শোক দিবসে ‘ক্লাস’: শিক্ষকের পক্ষে সতীর্থদের প্রতিবাদ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক মাহবুবুল হক ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে ‘শোক দিবসে ক্লাস নেওয়ার অভিযোগের’ প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা।

নিজস্ব প্রতিবেদকও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 August 2017, 12:31 PM
Updated : 17 August 2017, 12:31 PM

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে আয়োজিত এক মানববন্ধনে শিক্ষক মাহবুবুল হকের বিরুদ্ধে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ এ অভিযোগ আনায় তাদের নিন্দা জানানো হয়।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র মাহবুবুল হকের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগের জবাবে তার সতীর্থরা বলছেন, মাহবুবুল হক সেদিন প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ক্লাস নেননি। শোক দিবসের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শেষে শিক্ষার্থীদের অনুরোধে কিছু বিষয় বুঝিয়ে দিয়েছেন মাত্র।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও অন্যদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুরু থেকেই সরব থাকায় উপাচার্যে ইন্ধনেই ইস্যু তৈরি করে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

মানববন্ধনে স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা, যোগাযোগ ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক কাজী আনিছ বলেন, “মাহবুবুল হকের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ অমূলক। শোক দিবসের আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শেষে তিনি শিক্ষার্থীদের অনুরোধে কিছু বিষয় বুঝিয়ে দিয়েছেন, যেটা কোনোভাবেই শোক দিবসের সাথে সাংঘর্ষিক নয়।

“আর এটাতো প্রাতিষ্ঠানিভাবে কোনো ক্লাস ছিল না। প্রত্যেকেই নিজ নিজ জায়গা থেকে নিবেদিত প্রাণ হবে, সেটা বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও কর্ম থেকেই আমরা শিখেছি। সুতরাং একজন শিক্ষক তার রুটিন ওয়ার্কের বাইরে গিয়েও যদি তার শিক্ষার্থীদের প্রতি নিবেদিতপ্রাণ হয়, সেটা বঙ্গবন্ধু আদর্শেরই বাস্তবায়ন।”

১৫ অগাস্ট জাতীয় শোক দিবসে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহবুবুল হক বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান ভবনে ক্লাস নিয়েছেন অভিযোগ করে তার বহিষ্কার দাবিতে ওইদিনই প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয় ছাত্রলীগ।

পরদিন শিক্ষক মাহবুবুল হকের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর একটি স্মারকলিপি দেন ছাত্রলীগ সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ ও সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মাজেদ।

ছাত্রলীগের এ ধরনের প্রতিক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কার্যক্রমসহ কয়েকটি বিভাগের পরীক্ষা স্থগিত হয়ে যায়।

ক্লাস নেওয়ার অভিযোগের মুখে থাকা শিক্ষক মাহবুবুল হক ওইদিনের ঘটনা সম্পর্কে এক ফেইসবুক পোস্টে জানান, শোক দিবসের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিভাগের কয়েকজন শিক্ষার্থী তার কাছে তাদের চলমান পরীক্ষা সংক্রান্ত একটি বিষয় বুঝতে আসেন। তিনি তাদের তার বিভাগীয় অফিসের সামনে অপেক্ষা করতে বলেছিলেন।

কিন্তু অফিসে তার অন্য সহকর্মীরা উপস্থিত থাকায় তিনি শিক্ষার্থীদের পাশের একটি কক্ষে নিয়ে সেখানে তাদের ওই বিষয় বুঝিয়ে দেন। তখন খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে সামাজিক বিজ্ঞান ভবনে যান। তারা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে দেখে সেখান থেকে প্রশাসনিক ভবনে চলে যান। এরপর তার বহিষ্কার দাবি করে প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের ইন্ধনেই ছাত্রলীগ বিষয়টিকে ইস্যু করে শিক্ষক মাহবুবুল হককে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে বলে মানববন্ধনে অভিযোগ করেন সময় টিভির প্রতিবেদক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মানোয়ার হোসেন।

তিনি বলেন, “মাহবুবুল হকের বিরুদ্ধে যা হচ্ছে, সেটা একটা ষড়যন্ত্র। কারণ তিনি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও অন্যান্যদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শুরু থেকেই সরব।

“তিনি মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও প্রগতিশীলতার চর্চায় নিবেদিত একজন শিক্ষক। আগেও তাকে নানাভাবে ফাঁসানোর চেষ্টা করা হয়েছে। এখন এরকম একটা ইতিবাচক ব্যাপারকে ইস্যু করে ভিসির ইন্ধনে ছাত্রলীগ তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।”

যমুনা টিভির স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মনিরুল ইসলাম বলেন, “কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ শিক্ষক মাহবুবুলের বিরুদ্ধে পনের অগাস্টে অনানুষ্ঠানিক ক্লাস নেওয়ায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ভূলুণ্ঠিত হয়েছে বলে যে অভিযোগ করেছে, সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।

“বরং বঙ্গবন্ধু যে উন্নত, সুশিক্ষিত, সোনার বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছেন, সেই বাংলাদেশ গড়ার পেছনেই কাজ করে যাচ্ছেন মাহবুবুল হকের মতো শিক্ষকরা।”

শিক্ষক মাহবুবুল হককে বাধ্যতামূলক ছুটি

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় আয়োজিত কর্মসূচি চলার সময়ে ক্লাস নেওয়ার অভিযোগে শিক্ষক মাহবুবুল হককে বাধ্যতামূলক এক মাসের ছুটিতে পাঠিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বৃহস্পতিবার বাধ্যতামূলক এক মাসের এই ছুটির কথা জানিয়ে ওই শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. মজিবুর রহমান মজুমদার স্বাক্ষরিত এক চিঠিও পাঠানো হয়েছে।

চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে রেজিস্ট্রার মজিবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ওই শিক্ষকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।

“বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়া জন্য বলা হয়েছে।”

চিঠিতে বলা হয়, “কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক আয়োজিত কর্মসূচি চলাকালীন সময়ে আপনার ক্লাস নেওয়াকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদ্যামান পরিস্থিতি বিবেচনায় আপনাকে আগামী ২০ অগাস্ট থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে ছুটি প্রদান করা হল।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের সিণ্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মোসালেহ উদ্দিন আহমেদকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের ওই তদন্ত কমিটির অন্যরা হলেন- রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আবু তাহের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার মো. আমিরুল হক চৌধুরী।