সুপ্রিম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (বিচার ও প্রশাসন) সাব্বির ফয়েজ জানান, আইন মন্ত্রণালয়ের ওই প্রস্তাবের চিঠি মঙ্গলবার তাদের হাতে পৌঁছেছে।
সেখানে বরিশালের মুখ্য মহানগর হাকিম আলী হোসাইনকে অন্যত্র বদলি করার কথা বলা হয়েছে জানিয়ে সাব্বির ফয়েজ বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের জেনারেল অ্যাডমিন্টিস্ট্রেশন কমিটি এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে তা আইন মন্ত্রণালয়কে জানাবে।”
বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ওবায়েদ উল্লাহ সাজুর করা এক মানহানির মামলায় বরগুনা সদরের ইউএনও গাজী তারিক সালমনকে কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় আলোচনা চলছে এই বিচারককে নিয়ে। বরিশাল সার্কিট হাউসে তার ৯৩ হাজার ৯৫০ টাকা বকেয়া থাকার ঘটনাও সংবাদের শিরোনাম হয়েছে।
তারিক সালমন বরিশালের আগৈলঝাড়ার ইউএনও থাকাকালে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে ‘বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃত করে ছাপিয়েছিলেন’ অভিযোগ করে গত ৭ জুন মামলা করেন জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ওবায়েদ উল্লাহ সাজু।
ওই মামলায় সমন জারির প্রেক্ষাপটে ১৯ জুলাই তারিক সালমন আদালতে হাজির হলে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন মুখ্য মহানগর হাকিম মো. আলী হোসাইন। একই বিচারক দুই ঘণ্টা পর জামিন মঞ্জুর করেন বলে ইউএনও তারিকের ভাষ্য।
তিনি জানান, আগৈলঝাড়া উপজেলায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিবস ও জাতীয় শিশুদিবস-২০১৭ উপলক্ষে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় প্রথম ও দ্বিতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত দুই শিশুর আঁকা দুটি ছবি ব্যবহার করে স্বাধীনতা দিবসের আমন্ত্রণপত্রটি তৈরি করা হয়েছিল।
তাকে আদালত প্রাঙ্গনে পুলিশের ধরে নেওয়ার ছবি প্রকাশ হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়। ওই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বিস্মিত হয়েছেন জানিয়ে তার উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম গণমাধ্যমকে বলেন, সেই ছবিতে বিকৃত করার মতো কিছু তারা দেখেননি বরং এটি একটি ‘সুন্দর কাজ’।
এই প্রেক্ষাপটে ২১ জুলাই ওবায়েদ উল্লাহ সাজুকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে আওয়ামী লীগ। তারিক সালমনকে নাজেহালের দিন বরিশালের আদালতে দায়িত্বরত পুলিশের ছয় সদস্যকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।
এরপর ওবায়েদ উল্লাহ সাজু গত রোববার মামলা প্রত্যাহার করে নিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছবিটি যে শিশুর আঁকা- তা তার জানা ছিল না।
মামলা করার সময় সাজু আদালতে বলেছিলেন, তার কাছে বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকের অনুমোদন আছে এবং তা তিনি পরে জমা দেবেন।
কিন্তু তিনি তা না দেওয়ায় রোববার মামলা প্রত্যাহারের আবেদনের শুনানিতে অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম অমিত কুমার দে বাদীর ব্যাখ্যা চান। জবাবে সাজু বলেন, সেই কাগজপত্র তার জমা দেওয়া ‘হয়ে ওঠেনি’।
ইউএনও তারিক সালমন বলে আসছেন, ঘটনার দিন প্রথমে জামিন না মঞ্জুর করার পর তাকে প্রায় দুই ঘণ্টা কোর্ট হাজতে আটক রাখ হয়েছিল।
কিন্তু বরিশালের সিএমএম মোহাম্মদ আলী হোসাইন ওই মামলার নথিসহ যে ব্যাখ্যা গত রোববার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারের দপ্তরে পাঠিয়েছেন, সেখানে বলা হয়, ইউএনওর জামিন আবেদন একটিবারের জন্যও নামঞ্জুর হয়নি।
স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগ ওঠার পর বরিশালের জেলা প্রশাসক ও বিভাগীয় কমিশনারের পক্ষ থেকেও তারিক সালমনকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছিল। পরে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করা হয়েছিল।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সোমবার সাংবাদিকদের জানান, ইউএনওর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার মত কিছু তারা পাননি। এ কারণে বিষয়টির নিষ্পত্তি করে দেওয়া হয়েছে।
বরং তারিক সালমনের বিরুদ্ধে মামলা ও তার পরের ঘটনাপ্রবাহে আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটেছে কিনা- তা খতিয়ে দেখতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ একটি তদন্ত কমিটি করেছে বলে জানান তিনি।
সোমবারই বরিশালের জেলা প্রশাসক গাজী মো. সাইফুজ্জামান এবং বরগুনার জেলা প্রশাসক বশিরুল আলমকে প্রত্যাহার করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ফেরত নেওয়া হয়। তাদের জায়গায় নিয়োগ দেওয়া হয় নতুন দুজনকে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোজাম্মেল হক খান সোমবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তারা (দুই ডিসি) যে দায়িত্বে ছিলেন, তা পুরোপুরি পালন করতে পারেননি, প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিতে পারেননি।”