বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টের প্রতিনিধির না আসা অনভিপ্রেত: সংসদীয় কমিটি

উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের বেতন-ভাতা ও পেনশন বাড়ানো সংক্রান্ত দুটি বিলের উপর আলোচনায় সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের অনুপস্থিতিকে ‘অনভিপ্রেত’ বলেছে আইন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 July 2016, 04:59 PM
Updated : 24 July 2016, 04:59 PM

রোববার ‘সুপ্রিম কোর্ট কোর্ট জাজেস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজেস) (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০১৬’ এর উপর সংসদীয় কমিটির প্রতিবেদন উপস্থাপনের সময় একথা সংসদে জানান কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত।

সংসদীয় কমিটির মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বিষয়টি না জেনে মন্তব্য করাটা ঠিক হবে না।”

সংসদে সুরঞ্জিত বলেন, “৭ম,৮ম,৯ম জাতীয় সংসদের বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রারগণ জাতীয় সংসদের কমিটির আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে উপস্থিত থাকলেও বর্তমানে কমিটিতে বিবেচনাধীন তাদের দুটি বিলের বিষয়ে মতামত জানাতে উপস্থিত হননি।

“বরং তারা রহস্যজনক কারণে ভিন্নমত পোষণ করেছেন। এর ফলে কমিটিতে বিল দুটো পরীক্ষায় জটিলতার সৃষ্টি হয় এবং বিল দুটি পরীক্ষান্তে রিপোর্ট প্রদানে বিলম্ব হয়। কমিটিতে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল না আসাকে কমিটি অনভিপ্রেত মনে করছে।”

সংসদের এক পদক্ষেপকে ‘অবৈধ’ বলে হাই কোর্টের এক রায়কে কেন্দ্র করে হৈ চৈয়ের মধ্যে গত গত ৫ মে বিচারপতিদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর বিলটি সংসদে তোলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তখন তা পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দিতে সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

এছাড়া গত বছরের জুন মাসে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের পেনশন বাড়াতে ‘সুপ্রিম কোর্ট জাজেস (লিভ, পেনশন অ্যান্ড প্রিভিলেজ) (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০১৫’ সংসদে তোলা হয়। বিলটি বর্তমানে পাসের অপেক্ষায় রয়েছে।

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে নিতে সংবিধান সংশোধনকে ‘অবৈধ’ বলে হাই কোর্ট রায় দেওয়ার পর সংসদ সদস্যরা ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন।

বিল উপস্থাপনের সময় বক্তব্যে সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত রাষ্ট্রের তিন অঙ্গ সংসদ, বিচার বিভাগ ও শাসন বিভাগকে মতভেদ ভুলে গণতন্ত্রের স্বার্থে নিজ নিজ দায়িত্ব সঠিকভাবে পালনের উপর গুরুত্ব দেন।

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত (ফাইল ছবি)

গণতন্ত্র চর্চার ইতিহাস তুলে ধরে প্রবীণ এই রাজনীতিক বলেন, “সহনশীল মনোভাব নিয়ে কার্যকরী বাস্তবতাকে সামলিয়ে অগ্রসর হতে পারলেই মঙ্গল আসবে, অন্যথায় আমরা গণতন্ত্রের ভিত শক্ত করতে পারব না।

“এ জন্য যে জিনিসটি দরকার সেটা হলো রাষ্ট্রীয় তিনটি অঙ্গকে তাদের মধ্যে মতভেদ ভুলে জনগণের স্বার্থকে মাথায় রেখে স্ব স্ব জায়গা হতে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা।”

বিচারপতিদের বেতন-ভাতা সম্পর্কিত বিল দুটি নিয়ে গত জুন মাসের ১৫ ও ২৮ তারিখ বৈঠক করে সংসদীয় কমিটি।

সুরঞ্জিত বলেন, “সংসদীয় স্থায়ী কমিটির আমন্ত্রণে সাড়া না দিয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট হতে মাননীয় স্পিকার আপনার নিকট একটা পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। ‍আমি মনে করি এটার কোনো দরকার ছিল না।

“কেননা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটিগুলো সংসদ সচিবালয়ের সহায়তায় কাজ করলেও মাননীয় সংসদ নেতার পক্ষে মাননীয় চিফ হুইপের প্রস্তাবক্রমে সংসদে গঠিত হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে মাননীয় সংসদ নেতা একদিকে যেমন নির্বাহী অন্যদিকে তিনি সংসদেরও প্রধান।”

সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের সুযোগ সুবিধা সম্পর্কিত বিল দুটির উপর প্রতিবেদন দিতে দেরির বিষয়টি স্পিকারের পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয় বলেও জানান সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত।

তিনি বলেন, “বিষয়টি তিনি (প্রধানমন্ত্রী) তাৎক্ষণিকভাবে বিবেচনায় নিয়ে উভয় পক্ষের মতামত ধারণ করে এবং বিষয়টি উত্তরণ ও সরল সমাধানের জন্য দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তার এই পদক্ষেপের প্রেক্ষিতে এবং সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত অন্যান্য ব্যক্তিগণের মত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিগণের বর্ধিত সম্মানী ও ভাতা অবিলম্বে প্রদান করা প্রয়োজন। এ বিবেচনায় এ কমিটি আজ বিলটির উপর সংসদে রিপোর্ট পেশ করছে।”

সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে ভবিষ্যতে কমিটির প্রয়োজনে পাবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন করেন সুরঞ্জিত।