৩৩ বছর পর এম এন লারমার জন‌্য সংসদে শোক

প্রথম জাতীয় সংসদের সদস‌্য এম এন লারমা যখন মারা যান, তখন বাংলাদেশ সামরিক শাসনের কবলে, তারপর সাতটি সংসদ বসলেও উপেক্ষিত থেকেছিলেন পাহাড়িদের এই নেতা।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Sept 2016, 12:33 PM
Updated : 25 Sept 2016, 01:09 PM

মৃত্যুর প্রায় ৩৩ বছর পর দশম সংসদে এসে আনুষ্ঠানিকভাবে এন এন লারমার জন‌্য শোক জানাল বাংলাদেশের আইনসভা।

দশম সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনের শুরুতেই রোববার সংসদে যে শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী, তাতে এম এন লারমার নামও ছিল। সর্বসম্মতভাবে এই শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়।

সংসদ সচিবালয়ের গণসংযোগ শাখার পরিচালক এ এম মোতাহের হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সাবেক মাননীয় সংসদ সদস্যের মৃত্যুর পর সংসদে শোক প্রস্তাব গৃহীত হয়নি। বিষয়টি কর্তৃপক্ষের নজরে আনেন রাঙামাটির বর্তমান সংসদ সদস্য। এ জন্য শোক প্রস্তাবে তার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়।”

এম এন লারমা প্রতিষ্ঠিত জনসংহতি সমিতির নেতা, রাঙামাটির সংসদ সদস‌্য ঊষাতন তালুকদার তার নেতার জন‌্য শোক প্রস্তাব গ্রহণে গত বাজেট অধিবেশনের আগে একটি চিঠি দিয়েছিলেন। তখন শোক প্রস্তাবে নামটি অন্তর্ভুক্ত করা না হলেও এবার তা হয়েছে।

এম এন লারমা নামে খ্যাত মানবেন্দ্র নারায়ন লারমা ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম সংসদে স্বতন্ত্র সংসদ সদস‌্য নির্বাচিত হওয়ার আগে ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। স্বাধীনতার পর তিনি গণপরিষদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৩৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর রাঙামাটির নানিয়ারচরের বুড়িঘাট ইউনিয়নের মহাপুরম গ্রামে চাকমা পরিবারে জন্ম নেওয়া এম এন লারমা ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন রাজনীতি সচেতন। 

চট্টগ্রাম কলেজে পড়ার সময় বামপন্থি সংগঠন ছাত্র ইউনিয়নে যুক্ত ছিলেন তিনি; আবিষ্ট ছিলেন চীনের কমিউনিস্ট নেতা নেতা মাও সে তুংয়ে।  

১৯৬৬ সালে খাগড়াছড়ি জেলার দীঘিনালা উচ্চবিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে যোগ দিলেও পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামী পথই বেছে নেন তিনি। 

স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ১১টি নৃগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের নিয়ে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) গঠন করে পাহাড়িদের দাবি-দাওয়া সামনে আনেন তিনি।

রাষ্ট্রের জাতীয়তার প্রশ্নে আপত্তি থাকলেও ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর বাকশালে যোগ দিয়েছিলেন এম এন লারমা।

পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত‌্যাকাণ্ডের পর অন্তরালে চলে যান তিনি, গড়ে তোলেন সংগঠনের সামরিক শাখা ‘শান্তিবাহিনী’। পার্বত‌্যাঞ্চলে স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে তার সশস্ত্র সংগ্রামের জন‌্য বিচ্ছিন্নতাবাদী হিসেবেও চিত্রিত হন তিনি।  

 দাবির প্রশ্নে পাহাড়িদের এক করতে পারলেও সংগঠনের মধ‌্যে বিভেদ দূর করতে পারেননি এম এন লারমা। ১৯৮৩ সালের ১০ নভেম্বর খাগড়াছড়ির পানছড়ি উপজেলার খেদারছড়ার ধুম নামে স্থানে দলের অন‌্য পক্ষের হামলায় নিহত হন তিনি।

এম এন লারমা মারা যাওয়ার পর দলের হাল ধরেন তার ছোট ভাই ও শান্তিবাহিনীর প্রধান জ‌্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা, সন্তু লারমা নামেই যিনি পরিচিত।

তার নেতৃত্বে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৯৭ সালে সরকারের সঙ্গে জেএসএসের পার্ব‌ত‌্য শান্তি চুক্তি সই হয়। ওই চুক্তির আওতায় শান্তিবাহিনীর অস্ত্র সমর্পণের ফলে পাহাড়ে রক্তাক্ত সংঘাতের অবসান ঘটে।