দুবাইতে ত্রিদেশীয় প্রতিবন্ধী ক্রিকেট টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া বাংলাদেশ দলের এই কোচ বলেন, শারীরিকভাবে সমস্যায় আক্রান্ত ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি খেলোয়াড়দের মুভমেন্ট সম্বন্ধে আরও ভালভাবে শিখতে পেরেছেন।
“এই খেলোয়াড়রা শারীরিকভাবে ডিফর্মড। তাদের ক্ষেত্রে টেকনিক প্রয়োগ করতে গেলে কত রকম মেকানিক্স কাজ করে, একটা কোচ বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে এটা দেখতে পারে। যা মূলধারার ক্রিকেটেও কাজে লাগবে।”
সাকিব, মুশফিকের মতো ক্রিকেটারদের কোচিং করানো মাসুদ প্রতিবন্ধী দলের সঙ্গে আছেন দুই বছর ধরে; পালন করছেন একাধারে প্রধান কোচ ও ম্যানেজারের দায়িত্ব।
তিনি জানান, প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের সঙ্গে কাজ করতে গিয়ে সমৃদ্ধ হয়েছে তার কোচিং জ্ঞানও। হাতে কলমে প্রয়োগ করতে পেরেছেন নিজের শেখা পুরনো অনেক টেকনিক।
“কোচের অন্যতম একটা কাজ হলো, ‘বায়ো মেকানিক্স’ জানা। আমরা বসে আছি, কীভাবে বসে আছি, সেন্টার অব গ্রাভিটি কোন দিকে ফল করছে, এলাইনমেন্ট ঠিক আছে কি-না; এটা বাঁকা হলে হাড়ে লাগবে, নাকি মাসলে লাগবে, এই যে মুভমেন্টের জায়গাগুলো দেখা।”
প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের নিয়ে কাজ করার সময় এগুলো ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ পেয়েছেন তিনি।
“ওরাতো ডিফর্মড মুভমেন্টেই বড় হয়েছে। এটাকে কীভাবে নিউট্রালাইজড করা যায়,” সেই চেষ্টাই চালিয়ে গেছেন মাসুদ।
ভারতে পোস্ট গ্র্যাজুয়েট করে যা শিখেছেন, প্রতিবন্ধীদের নিয়ে কাজ করতে গিয়ে বায়ো মেকানিক্স ‘বেশি শিখেছেন’ বলেও মন্তব্য এ শিক্ষকের।
ক্রিকেটকে শারীরিক প্রতিবন্ধীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি। এক্ষেত্রে ক্রিকেট বোর্ডকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, “বিষয়টা হলো, ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রকদের ভূমিকা ছাড়া এদেরকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া মুশকিল। রেডক্রস একটা সূচনা করে দিয়েছে, একটা ক্ষেত্র তৈরি করে দিয়েছে। এটাকে কীভাবে ক্যাপিটালাইজ করা যায়, সমাজে ছড়িয়ে দেওয়া যায়, গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া যায়..কাউকে সেটা করতে হবে। এ রকম একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারলে আসলে ওই অঙ্কুরেই বিনাশের মতো হবে।
“যতটুকু আমি জেনেছি, রেডক্রসতো আর স্পোর্ট সংস্থা না, সমাজে যারা বঞ্চিত হচ্ছে, তাদেরকে সুযোগ করে দিয়েছে। এখন আমরা যারা ক্রিকেটের সাথে যুক্ত, ভূমিকাটা আমাদের, তাদেরকে এগিয়ে আসতে হবে। প্রশিক্ষণ সংস্থা হিসাবে বিকেএসপি তাদের জায়গা থেকে করছে। কিন্তু মূল ভূমিকায় এগিয়ে আসতে হবে ক্রিকেট বোর্ডকে।”
সুযোগ পেলে প্রতিবন্ধী ক্রিকেটাররাও ভালো ফল এনে দিতে পারবে বলে বিশ্বাস তার।
তিনি জানান, দুবাই যাওয়ার আগে এই দল ৪ ম্যাচ খেলে দারুণ দুটি জয় পেয়েছে। প্রতিপক্ষ ছিল বিকেএসপির অনুর্ধ্ব ১৬ ও ১৭ দলকে মিশিয়ে একটা শক্তিশালী একটি দল।
প্রতিবন্ধী দলের এ সাফল্যকে ‘বড় ব্যাপার’ হিসেবেই দেখছেন বিকেএসপির এ প্রধান ক্রিকেট কোচ।
দুবাইয়ে প্রতিবন্ধী ক্রিকেট দলের সম্ভাবনা নিয়েও কথা বলেন মাসুদ।
“প্রস্তুতি ম্যাচগুলোতে গড়ে রান ১৩০’র মত ছিল। শেষ ম্যাচে ১৪৯ রান করেছে, ওইটাতেও ৭ রানে জিতেছি। একটা দুর্বলতা রয়ে গেছে, ১৬০-৭০ এ যাওয়া হচ্ছে না। আরও অভিজ্ঞতা দরকার, আরও ম্যাচ দরকার। এক সময় গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলে, ধরে রাখতে পারে না।”
টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১৬০ এর নিচে রান করলে সম্ভাবনা কমে যায় মন্তব্য করে কোচ ফলাফল নিয়ে আশাবাদের কথা জানান।
মাসুদ বলেন, “মূল বিষয়টা হলো, টিম স্পিরিট কাজ করছে। যখন আমার কোনো সুযোগ নাই, সব দরজা বন্ধ, তখন আমাকেই দরজা খুলতে হবে। খুলতে হলে সমাজে প্রতিষ্ঠা নিয়ে আসতে হবে। ক্রিকেটের মাধ্যমে আমি যদি সেটা করতে পারি, সেটাও একটা বিরাট ভূমিকা রাখবে। এভাবে চিন্তা করে এগিয়ে যেতে হবে।”
প্রতিবন্ধী ক্রিকেটারদের অবহেলার চোখে না দেখতেও সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি; বলেন, কিছু একটা করতে চাওয়ার তাড়নাই এ ক্রিকেটারদের এগিয়ে নিয়ে যাবে।