ট্রাইব্যুনালের আপিল আইন সংশোধন হচ্ছে

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে আপিলের বিষয়ে আইন সংশোধনের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার।

সুমন মাহবুববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Feb 2013, 00:27 AM
Updated : 9 Feb 2013, 03:07 AM

আব্দুল কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার রায়ের পর দণ্ডের মাত্রা বাড়াতে আপিলের সুযোগ না থাকার বিষয়টি উঠে আসার প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হচ্ছে।

ট্রাইব্যুনালের বর্তমান আইনে যে কোনো সাজার বিরুদ্ধে আসামির আপিলের সুযোগ থাকলেও সরকার শুধু খালাসের রায়ের বিরুদ্ধেই আপিল করতে পারছে।

একাত্তরে ‘মিরপুরের কসাই’ হিসেবে পরিচিত কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন সাজার রায়ের পর তার প্রতিবাদ চলছে দেশজুড়ে।

এর মধ্যে শনিবার আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম তার বাড়িতে সাংবাদিকদের বলেন, প্রসিকিউশনের আপিলের আওতা বাড়াতে আইন সংশোধনের চিন্তা করা হচ্ছে। আইনমন্ত্রী দেশে ফিরলে এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এই বিষয়ে সরকারের একাধিক নীতি-নির্ধারকের সঙ্গে আলোচনা করে জানা যায়, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনের সেকশন ২১ সংশোধনের বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে।

এই বিষয়টি নিয়ে শনিবার সরকারের নীতি-নির্ধারকরা কয়েক দফায় বৈঠক করেন।

ওই বৈঠকে থাকা একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আপিলের ক্ষেত্রে প্রসিকিউশন ও আসামি পক্ষের সমান সুযোগ রেখে আইনের সংশোধনী প্রস্তাব সংসদের চলতি অধিবেশনেই তোলা হতে পারে।”

“চলতি অধিবেশনে না হলে এজন্য সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকা হবে,” বলেন সরকারের শীর্ষ পর্যায়ের ওই ব্যক্তি।

যুদ্ধাপরাধের বিচারে ১৯৭৩ সালে প্রণীত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইন বর্তমান সরকার আমলে সংশোধনের পর বহু প্রতীক্ষিত এই বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়।

সংশোধিত আইনের সেকশন ২১ এ বলা হয়েছে, ৩ নম্বর সেকশনে উল্লেখিত যে কোনো অপরাধে দোষী একজন ব্যক্তি এবং ট্রাইব্যুনাল কর্তৃক দণ্ডিত একজন ব্যক্তি যে কোনো সাজা ও দণ্ডের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিলের অধিকার রাখে।

“খালাসের আদেশের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে সরকারের আপিলের অধিকার রয়েছে।”

১৯৭৩ সালের আইনে সরকারের আপিলের কোনো সুযোগ ছিল না, সংশোধনীতে খালাসের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের সুযোগ যোগ হয়।

এখন যে কোনো রায়ের বিরুদ্ধে আসামির মতো সরকার বা প্রসিকিউশনের আপিলের বিধান যোগ করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

Abdul Quader Molla (File Photo)

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রথম রায়ে আবুল কালাম আযাদকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। দ্বিতীয় রায়ে যাবজ্জীবন সাজা হয় জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার।

কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রায় প্রত্যাখ্যান করে সারাদেশে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। শাহবাগে চলছে অবস্থান কর্মসূচি।

বিক্ষোভের পর সরকারের পক্ষ থেকে আপিলের কথা বলা হলেও অনেক আইনজীবীই দেখান, দণ্ড বাড়াতে আপিলের সুযোগ বর্তমান আইনে নেই।

ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বলেন, দণ্ড কমাতে আসামির আপিলের সুযোগ থাকলেও সাজার মাত্রা বাড়াতে আপিলের সুযোগ নেই।

কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে ছয়টি অভিযোগ ছিল, এর মধ্যে পাঁচটি প্রমাণিত হওয়ায় তাকে কারাদণ্ড দেয়া হয়। একটি অভিযোগে তাকে খালাস দেয়া হয়।

অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই খালাসের বিরুদ্ধেই শুধু আপিল করা যাচ্ছে।

তিনি বলেন, “আইনে বলা হয়েছে, খালাসের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে। সেটা এক অভিযোগও হতে পারে, আবার পূর্ণ খালাসও হতে পারে।”

এদিকে যাবজ্জীবন সাজার বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ রয়েছে কাদের মোল্লার এবং তা করা হবে বলেও জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা।