েছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা।
Published : 04 Mar 2013, 06:55 AM
শাহবাগ গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে এ শহীদ মিনারেই গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চ তৈরি করে আন্দোলন করে আসছিল উপজেলার মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের তরুণ প্রজন্ম।
সোমবার সকাল ১০টায় জামায়াত-শিবিরকর্মীরা হরতালের সমর্থনে মিছিল নিয়ে এসে মঞ্চসহ শহীদ মিনার ভেঙ্গে দেয় বলে জানান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চের সংগঠকরা।
তারা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বদরগঞ্জ থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশ মিছিলের সঙ্গে থাকলেও শহীদ মিনার ও মঞ্চ ভাঙচুরের সময় পুলিশ নিরব ভূমিকা পালন করে।
ওসি নুরুজ্জামান চৌধুরী ছাত্রাবস্থায় রংপুরের কারমাইকেল বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ শাখা ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন বলেও অভিযোগ করেন তারা।
এ ঘটনার প্রতিবাদে এবং হামলাকারীদের গ্রেপ্তার ও ওসির অপসারণের দাবিতে তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল বের করে উপজেলা আওয়ামী লীগ ও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল রাজনৈতিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন।
ওসি নুরুজ্জামান চৌধুরী শহীদ মিনার ভাঙচুরের বিষয়টি স্বীকার করলেও নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ অস্বীকার করেন। তার দাবি, পুলিশ ছিল বলেই জামায়াত-শিবিরকর্মীরা শহীদ মিনারে আগুন দিতে পারেনি।
শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন কি না- এমন প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গিয়ে তিনি বলেন, “ছাত্রাবস্থায় অনেকেই রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে।”
এদিকে জামায়াতে ডাকা টানা ৪৮ ঘন্টার হরতালের শেষ দিন রংপুরে ঢিলেঢালাভাবে পালিত হচ্ছে।
দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকলেও অভ্যন্তরীণ রুটে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বেশিরভাগ দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা রয়েছে।
রংপুর রেল স্টেশনের তত্ত্বাবধায়ক মোজাম্মেল হক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সকাল থেকে ১১টা পর্যন্ত ৩টি ট্রেন স্বাভাবিক নিয়মেই চলাচল করেছে।
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত জামায়াত নেতাদের মুক্তি ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল বাতিলের দাবিতে গত কিছুদিন ধরেই দেশজুড়ে তাণ্ডব চালিয়ে আসছে জামায়াত-শিবির। এরইমধ্যে সিলেট, চাঁদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে শহীদ মিনারে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে, যার জন্য জামায়াতকে দায়ী করেছে পুলিশ।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসি দেয়। এর পরই জামায়াত ও তাদের সহযোগী সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির সারাদেশে রবি ও সোমবার ৪৮ ঘণ্টার টানা হরেতালের ডাক দেয়।
রায়ের দিন থেকে সোমাবার পর্যন্ত জামায়াত-শিবিরের তাণ্ডবে কয়েকজন পুলিশসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তির প্রাণহানী ঘটে। হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয় থানা, মন্দির, সরকারি অফিসসহ হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘরে।
৪৮ ঘণ্টার টানা হরতালের সময়ও শত শত গাড়ি ও যানবাহনে ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে হরতাল সমর্থকরা।