ব্যাংক লুটপাটে সরকারের পাশের লোকরাই: ফিরোজ রশীদ

দেশে ব্যাংকিং খাতে অনিয়ম ও অর্থ লুটপাটের বিভিন্ন ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে ‘‌‌‌সরকারের পাশের লোক’ ছাড়া এ ধরনের কাজ কেউ করতে পারে না বলে মন্তব্য করেছেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 May 2017, 10:10 AM
Updated : 30 May 2017, 10:54 AM

মঙ্গলবার সংসদে অনির্ধারিত আলোচনায় একটি জাতীয় দৈনিকের খবরের বরাত দিয়ে এ কথা বলেন তিনি।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডির একটি প্রতিবেদন নিয়ে ওই দৈনিকের খবরে বলা হয়, আর্থিক কেলেঙ্কারি ও খেলাপি ঋণের টাকায় ব্যাংকগুলো মূলধন ঘাটতিতে রয়েছে। মানুষের করের টাকা বরাদ্দ দিয়ে রাষ্ট্রয়ত্ত ব্যাংকগুলো টিকিয়ে রাখা হচ্ছে।

সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে ফিরোজ রশীদ বলেন, “আর্থিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। লুটপাটের কথা ওঠে। তদন্তে বসে, প্রতিবেদন আসে। এরমধ্যে আরও দুটি ঘটনা ঘটে, আগেরটা ধামাচাপা পড়ে যায়।

“এই ধামাচাপা পড়তে পড়তে ব্যাংকগুলি ধামাচাপা পড়ে গেছে। মানুষ এখন আর বিশ্বাস করে না। বাজেট আসছে... এই যে ঘাটতি। জনগণ কেন এই ঘাটতি মেটাবে। জনগণের টাকা কারা লুটপাট করছে? কারা এর জন্য দায়ী?  আমরা কথা বলি, অর্থমন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী থাকে না। আমাদের কথা আকাশে শুনে।

তিনি বলেন, “আজকে অর্থনীতিতে অশনি সংকেত। সরকারের পাশের লোক না হলে এই লুটপাট কেউ করতে পারে না। এখানে কেউ করতে পারবে না।”

দেশে সুশাসন নেই অভিযোগ করে ফিরোজ রশীদ বলেন, “আজকে ভয়াবহ অবস্থা। বেসিক ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, রাজশাহী উন্নয়ন ব্যাংক, সোনালি ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক... ঘাটতি মূলধনের তালিকায় রয়েছে। ব্যংকগুলোতে মূলধন নেই। ব্যাংক চলবে কী করে?”

তিনিই বলেন, “ক্ষমতায় থাকলে দুটি জিনিসের অভাব হয় না। একটা হইলো- উপদেশ দেওয়া, চাটুকার-তোষামোদকারী আর হলো বাঁশ দেওয়া। কেউ যদি হিমালয়ের ওপর উঠে মনে করে আকাশ কাছে। আকাশ অত কাছে না।

“সরকার মনে করছে জনগণ খুব কাছে তাদের। আসলে জনগণ কাছে না। জনগণ কারও না। সামনে নির্বাচন, কোথাওতো সুশাসনের চিহ্ন পাচ্ছি না। এ কিসের আলামত।”

বক্তব্যে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের বিষয়টি তুলে ধরে এই কারণে দলের বিরুদ্ধে সংসদে ভোট দিতে না পারার প্রসঙ্গও টানেন জাতীয় পার্টির এই সংসদ সদস্য।

তিনি বলেন, “আমরা কথা কম বলি। কেন? আগের সংসদ সম্পর্কে তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। বিরোধী দল বলেন আর সরকারি দল বলেন, আমরা নিজেরা জানি না। আমার নেত্রী এখানে বসে আছেন। আপনি (স্পিকার) আমাদের কী মনে করেন, সেটা আমাদের প্রশ্ন।

“আমরা কথা বলতে পারি না। ৭০ অনুচ্ছেদ আছে। দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারি না। দেশে গণতন্ত্র চলছে, অবাধ গণতন্ত্র। যে যা ইচ্ছা বলতে পারছেন। আসলে ঘটনা কী? দেশে সুশাসন আছে? সুশাসন যদি থাকতো অরাজকতা চলত না। সর্বক্ষেত্রে অরাজকতা। যাব কোথায়? বলব কোথায়?”

মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে কথা বলার বিষয়টিতে সরকারের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করে নিতে ক্ষমতাসীন দলগুলোর অনেক নেতাকর্মীর স্তাবকতা দেখছেন সংসদ সদস্য ফিরোজ রশীদ।

তিনি বলেন, “কথা বললে বলে চেতনা। কিসের চেতনা? মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। শুধু চেতনা দেখে। যাদের বয়স একাত্তর সালে ১৮ বছর ২২ বছর ছিল, তখন চেতনা কোথায় ছিল? সরকার ক্ষমতায় আসলে এসব লোকের চেতনা বাড়ে।

“এরা সরকারের চাটুকারিতা করছে। সমস্ত টাকা কুক্ষিগত করছে। নানারকম ছদ্মবেশে ব্যবসা-অর্থ করায়ত্ত করছে। বিদেশে টাকা নিয়ে যাচ্ছে। ভিওআইপি ব্যবসার নামে লুটপাট চলছে। এগুলি ভালো লক্ষণ নয়। সামনে বাজেট। কর বাড়াবে। কত বাড়াবেন। করের টাকা অবাধ লুটপাট হয়ে যাচ্ছে।”