সিরিয়ায় নিহত জঙ্গি সাইফুলের ভাই স্পেনে গ্রেপ্তার

দুবছর আগে সিরিয়ায় বিমান হামলায় নিহত বাংলাদেশি আইএস জঙ্গি সাইফুল হক সুজনের এক ভাই জঙ্গি অর্থায়নে জড়িত থাকার অভিযোগে স্পেনে গ্রেপ্তার হয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Sept 2017, 02:14 PM
Updated : 23 Sept 2017, 03:02 PM

কয়েক মাসের গোয়েন্দা নজরদারির পর একই সময়ে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান চালিয়ে একই অভিযোগে ১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয় বলে শনিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

শুক্রবার বিকাল ৫টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত স্পেনের এপ্রিমাডুরা প্রদেশের মেরিদা শহর, ঢাকা, খুলনা ও রাজশাহীতে একযোগে অভিযান পরিচালনা করা হয়।

র‌্যাব বলছে, স্পেনের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার আতাউল হক সুজন সাইফুলের ভাই, ‘আইসিংকটেল’ নামের একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান।

চীনা বার্তা সংস্থা শিনহুয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসলামিক স্টেটের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে শুক্রবার ৩৪ বছর বয়সী এক বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করেছে স্পেনের পুলিশ।

২০১৫ সালে স্পেনে পাড়ি জমানো এই ব্যক্তিও তার ভাইয়ের মতো আইএসের প্রযুক্তি উন্নয়ন ও অর্থায়নের কাজ করতো বলে পুলিশের অভিযোগ।

তিনি ড্রোনসহ অন্যান্য সরঞ্জামাদি খুঁজছিলেন বলে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে। তাকে এই জঙ্গি গোষ্ঠীর ‘প্রযুক্তি উন্নয়ন ব্যাটালিয়নের’ শীর্ষ পর্যায়ের অন্যতম ব্যক্তি বলে মনে করছে দেশটি।

যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ১০ ডিসেম্বর সিরিয়ায় আইএস এর কথিত রাজধানী রাকার কাছে ড্রোন হামলায় নিহত হন আইএসের কম্পিউটার অপারেশন বিভাগের প্রধান সাইফুল হক সুজন।

শুক্রবার বাংলাদেশে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছ তাদের অধিকাংশই সাইফুলের মালিকানাধীন যুক্তরাজ্যভিত্তিক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘আইব্যাকস টেকনোলজিস লিমিটেডে’ কাজ করত।

র‌্যাব বলছে, বিমান হমলায় সাইফুল নিহত হওয়ার ১৫ দিনের মাথায় ‘আইব্যাকসটেক নোলজিস লিমিটেডের’ সব কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় যুক্তরাজ্য সরকার। বাংলাদেশেও বন্ধ হয়ে যায় এর কার্যক্রম।

সিরিয়ায় সুজনের নিহত হওয়ার সপ্তাহ দুই আগে ব্রিটিশ গোয়েন্দাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ঢাকার কারওয়ানবাজারে তার প্রতিষ্ঠান আইব্যাকস টেকনোলজিস লিমিটেডের কার্যালয় অভিযান চালায় পুলিশ।

ওই কার্যালয় থেকে সুজনের বাবা একেএম আবুল হাসনাত, ছোট ভাই হাসানুল হক ওরফে গালিব মাহমুদসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে জঙ্গি অর্থায়নে সহযোগিতার অভিযোগে মামলা করা হয়। 

তেজগাঁও থানার ওই মামলার এজাহারে বলা হয়, গ্রেপ্তার ওই পাঁচজন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য বা সমর্থক। বিদেশে থাকা সুজন ও তার ভাই ‘জিহাদি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য’ আইব্যাকসের মাধ্যমে তাদের টাকা পাঠিয়ে আসছিলেন।

র‌্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইব্যাকস বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ওই প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাই পরে আগেরটির আদলে ডব্লিউএএইচএমআই (WAHMI) নামে বাংলাদেশে নতুন একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলে। একই সময়ে সাইফুলের ভাই আতাউলও স্পেনে ‘আইসিংকটেল’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান খোলে।

এই আইসিংটেলই (ISYNCTEL) ডব্লিউএএইচএমের সঙ্গে জঙ্গি অর্থায়নের কার্যক্রম পরিচালনা করতো বলে প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করেছে র‌্যাব।

শুক্রবার র‌্যাব যাদের গ্রেপ্তার করেছে, তাদের মধ্যে আট জনকেই ঢাকার পল্লবীতে ডব্লিউএএইচএমআই নামের ওই প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান থেকে ধরা হয়। বাকিদের ঢাকার বাইরে থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- চট্রগ্রামের হেলাল উদ্দিন (২৯), আমজাদ হোসেন (৩৪) ও জাহেদ উল্লাহ (২৯), গাজীপুরের আল আমীন (২৩), কুমিল্লার ফয়সল ওরফে তুহিন (৩৭), নোয়াখালীর আল মামুন (২০) ও মঈন খান (৩৩), লক্ষ্মীপুরের আল আমীন (২৩), খুলনার শাকিল (২৭) রাজশাহীর মো. নাহিদ (৩০), বাগের হাটের টলি নাথ (৪০)।

এদের মধ্যে তাজুল ও টলি নাথকে খুলনা এবং নাহিদকে রাজশাহী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

নাহিদ ও তাজুল ২০১৫ সালে জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগের এক মামলার জামিনপ্রাপ্ত আসামি বলে উল্লেখ করা হয়েছে র‌্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে। 

গ্রেপ্তারকৃদের কাছ থেকে ১১টি ল্যাপটপ, ১২টি মোবাইল ফোন, ৭টি কার্ড পাঞ্চিং মেশিন, পাসপোর্ট, অন্যান্য সরঞ্জামাদি ও নথিপত্র ঊদ্ধার করা হয়েছে।

নথিপত্র পর্যালোচনার ভিত্তিতে র‌্যাব বলছে, বিভিন্ন সময়ে স্পেনে আতাউলের পরিচালিত আইসিংকটেল থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ডব্লিউএএইচএমআইয়ের কাছে পাঠানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “প্রেরিত অর্থের আনুমানিক ৪৭ শতাংশ খরচ করা হয়েছ বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। অবশিষ্ট অর্থ আইব্যকস লিমিটেডের মতো ব্যবসার আড়ালে জঙ্গিবাদে ব্যবহার করা হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়।”