নির্মল সেন নেই

চলে গেলেন নির্মল সেন। বেশ কিছুদিন ধরে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মঙ্গলবার হার মেনেছেন এই বাম রাজনীতিক, যিনি সাংবাদিকও ছিলেন।

প্রতিবেদন: মামুনুর রশীদবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Jan 2013, 07:51 AM
Updated : 8 Jan 2013, 12:43 PM

ফুসফুসে সংক্রমণ নিয়ে অসুস্থ অবস্থায় বেশ কয়েকদিন লাইফ সাপোর্টে থাকা নির্মল সেনকে সন্ধ্যায় মৃত ঘোষণা করেন চিকিৎসকরা।

অকৃতদার নির্মল সেনের বয়স হয়েছিল ৮২ বছর। তার জন্ম ১৯৩০ সালের ৩ অগাস্ট গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায়।

নির্মল সেনের মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া শোক প্রকাশ করেছেন।

স্পিকার আবদুল হামিদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারাও প্রবীণ এই নেতার মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন।

গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সভাপতি নির্মল সেন ২০০৩ সালে ব্রেইনস্ট্রোকে আক্রান্ত হলে দেশ ও বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নেন। 

এরপর থেকে তিনি কোটালীপাড়ার দীঘিরগ্রামে নিজের বাড়িতেই থাকছিলেন।

অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ২৪ ডিসেম্বর ঢাকায় আনা হয় নির্মল সেনকে। ভর্তি করা হয় ল্যাব এইড হাসপাতালে। ২৬ ডিসেম্বর থেকে তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন।

এই অবস্থাতেই মঙ্গলবার বিকালে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন বলে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানিয়েছেন প্রয়াতের ভাস্তে কংকন সেন।

ল্যাব এইডের চিকিৎসক ড. কাজী নাজমুল ইসলাম এর আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছিলেন, “তার (নির্মল সেন) ফুসফুসে যে ইনফেকশন ছিল, তা রক্তের ভেতর দিয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে, যেটাকে সেপটিসেমিয়া বলা হয়।”
 

নির্মল সেনের মরদেহ বুধবার হেলিকপ্টারে করে কোটালীপাড়ায় নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছেন।

কংকন সেন বলেন, মরদেহ বুধবার সকালে কয়েক ঘণ্টার জন্য কোটালীপাড়ায় নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে তথ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। কোটালীপাড়া থেকে ফিরিয়ে আনার পর ল্যাব এইডের মরচুয়ারিতেই মরদেহ রাখা হবে।”

পরদিন বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টার মধ্যে নির্মল সেনের কফিন নেয়া হবে জাতীয় প্রেসক্লাব, তোপখানা রোডের দলীয় কার্যালয়ে এবং কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানানোর পর মরদেহ নেয়া হবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে, যেখানে গবেষণার জন্য থাকবে তা।

শেষ সময়ে প্রয়াতের সঙ্গে থাকা কংকন বলেন, “উনি বেঁচে থাকতেই তার শরীর দান করে গেছেন।”

শিক্ষক সুরেন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত ও লাবণ্য প্রভা সেনগুপ্তের আট সন্তানের মধ্যে তিনি পঞ্চম নির্মল সেনের রাজনীতিতে হাতেখড়ি তরুণ বয়সে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুক্ত হয়ে।

কলেজ জীবনে তিনি ব্রিটিশবিরোধী সশস্ত্র বিপ্লবী সংগঠন অনুশীলন সমিতির সক্রিয় সদস্য ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি রেভ্যুলিউশনারি সোশ্যালিস্ট পার্টিতে (আরএসপি) যোগ দেন।

ভারত ভাগের আগে ১৯৪৬ সালে পুরো পরিবার বাংলাদেশ ছেড়ে কলকাতায় চলে গেলেও থেকে গিয়েছিলেন নির্মল সেন। বরিশাল বিএম কলেজ থেকে আইএ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ ও এমএ পাস করেন তিনি।

নির্মল সেন দীর্ঘদিন শ্রমিক-কৃষক সমাজবাদী দলের নেতৃত্ব দেন, পরে দলটি গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টিতে একীভূত হয় এবং নতুন দল গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সভাপতি হন তিনি।

১৯৫৯ সালে দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় কাজের মধ্য দিয়ে নির্মল সেনের সাংবাদিকতা জীবন শুরু। এর পর দৈনিক আজাদ, দৈনিক পাকিস্তান ও দৈনিক বাংলায় কাজ করেন তিনি। দৈনিক বাংলা বিলুপ্তির পর পাওনা আদায়ে অনশনে বসেছিলেন তিনি।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন নির্মল সেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগে অতিথি শিক্ষকও ছিলেন তিনি।

অসুস্থ অবস্থার মধ্যেও কয়েক মাস আগে ঢাকায় এসে সাংবাদিকদের এক কর্মসূচিতে সাংবাদিক সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাগিদ দিয়ে যান তিনি।