ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আসামিকে হাজির, ডিআইজি প্রিজনের ব্যাখ্যা চায় হাই কোর্ট

নিম্ন আদালতে বিচারাধীন বেশ কয়েকটি ফৌজদারি মামলায় সর্বনিম্ন ১০ বছর থেকে সর্বোচ্চ ১৮ বছর ধরে কারাবন্দি ১০ জনের মধ্যে চারজনকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে উচ্চ আদালতে হাজির করায় উপ কারা মহাপরিদর্শকের (ডিআইজি প্রিজন) ব্যাখ্যা চেয়েছে হাই কোর্ট।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Feb 2017, 08:24 AM
Updated : 23 Feb 2017, 08:24 AM

আগামী ৯ মার্চ আদালতে স্বশরীরে হাজির হয়ে এ বিষয়ে তাকে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে।

বিচার শেষ না হওয়া আলাদা ফৌজদারি মামলায় কারাবন্দি ওই ১০ জনকে বৃহস্পতিবার আদালতে হাজির করার পর প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও কৃষ্ণা দেবনাথের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

গত ৭ ফেব্রুয়ারি সিলেট ও খুলনা বিভাগের কারাগারে সর্বনিম্ন ১০ বছর ও সর্বোচ্চ ১৮ বছর ধরে ১০ কারাবন্দিকে কেন জামিন দেওয়া হবে না, জানতে চেয়ে স্বতঃপ্রণোদিত রুল দেয় বিচারপতি মো. নূরুজ্জামান ও বিচারপতি এসএইচ মো. নূরুল হুদা জায়গীরদারের হাই কোর্ট বেঞ্চ।

ওইদিন কারাবন্দিদের বিচারিক আদালতের নথি তলবের পাশাপাশি তাদের আদালতে হাজির করতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়।

তারই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার সকালে কেরানীগঞ্জের কারাগার থেকে ১০ বন্দিকে হাই কোর্টে হাজির করা হয়। হাই কোর্ট এসব বন্দির বক্তব্য শোনেন।

শুনানির সময় চার বন্দিকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আনায় আদালত জানতে চায়, কেন তাদের ডান্ডাবেড়ি পরানো হয়েছে। আদালত চারজনের ডান্ডাবেড়ি খুলে দিতে বলে।

এ সময় উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, কারা কর্তৃপক্ষ চারজনকে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে দিয়েছে।

এরপর আদালত ডিআইজি প্রিজনকে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যার আদেশ দেয়।

ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে আনা এই চার কারাবন্দি হলেন, হাবিবুর রহমান ওরফে ইসমাইল, মনিরুজ্জামান মুন্না, নাসিরুদ্দিন ও তার ছেলে গিয়াস।

আদালতে শুনানি করেন লিগ্যাল এইড কমিটির প্যানেল আইনজীবী সৈয়দা সাবিনা আহমেদ মলি।

১০ কারাবন্দির মধ্যে ফারুখ হোসেন ছাড়া বাকিদের নথি না আসায় এদিন আদালত ফের বিচারিক আদালতের নথি তলব করেছে। ফারুখ হোসেনের মামলা তিন মাসের মধ্যে শেষ করতে বিচারকি আদালতকে নির্দেশ দিয়েছে এই হাই কোর্ট বেঞ্চ। না হয় ফারুখ হোসেন জামিন আবেদন করলে তা বিবেচনায় নিতে বলা হয়েছে।

১০ কারাবন্দি হলেন

>> মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের মুয়াগাঁওয়ের বাসিন্দা মৃত আলী হোসেনের ছেলে ফরুখ হোসেন, যিনি ১১ বছর ধরে কারাবন্দি। ২০০৫ সালে সিলেট কোতয়ালি থানায় তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। সিলেট দায়রা জজ বিশেষ আদালতে তাকে ১৩১ বার হাজির করা হয়।

>> ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সোনামুড়া গ্রামের আব্দুল গণির ছেলে সেলিম মিয়া ১১ বছর ৬ মাস ধরে কারাবন্দি। ২০০৫ সালে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা থানায় হত্যা মামলা হয়। তাকে সিলেট অতিরিক্তি দায়রা জজ আদালতে ১২২ বার হাজির করা হয়েছে।

>> হবিগঞ্জের চুনারুঘাট বেগমখালের বাসিন্দা মৃত পাণ্ডে জগন্নাথের ছেলে রাজু জগন্নাথ ১৩ বছর ৭ মাস ধরে কারাবন্দি। ২০০৩ সালে রাজুর বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয়। তাকে এখন পর্যন্ত ১১২ বার বিশেষ দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়।

>> সুনামগঞ্জের তাহিরপুর কাউকান্দি গ্রামের উস্তার গনির ছেলে বশির উদ্দিন (৫৩) ১৩ বছর ধরে হত্যা মামলায় কারাবন্দি। ২০০৩ সালে তাহিরপুর থানায় তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। তাকে এখন পর্যন্ত ৮১ বার সুনামগঞ্জ দায়রা জজ আদালতে হাজির করা হয়।

>> জামালপুর জেলার চর চড়সী গ্রামের বাসিন্দা মুজিবুর রহমানের ছেলে হাবিবুর রহমান ওরফে ইসমাইল ১১ বছর ধরে কারাগারে বন্দি। তার বিরুদ্ধে ২০০৫ সালে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা হয়।

>> সাতক্ষীরা পশ্চিমপাড়ার ইটাগাছা থানার বাসিন্দা মৃত কেরামত আলীর ছেলে মনিরুজ্জামান মুন্না ১১ বছর ধরে কারাবন্দি। ২০০৫ সালে তার বিরুদ্ধেও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা হয়।

>> সাতক্ষীরার ইসলামপুরের দলিল উদ্দিনের ছেলে নাসিরুদ্দিন ১১ বছর ধরে সাতক্ষীরা জেলা কারাগারে বন্দি। বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ২০০৫ সালে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়।

>> সাতক্ষীরার ওমর আলীর ছেলে গিয়াস উদ্দিন ১১ বছর ধরে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনের মামলায় কারাবন্দি। ২০০৫ সালে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলাটি সাতক্ষীরার বিশেষ ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন।

>> ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর শিবনগরের বাসিন্দা ফয়েজ উদ্দিন মণ্ডলের ছেলে হায়দার আলী (৬২) ১৮ বছর ধরে কারাবন্দি। ১৯৯৮ সালে তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়। এ পর্যন্ত তাকে ৯৯ বার আদালতে হাজির করা হয়েছে।

>> মঠপাড়িয়ার মধ্য সোনাখালীর বাসিন্দা আব্দুল হাকিম রাজার ছেলে রফিকুল ইসলাম রাজা (৩২) ১৮ বছর ধরে পিরোজপুর জেলা কারাগারে বন্দি। ২০০৬ সালে তার বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা হয়। এ পর্যন্ত তাকে ৪২ বার আদালতে হাজির করা হয়েছে।