প্রযুক্তির ‘অন্ধকার গলি’ নিয়ে সতর্ক করলেন শিক্ষামন্ত্রী

প্রযুক্তির বিকাশে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের পরিধি বাড়ার সুযোগ হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করলেও প্রযুক্তির অপব্যবহারের বিষয়ে অভিভাবকদের সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 July 2017, 01:16 PM
Updated : 21 July 2017, 04:34 PM

ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, “আমরা প্রযুক্তির ব্যবহার করছি আমাদের উন্নয়নের কাজে। মানুষের নাগালের মধ্যে প্রযুক্তি পৌঁছে দিয়েছি। সাড়ে ১৩ কোটি মোবাইল আমাদের পকেটে। তার মাধ্যমে কী না জানে আজকের ছেলে মেয়েরা! এখানে তাদের জ্ঞানের সন্ধানটা দিতে হবে।

“এখানে একটা রিস্ক আছে, অন্ধকার গলিও আছে। খেয়াল রাখতে হবে, আমাদের ছেলে মেয়েরা যেন সেদিকে না যায়।”

জেএসসি ও পিইসিতে কৃতিত্বপূর্ণ ফলাফলের জন্য ডিআরইউ সদস্যের সন্তানদের মধ্যে বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শিক্ষামন্ত্রীর এ আহ্বান আসে।

দেশের ‘৯৯ শতাংশের বেশি’ শিশুকে স্কুলে নিয়ে আসত পারলেও তাদের ঝরে পড়া ঠেকানোকেই এখন বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন নাহিদ।

তিনি বলেন, “আগে শতকরা ৫০ভাগ শিশু, যাদের স্কুলে যাওয়ার বয়স, তারা স্কুলে যেত না। যারা স্কুলে যায় তাদের মধ্যে ৪৮ ভাগ ক্লাস ফাইভ পাস করার আগে ঝরে পড়ত। এরপর যারা যেত, তাদের মধ্যে ৪২ ভাগ নবম শ্রেণির আগে ঝরে পড়ত। তাহলে আমরা কাদের নিয়ে এগোব?

“তাই আমরা লক্ষ্য নির্ধারণ করেছি, আমরা সবাইকে স্কুলে নিয়ে যেতে চাই। আমরা শতকরা ৯৯ ভাগকে স্কুলে নাম লেখাতে পেরেছি। ঝরে পড়া রোধ একটা বড় চ্যালেঞ্জ, ধরে রাখা বড় চ্যালেঞ্জ।”

শিশুদের আধুনিক ও জ্ঞান প্রযুক্তিতে দক্ষ করে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে এগোলেও মানসম্মত শিক্ষকের অভাবে সেটা থমকে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করেন শিক্ষামন্ত্রী।

তিনি বলেন, “এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে শিক্ষার গুণগত মান ঠিক করা। কিন্তু গুণগত মানের শিক্ষার জন্য প্রথম শর্ত হচ্ছে গুণগত মানের শিক্ষক। আমরা সেটা পাই নাই। মেধাবীরা সেভাবে শিক্ষকতায় আসতে চায় না, আমরা সেভাবে সম্মান মর্যাদা দিতে পারি না। ফলে আমরা এখানে সবাইকে ধরে রাখতে পারি না, আনতে পারি না।”

এর বিপরীতে শিক্ষকরা ক্লাসে পাঠদানের চেয়ে প্রাইভেট টিউশনিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন এবং প্রশ্নফাঁসে জড়িয়ে পড়ছেন বলে তাদের সমালোচনা করেন নুরুল ইসলাম নাহিদ।

“শিক্ষকতা পেশায় এসে কেউ কেউ এমন কাজ করছেন যেটা শিক্ষকতা পেশার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। জগতের মধ্যে সবচেয়ে সম্মানিত পেশা শিক্ষকতাকে অনেকে অসম্মানিত করে ফেলছে। ক্লাসে আমরা পড়াচ্ছি না। বাড়িতে গিয়ে পড়াচ্ছি। এটা আমাদের ভবিষ্যতের জন্য বিপদজনক ইঙ্গিত।

“প্রশ্নপত্র ফাঁসের অনেক পথ বন্ধ করলেও কিছু শিক্ষক এখন নিজেরা প্রশ্নফাঁস করে দিচ্ছেন। যার মাধ্যমে তারা পেশাকেই কলঙ্কিত করছেন।”

পিইসিতে কৃতিত্বপূর্ণ ফলের জন্য এ অনুষ্ঠানে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক কামাল তালুকদারের ছেলে মিনহাজ তালুকদারসহ ২৭ জনকে বৃত্তি দেওয়া হয়। আর জেএসসিতে বৃত্তি দেওয়া হয় ১৮ জনকে।

ডিআরইউ সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন বাদশার সভাপতিত্বে বৃত্তি প্রদান অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন ডিআরইউ সাধারণ সম্পাদক মোরসালিন নোমানী।

অন্যদের মধ্যে ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শাবান মাহমুদ, ঢাকা টাইমসের সম্পাদক আরিফুর রহমান দোলন, ডিআরইউ সহসভাপতি আবু দারদা যোবায়ের, সদস্য শাহনেওয়াজ দুলাল, অভিভাবকদের মধ্যে সাবিনা ইয়াসমিন, সুরাইয়া মুন্নী ও শিক্ষার্থী সাবরিনা নুজহাত বক্তব্য দেন।