এবার পাঠ্যবইয়ে বাংলা সাহিত্যের প্রধানতম কবি-সাহিত্যিকদের অনেকের লেখা বাদ দিয়ে ‘সাম্প্রদায়িক’ লেখা ঢোকানোর প্রতিবাদে আন্দোলন করে আসছে বিভিন্ন প্রগতিশীল সংগঠন। তাদের অভিযোগ, হেফাজতে ইসলামের কথায় পাঠ্যবইয়ে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে।
এর দিকে ইঙ্গিত করে মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল বলেন, “আমরা এখন জামাতিকরণ বাদ দিয়ে হেফাজতিকরণ শুরু করেছি। এর চেয়ে দুঃখের কথা, লজ্জার কথা আমাদের জন্য কি হতে পারে?
“এটা ঠিক আমরা যে তালে আগাচ্ছি, তাতে সাম্প্রদায়িকতা আরও বাড়বে। সমূলে উৎপাটিত করার পথে আমরা হাঁটছি না।”
বৃহস্পতিবার বিকালে রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমিতে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর আয়োজিত জাতীয় শিশু কিশোর সাংস্কৃতিক উৎসবে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন মন্ত্রী।
খেলাঘরের এবারের উৎসবের উদ্বোধন করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন প্রজন্ম গড়ে তোল’ স্লোগান নিয়ে শুরু হয় এই উৎসব।
জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও খালেদা জিয়া রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকাকালে দেশবাসীকে মুক্তিযুদ্ধের ‘মিথ্যা ইতিহাস’ শিখিয়েছেন বলে অভিযোগ করেন মোজাম্মেল হক।
মন্ত্রী বলেন, “আজকের মানসিক পরিবর্তন ব্রিটিশ-পাকিস্তান আমলে ছিল না। পাকিস্তান থেকে দেশ স্বাধীন করে কোথায় গেলাম? এটা যখন ভাবি, তখন হিসাব মিলাতে পারি না। ভালো তো করতে পারলাম না, বরং অবনমিত হয়েছি।
“পাকিস্তান আমলের চেয়ে আজকের পাঠ্যসূচি অনেক বেশি সাম্প্রদায়িক; সে গল্প-কবিতা-প্রবন্ধ যাই বলুন না কেন। আমরা যা পড়েছি তা থেকে আজকের পাঠ্যসূচি অনেক নিম্নমানের, অনেক সাম্প্রদায়িক।”
মোজাম্মেল হক বলেন, “ড. কুদরত-ই-খোদা শিক্ষা কমিশনের রিপোর্ট মোতাবেক বঙ্গবন্ধু শিক্ষা কমিশন গঠনের কথা বলেছিলেন, তাতে প্রগতিশীল ও একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছিল। তা আমরা পালন করিনি।”
সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক বিপ্লবের প্রত্যাশা জানিয়ে তিনি বলেন, “এখন দরকার এক জাগরণ, একটা ঝাঁকির। সাংস্কৃতিক জাগরণ না হলে মৌলবাদের মূলোৎপাটন করা যাবে না। বাঙালি জাতীয়তাবোধের সংস্কৃতিকে শুধু লালন করলেই হবে না, প্রতিষ্ঠিত করতে হবে।”
জঙ্গিবাদবিরোধী চলমান অভিযান নিয়ে মন্ত্রী বলেন, “জঙ্গি ৫০০-১০০০ মেরে ফেললে কোনো লাভ হবে না। হয়ত তারা একটু দুর্বল হয়ে পড়বে। কিন্তু এই ‘বিষ’ সহজে মূলোৎপাটিত হবে না। অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক চেতনার মাধ্যমে মোকাবেলা করতে হবে।”
উৎসবের উদ্বোধক শামসুজ্জামান খান বলেন, “আজকে দেশে যে জঙ্গিবাদের উত্থান, তা রুখতে পারে এই শিশুরাই। এজন্য শিশুদের আমাদের হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক চেতনায় গড়ে তুলতে হবে।”
কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসরের শিল্পীদের কণ্ঠে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় এ আয়োজন। এরপর সেলিম রেজার কথা ও সুরে উৎসব সংগীত ‘নতুন প্রীতি সম্মিলনে শপথ বাক্য পড়ি’ গানটি হয় সম্মেলক কণ্ঠে। তারপর সৈয়দ শামসুল হকের ‘আমার পরিচয়’ কবিতা আবৃত্তি করে আসরের শিশু-কিশোররা। খেলাঘরের ফেনী ও পটুয়াখালী আসরের শিশু-কিশোররা সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেয়।
পর্যটকদের ছবি নিয়ে প্রদর্শনী
নারী পর্যটকদের গ্রুপ ‘ট্রাভেলেটস অফ বাংলাদেশ’- এর আয়োজনে বৃহস্পতিবার ঢাকায় শুরু হয়েছে আলোকচিত্র প্রদর্শনী ‘ট্র্যাভেল অ্যান্ড ট্যাভেলেটস ফটোগ্রাফি প্রদর্শনী সেশন-১’। প্রদর্শনীর পৃষ্ঠপোষকতা করছে আইএফআইসি ব্যাংক। তিন দিনের এ প্রদর্শনীর পাশাপাশি থাকছে শিশু-কিশোরদের উন্মুক্ত চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা।
আলোকচিত্র প্রদর্শনী উপলক্ষে ট্র্যাভেলেটস অব বাংলাদেশ তিন বিভাগে ছবি আহ্বান করে। জমা পড়ে প্রায় ছয় হাজার আলোকচিত্র, যার মধ্য থেকে বাছাইকৃত দুইশ আলোকচিত্র এ প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে। ছবিগুলোতে বাংলাদেশের নৈসর্গিক সৌন্দর্য যেমন উঠে এসেছে, তেমনি রাজধানীর যাপিত জীবনের নানা চিত্রও এসেছে।
সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসবের সমাপ্তি
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে ছিল লোকসংগীত ও গণসংগীতের আসর। গান শোনান দুই ভারতীয় শিল্পী পূরবী মুখোপাধ্যায় ও অমিতাভ মুখোপাধ্যায়।
সংক্ষিপ্ত উদ্বোধনী পর্ব শেষে শুরু হয় পূরবী ও অমিতাভ মুখোপাধ্যায়ের যুগল পরিবেশনা। তারা একে একে পরিবেশন করেন লোক, গণসঙ্গীত, রবীন্দ্র, নজরুল, রজনীকান্ত সেন, দ্বিজেন্দ্রলাল রায় ও অতুল প্রসাদের বেশ কয়েকটি গান। গানের পাশাপাশি কথা ও আলোচনায় উপস্থিত দর্শকদের মুগ্ধ করেন দুই শিল্পী। পরিবেশন করেন হেমাঙ্গ বিশ্বাসের গান।
এই দুই শিল্পীই প্রখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক এবং ভারতীয় গণনাট্য সঙ্ঘ-আইপিটিএ’র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সুনীল মুখোপাধ্যায়ের সন্তান।
মঙ্গলবার বিকাল ৫টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির উন্মুক্ত প্রাঙ্গণে তিন দিনব্যাপী এ উৎসব শুরু হয়।