রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় বোমা ফাটিয়ে গুলি করে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্র শিবিরের কর্মীরা।
Published : 12 Feb 2013, 06:58 AM
এ ঘটনায় আহত হয়েছেন তিন পুলিশ সদস্যসহ অন্তত ২৫ জন। ভাংচুর হয়েছে অর্ধশতাধিক গাড়ি। স্থানীয় জনতা দুই শিবির কর্মীকে পিটিয়ে পুলিশে দিয়েছে।
একই সময়ে বোমাবাজি হয়েছে মতিঝিল এলাকাতেও। সেখানে একটি মাইক্রোবাস পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে।
সব মিলিয়ে জামায়াত-শিবিরের ৭২ কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
যুদ্ধাপরাধের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ভেঙে দেয়া এবং আটক শীর্ষনেতাদের মুক্তির দাবিতে মঙ্গলবার জামায়াতের পক্ষ থেকে দেশব্যাপী বিক্ষোভ কর্মসূচির ঘোষণার মধ্যেই এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, দুপুর দেড়টার দিকে কারওয়ান বাজার এলাকা থেকে ৫০ থেকে ৬০ জন জামায়াত কর্মীর একটি দল সিএ ভবনের পাশ দিয়ে বেরিয়ে গাড়ি ভাংচুর করতে করতে সোনারগাঁ মোড় হয়ে পান্থপথের দিকে যায়।
এর পরপরই সেখানে গাড়ি ভাংচুর শুরু করে জামায়াত-শিবিরের আরেকটি দল।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের উপ কমিশনার মঞ্জুরুল কবির জানান, জামায়াত-শিবির কর্মীরা হঠাৎ ভিড়ের মধ্যে থেকে বেরিয়ে ভাংচুর-বোমাবাজি শুরু করে। এর সময় তার পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলিও চালায়।
এতে পুলিশের তেজগাঁও জোনের সহকারী কমিশনার আফরোজ হক টুটুল এবং সহকারী উপ পরিদর্শক জাহান আলম আহত হন বলে উপ কমিশনার জানান। আত্মরক্ষার জন্য পুলিশও এ সময় গুলি চালায় বলে জানান তিনি।
ঘটনাস্থলে দায়িত্বরত পুলিশ কনস্টেবল মো. রাসেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ভাংচুর শুরুর পর পুলিশ বাধা দেয়ার চেষ্টা করলে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। পরে পুলিশ গুলি ছুড়ে জামায়াত কর্মীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
ভাংচুরের সময় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও প্রথম আলো সম্পাদক মতিউর রহমানকে বহনকারী গাড়িও জামায়াত কর্মীদের হামলার শিকার হয়। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে বলা হয়, গাড়ির কাচ ভেঙে গেলে মতিউর রহমান হাতে সামান্য আঘাত পান।
পান্থপথ এলাকা দিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সময় জামায়াত কর্মীরা কয়েকটি হাতবোমাও ফাটায়। এ সময় পুরো এলাকায় সৃষ্টি হয় আতঙ্ক। পান্থপথ গ্রিন রোড মোড়ে একটি পুলিশ বক্সেও ভাংচুর চালায় জামায়াত কর্মীরা।
কলাবাগান থানা পুলিশ জানায়, পান্থপথ এলাকায় জনতা দুই শিবির কর্মীকে পিটুনি দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করে।
এছাড়া পুলিশ কারওয়ানবাজার ও পান্থপথ এলাকা থেকে জামায়াত-শিবিরের ২৮ নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে বলে মহানগর পুলিশের উপ কমিশনার (মিডিয়া) মাসুদুর রহমান জানান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, কারওয়ানবাজার থেকে রাসেল স্কয়ার পর্যন্ত এলাকায় পুলিশের সঙ্গে জামায়াত কর্মীদের সংঘর্ষের সময়ে অন্তত ২৫ জন আহত হন। এদের মধ্যে হাফিজা বেগম ও কবির নামে দুজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। আর পান্থপথের একটি আসবাবের দোকানের মালিক আব্দুর রহিম, ওই দোকানের কর্মচারী মজনু ও ফটপাতের চা বিক্রেতা খলিলকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।
এদিকে দুপুরে প্রায় একই সময়ে মতিঝিলের শাপলা চত্বর এলাকায় হঠাৎ ১৫ থেকে ২০টি হাতবোমা বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায়। এ সময় পল্টনে শিবিরের একটি ঝটিকা মিছিল থেকে ছোড়া ঢিলে আঘাত পান পুলিশ কনস্টেবল খোকন।
এদিকে বোমাবাজির পরপরই জামায়াতে ইসলামীর নেতা মীর কাশেম আলীর মালিকানাধীন পত্রিকা নয়া দিগন্তের কার্যালয়ের সামনে একটি মাইক্রোবাসে আগুন দেয়া হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মতিঝিলের ইনার সার্কুলার রোডে নয়া দিগন্তের কার্যালয় ও প্রেসের সামনে ওই গাড়িতে অগ্নিসংযোগের পর প্রেসের কিছু কাগজেও আগুন ধরে যায়। পরে কর্মীরা পানি দিয়ে আগুন নেভান।
ওই কার্যালয়ের পাশের একটি দোকানের মালিক মানিক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ঘটনার সময় তিনি কাউকে সেখানে দেখেননি। হঠাৎ মাইক্রোবাসটি জ্বলতে দেখেন।
তবে এ ঘটনার জন্য ক্ষমতাসীন দলের সহযোগী সংগঠনকে দায়ী করে নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাংবাদিকদের বলেন, ছাত্রলীগ কর্মীরা ওই মাইক্রোবাসে ভাংচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।
মতিঝিল বিভাগের অতিরিক্ত পুলিশ উপ-কমিশনার মেহেদী হাসান বলেন, “কারা আগুন দিয়েছে এটা সুনির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না।”
তবে বোমাবাজি ও নাশকতায় জড়িত সন্দেহে ওই এলাকা থেকে জামায়াত-শিবিরের ৪৩ কর্মীকে আটক করা হয় বলে উপ কমিশনার মাসুদুর রহমান জানান।
নয়া দিগন্ত কার্যালয়ে তল্লাশি
হাতবোমা বিস্ফোরণ এবং মাইক্রোবাসে আগুনের ঘটনার পর বিকালে প্রায় আধা ঘণ্টা নয়া দিগন্ত কার্যালয়ে তল্লাশি চালায় পুলিশ।
পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মেহেদী হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত কিছুদিনে বিভিন্ন হামলা-ভাংচুরের মামলার বেশ কিছু আসামি এই কার্যালয়ে জড়ো হয়ে নাশকতা সৃষ্টির পরিকল্পনা করছে খবর পেয়ে আমরা এই তল্লাশি চালিয়েছি। তবে কাউকে পাওয়া যায়নি।”
তিনি বলেন, নয়া দিগন্ত কর্মীদের সহায়তা নিয়েই এ তল্লাশি চালানো হয়েছে। কার্যালয়ের সবাই এতে সহযোগিতা দিয়েছেন।