তাজরীন-স্মার্ট মালিকদের গ্রেপ্তার দাবিতে বিজিএমইএ’র সামনে অবস্থান

তাজরীন ও স্মার্ট ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক শ্রমিকের মৃত্যুর জন্য মালিকপক্ষকে দায়ী করে তাদের ৩১ জানুয়ারির মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছে পোশাক শ্রমিক সংগঠনগুলো।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Jan 2013, 06:04 AM
Updated : 28 Jan 2013, 06:07 AM

সোমবার সকালে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএ কার্যালয়ের সামনে অবস্থান কর্মসূচি থেকে এই আল্টিমেটাম দেয় তারা।

এর মধ্যে দাবি পূরণ না হলে কঠোর কর্মসূচির হুমকি দেন গার্মেন্ট শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু।

তিনি বলেন, “আমাদের দাবি না মানা হলে ৩ ফেব্রুয়ারি ১২টায় শ্রম পরিচালকের কার‌্যালয় ঘেরাও করা হবে। প্রয়োজনে সারাদেশে গার্মেন্ট শ্রমিকদের নিয়ে অবরোধ ও হরতালসহ বৃহত্তর কর্মসূচি পালন করা হবে।”

গার্মেন্ট শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ টেক্সটাইল গার্মেন্টস ওয়ার্কার্স ফেডারেশন ও গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম যৌথভাবে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে।

মোহাম্মদপুরের এই কারখানায় অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ৭ শ্রমিক।

কারখানাগুলোতে অগ্নিকাণ্ডে নিহত শ্রমিকদের এক জীবনের সমপরিমাণ ক্ষতিপূরণ দেয়া এবং কারখানায় শ্রমিকদের নিরাপদ কর্ম পরিবেশ সৃষ্টির দাবিও জানিয়েছে তারা।

শনিবার মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় স্মার্ট ফ্যাশনস কারখানার দ্বিতল ভবনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পদদলিত ও ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে মারা যান সাত নারী শ্রমিক।

এর আগে গত ২৪ নভেম্বর আশুলিয়ার তাজরীন ফ্যাশনসে আগুনে মারা যান অন্তত ১১১ জন শ্রমিক।

শ্রমিকদের এ অবস্থান কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, কর্মস্থলে শ্রমিকদের জীবনের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব শ্রম মন্ত্রণালয়ের। স্মার্ট গার্মেন্টসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সরকার দায় এড়াতে পারে না।

সরকারের যে সমস্ত কর্মকর্তার অবহেলার কারণে এ ঘটনা ঘটেছে, তাদের বিচার দাবি করেন তিনি।

স্মার্ট ফ্যাশনস তাদের সদস্য নয় বলে বিজিএমইএর দাবি প্রসঙ্গে সিপিবি সভাপতি বলেন, “বিজিএমইএর যেসব সদস্য সাব-কন্ট্রাক্টে স্মার্ট ফ্যাশনসকে কাজ দিয়েছিল, পার্টনার হিসেবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।”

প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, “তাজরীনে অগ্নিকাণ্ডের পর সুমি নামে একজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে বলা হল, ২০ হাজার টাকার জন্য সে তাজরিনে আগুন দিয়েছে। আমি প্রশ্ন করতে চাই, সেই সুমি এখন কোথায়?”

তাজরীনের মালিককে বাঁচাতে ‘সুমি নামে নাটক’ সাজানো হয়েছে বলেও দাবি করেন সিপিবি সভাপতি।

অবস্থান কর্মসূচিতে উপস্থিত হয়ে সংহতি প্রকাশ করেন তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ।

তিনি বলেন, আগের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাগুলোতে মালিকদের গ্রেপ্তার ও বিচারের আওতায় আনা হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটত না।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের এই শিক্ষক বলেন, “সরকারের মন্ত্রী এমপিরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন। কিন্তু যখন শ্রমিকরা নির্বিচারে আগুনে পুড়ে মারা যায় তারা ছুটে আসে মালিকদের বাঁচাতে।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সমালোচনা করে তিনি বলেন, “স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব খুনিদের ধরা। আর তিনি (মহীউদ্দীন খান আলমগীর) বলছেন, তাজরীনের মালিককে গ্রেপ্তার করে কোনো লাভ নেই।

“তার নির্দেশে খুনিরা জেল থেকে বেরিয়ে যায়। তার উদ্দেশ্য খুনিদের রক্ষা করা, গার্মেন্টস মালিকদের রক্ষা করা।”

অগ্নিকাণ্ডে নিহত শ্রমিকদের এক জীবনের দ্বিগুণ ক্ষতিপূরণ দেয়ার দাবি জানান তিনি।

কর্মসূচিতে জানানো হয়, প্রচলিত দুর্ঘটনা আইনে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের এক জীবনের আয়ের দ্বিগুণ ক্ষতিপূরণ দেয়ার বিধান রয়েছে। সে হিসেবে তাজরীন এবং স্মার্ট ফ্যাশনসে নিহতদের একেক জনের পাওনা হওয়ার কথা প্রায় ৪৮ লাখ টাকা।

শ্রমিকদের অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বিজিএমইএ ভবনের সামনের রাস্তায় কাফনের কাপড় পরে মানববন্ধন করেন একদল শিক্ষক-সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পেশাজীবী।