জনপ্রশাসনের এই কর্মকর্তার সঙ্গে পুলিশের ‘মানহানিকর’ আচরণের অভিযোগের মধ্যে শনিবার এক বিবৃতিতে এই দাবি জানায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের এই সমিতি।
সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মনিরুল ইসলামের স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, “বিভিন্ন মহল থেকে প্রশ্ন উঠেছে, পুলিশ কীভাবে মামলা নিল? পুলিশ মামলা নিল কেন? পুলিশ তাকে কেন গ্রেপ্তার করল? এ বিষয়ে কোনো থানায়ই মামলা রুজু হয়নি এবং পুলিশ গাজী তারেক সালমনকে গ্রেপ্তারও করেনি।”
বাদীর আদালতে মামলা দায়ের, ইউএনওর বিরুদ্ধে সমন জারি এবং তার জামিন আবেদন নাকচ হওয়ার কথা তুলে ধরে বিবৃতিতে বলা হয়, “এক্ষেত্রে কোনো পর্যায়েই পুলিশের কোনো ভূমিকা রাখার অবকাশ ছিল না।
“কোন কোন গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে ‘পুলিশ কেন তাকে হাতকড়া পরাল?’, ‘পুলিশ রেগুলেশনের ৩৩০ বিধি অমান্য করা হয়েছে’ শিরোনামে কতিপয় সংবাদ-বক্তব্য প্রকাশিত হয়েছে, যা সঠিক নয়।”
বরিশালের আগৈলঝাড়ার ইউএনও থাকার সময় তারিক স্বাধীনতা দিবসের আমন্ত্রণপত্রে পঞ্চম শ্রেণির এক শিশুর আঁকা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি ব্যবহার করেন। ঘটনার মাস দুয়েক পর বঙ্গবন্ধুর ছবি বিকৃতির অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধে আদালতে আদালতে মামলা করেন আওয়ামী লীগের এক নেতা।
ওই মামলায় গত বুধবার বরিশাল মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে আবেদন নাকচ করে তারিককে হাজতে পাঠানো হয়। দুই ঘণ্টা পর একই বিচারক তাকে জামিন দেন ।
আদালত প্রাঙ্গণে ইউএনও তারিককে পাকড়াও করে নেওয়া পুলিশে ছবি প্রকাশ হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনা শুরু হয়।
ইউএনও তারিকের সঙ্গে পুলিশের আচরণের নিন্দা জানিয়ে অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের বিবৃতিতে বলা হয়, “আদালতের আদেশে অভিযুক্ত হিসেবে জেল হাজতে নেওয়ার সময় কর্তব্যরত পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা তার উপর বল প্রয়োগ করে এবং বেআইনিভাবে (পুলিশ রেগুলেশন এর ৩৩০ ধারা অমান্যপূর্বক) টেনে-হিঁচড়ে কোর্ট হাজতে নিয়ে যায়।”
রাষ্ট্রের একজন ‘গুরুত্বপূর্ণ কর্মকর্তা’ এবং উপজেলা পর্যায়ে প্রজাতন্ত্রের প্রতিনিধির বিরুদ্ধে এই আচরণকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মানহানিকর’ আখ্যায়িত করে তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের সংগঠন।
তবে পুলিশ কর্মকর্তাদের সংগঠনের বিবৃতিতে বলা হয়, “পুলিশ গাজী তারিক সালমনকে কোনো হাতকড়া পরায়নি। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রকাশিত ছবি ভালোভাবে পর্যালোচনা করলে বিষয়টি সুষ্পষ্টভাবে প্রতীয়মাণ হবে।
“এছাড়া ইউএনও গাজী তারিক সালমনের উপর বল প্রয়োগ করে টেনে-হিচঁড়ে কোর্ট হাজতে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগও উঠেছে, যা তথ্য নির্ভর নয়।
“এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে আমরা সুষ্পষ্টভাবে বলতে চাই যে, পুলিশ এক্ষেত্রে কোনভাবেই বল প্রয়োগ কিংবা টেনে হেচঁড়ে নিয়ে যায়নি।”
ইউএনও তারিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে তার ভোগান্তির নিন্দা জানিয়েছে পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন।
বিবৃতিতে বলা হয়, সারা দেশে পুলিশের সদস্যরা স্থানীয় প্রশাসনের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পেশাদারিত্বের সাথে জননিরাপত্তা রক্ষাসহ নাগরিক সেবায় কাজ করে যাচ্ছে।
“বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস এসোসিয়েশন মনে করে আগামীতেও পুলিশ বিভাগের প্রতিটি সদস্য পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তিতে প্রশাসন ক্যাডারসহ রাষ্ট্রের অন্যান্য সংস্থার সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে দেশের প্রচলিত আইন ও বিধির আলোকে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব নিষ্ঠার সাথে পালন করে যাবে।”