মেঘ ক্ষণিকের, সূর্য উঠিবে আবার: রায় নিয়ে কাদের

ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণ নিয়ে ‘উদ্বেগ তৈরি হয়েছে’ বলে মনে করলেও শঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2017, 12:53 PM
Updated : 14 August 2017, 12:57 PM

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কাব্যনাট্য বিসর্জন থেকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেছেন, “শঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। আকাশের মেঘ ক্ষণিকের, সূর্য চিরদিনের। ক্ষণিকের মেঘ কাটিয়া যাবে, চির দিবসের সূর্য উঠিবে আবার।”

ওই রায় নিয়ে তুমুল আলোচনার মধ্যে প্রধান বিচারপতি ও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ‘আওয়ামী লীগের অবস্থান তুলে ধরার পর’ সোমবার বিকেলে এক অনুষ্ঠানে সেতুমন্ত্রী কাদেরের এ মন্তব্য আসে।  

“রায়ের পর্যবেক্ষণ নিয়ে আমি প্রধান বিচারপতির সঙ্গে বৈঠক করেছি আমাদের দলের সভাপতি শেখ হাসিনার অনুমতি নিয়ে। প্রধান বিচারপতিকে আমাদের দলের অবস্থান জানিয়েছি।

“আমি আজ আবার প্রধানমন্ত্রীর উপদেশ অনুযায়ী মহামান্য রাষ্ট্রপতিকেও সেই পর্যবেক্ষণের বিষয়ে প্রধান বিচারপতিকে যে বক্তব্য জানিয়েছি, সেটা রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেছি।”

অবশ্য দুই আলোচনায় কী ফল হয়েছে বা রায় নিয়ে ‘মেঘ’ কীভাবে কাটবে- সেসব বিষয় বিশদ করেননি ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা।  

উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের যে পরিবর্তন ষোড়শ সংশোধনীতে আনা হয়েছিল, তা অবৈধ ঘোষণা করে দেওয়া রায় গত ১ অগাস্ট প্রকাশ করে সুপ্রিম কোর্ট।

ওই রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি দেশের রাজনীতি, সামরিক শাসন, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি, সুশাসন ও বিচার বিভাগের স্বাধীনতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।

তাতে ‘বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কটাক্ষ ও অবমূল্যায়ন করা হয়েছে’ অভিযোগ তুলে রায়ে সংক্ষুব্ধ সরকারি দল কড়া সমালোচনা করছে। তবে বিএনপি এ রায়কে বলছে ‘ঐতিহাসিক’।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক রায়ের পর্যবেক্ষণের ‘আপত্তিকর’ মন্তব্য ‘এক্সপাঞ্জ’ (বাদ) করার উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেছেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, কাজটি আদালতের মাধ্যমেই করা হবে।

এর মধ্যে শনিবার রাতে হেয়ার রোডে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার বাসায় যান ওবায়দুল কাদের। পরদিন তিনি জানান, সাক্ষাতের উদ্দেশ্য ছিল প্রধান বিচারপতির কাছে ‘দলীয় অবস্থান তুলে ধরা’।

আলোচনার বিস্তারিত না জানিয়ে কাদের কেবল বলেছেন, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে কথা হয়েছে এবং আরও হবে।

এরপর সোমবার দুপুরে তিনি বঙ্গভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বৈঠক করেন। তার কিছুক্ষণ আগেই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে জন্মাষ্টমীর শুভেচ্ছা বিনিময় করে বঙ্গভবন থেকে বেরিয়ে যান বিচারপতি সিনহা।

কাদের দাবি করেছেন, বঙ্গভবনে যে জন্মাষ্টমীর অনুষ্ঠান ছিল, তা তার জানাই ছিল না। পরে বিকেলে পলাশীতে কেন্দ্রীয় জন্মাষ্টমীর মিছিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসে রায় নিয়ে ‘মেঘ কেটে যাবে’ বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।  

এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সেতুমন্ত্রী কাদের বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়কে ‘সংখ্যালঘু মনোভাব’ ত্যাগ করে নিজেদের ‘ফার্স্ট ক্লাস সিটিজেন’ ভাবার পরামর্শ দেন।

তিনি বলেন, “এদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানের যে অধিকার, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবার একই অধিকার। শুধু মুসলমান নয়, হিন্দু বৌদ্ধ, খ্রিস্টান সবাই মুক্তিযোদ্ধা। হিন্দুদেরকে বলছি, আপনারা মাথা উঁচু করে চলবেন।”

ভারতের সঙ্গে সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন ও ছিটমহল সমস্যার সমাধানের পথ ধরে তিস্তা চুক্তি হবে বলেও আশ্বাস দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।

“সেদিন আর বেশি দূরে নয়, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যে আশ্বাস দিয়েছেন, আমরা তাতে আস্থাশীল। অচিরেই তিস্তা নদীর পানির বণ্টনের চুক্তি সম্পাদন হবে।”

কাদেরের ভাষায়, তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে যে সমস্যা তা সীমান্ত চুক্তি বা ছিটমহলের চেয়ে জটিল নয়। আলাপ আলোচনা অনেক দূর ‘এগিয়েছে’ এবং এখন কেবল ‘সময়ের অপেক্ষা’।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ‘একজন বাঙালি হিসেবে’ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেবেন- এমন প্রত্যাশার কথাও কাদের বলেন।

“একাত্তরে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছি। সেদিন মুক্তিযুদ্ধের জন্য কয়েক হাজার ভারতীয় সৈন্য রক্ত দিয়েছে। একাত্তরে ভারতের সঙ্গে আমাদের রক্তের যে রাখি বন্ধন, সে রাখি বন্ধন আজও আমাদের চেতনায় ও মানসভূমিতে জেগে আছে। আমরা আমাদের সেই চেতনার বিশ্বাস থেকে সরে দাঁড়াই নাই।

“মাঝখানে কিছু সময় প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে টানাপড়েন হয়েছে। সম্পর্কে একটা মহল অবিশ্বাস ও সন্দেহের দেয়াল তুলেছিল। বঙ্গবন্ধুকন্যা ক্ষমতায় আসার পর, বিশেষ করে ভারতে বর্তমান ডায়নামিক প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ক্ষমতায় আসার পরে, সেই সন্দেহ ও অবিশ্বাসের দেয়াল আমরা ভেঙে ফেলেছি।”

জন্মাষ্টমী মিছিলের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, দেশের মানুষ যে নিজ নিজ ধর্ম ‘স্বাধীনভাবে এবং যথাযথভাবে’ পালন করতে পারছে, এই শোভাযাত্রায় হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিই তার প্রমাণ।

আর মিছিলের উদ্বোধন করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন বলেন, “সবার ধর্ম সবাই পালন করব। আর সবাই মিলে একসঙ্গে এগিয়ে যাব, সেই প্রত্যয়ে আজকের এই শোভাযাত্রা।”

উদ্বোধনের পর শ খানেক ট্রাকে চড়ে ঢাকের বাদ্যে, নাচের তালে শোভাযাত্রায় বের হন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। পলাশী থেকে গুলিস্তান, নয়বাজার, তাঁতীবাজার হয়ে বাহাদুর শাহ পার্কে পৌঁছে শোভাযাত্রা শেষ হয়।

শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিনের এ উৎসবে সোমবার দুপুরে ঢাকেশ্বরী মন্দিরে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় ‘গীতাযজ্ঞ’ হয়েছে বলে জানান মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার রায়।

মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি ডি এন চ্যাটার্জির সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে ঢাকার পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্তসেন দীপু ও সাধারণ সম্পাদক সম্পাদক তাপস কুমার পাল বক্তব্য দেন।