বিরোধিতার মধ্যে বিচারকদের বেতন বাড়ানোর বিল সংসদে

সংসদের এক পদক্ষেপকে ‘অবৈধ’ বলে হাই কোর্টের এক রায়কে কেন্দ্র করে বিরোধী দলের সদস্যদের বিরোধিতার মধ্যে উচ্চ আদালতের বিচারকদের বেতন-ভাতা দ্বিগুণ করতে আইন সংশোধনের প্রস্তাব আইনসভায় উঠেছে।

সংসদ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 5 May 2016, 01:28 PM
Updated : 5 May 2016, 02:08 PM

জাতীয় পার্টির সদস্যদের হৈ চৈ-এর পর ওয়াকআউটের মধ্যে বৃহস্পতিবার ‘সুপ্রিম কোর্ট কোর্ট জাজেস (রেমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলেজেস) (অ্যামেন্ডমেন্ট) বিল-২০১৬’ সংসদে উত্থাপন করেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

এরপর বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। কমিটিকে সময় দেওয়া হয়েছে ৯০ দিন।

বৃহস্পতিবার সংসদে এই বিলটি উত্থাপনের আগেই সংবিধানের ষোড়শ সংশোধন অবৈধ বলে দেওয়া হাই কোর্টের রায় নিয়ে আলোচনা ওঠে।

বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা আগের মতোই সংসদের হাতে আনতে ২০১৪ সালে সংসদ সংবিধানের এই সংশোধন পাস করেছিল। তখন নয় আইনজীবী তার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে আদালতে যান। তাদের আবেদনে বৃহস্পতিবার রায় হয়।

সংসদ অধিবেশনের শুরুতেই জাতীয় পার্টির সদস্যরা ওই রায়ের সমালোচনা করেন। এই রায় আপিলে টিকবে না বলে আশ্বস্ত করে আইনমন্ত্রী বিচারপতিদের বেতন-ভাতা বাড়ানোর বিলটি উত্থাপন করতে গেলে তারা হৈ চৈ শুরু করেন।

জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন বাবলু বলেন, “তারা (বিচারক) যদি জাতীয় সংসদের আইন বাতিল করতে পারে, তাহলে তো তারা (বিচারপতি) নিজেরাই নিজেদের বেতন-ভাতা বাড়িয়ে নিতে পারেন।

“আজকে যে রায় দিয়েছে, তা অপমানজনক। যে রায় দিয়ে তা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত বিলটা স্থগিত করে সংসদের প্রতি সম্মান দেখানো হোক।”

জাতীয় সংসদের ফাইল ছবি

এরপরও আইনমন্ত্রী বিল উত্থাপনের উদ্যোগ নিলে বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা ওয়াকআউট করেন।

বিল উত্থাপনের সময় আনিসুল হক বলেন, “বিচারপতিরা অবিবেচক হতে পারেন। সংসদ অবিবেচক না। যে রায় লিখুক না কেন, যে রায় দিক না কেন ... আমরা হীনমন্যতার শিকার হব না। আমরা উদারতা দেখাব।”

বিলটি আইনমন্ত্রী উত্থাপনের পর জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্যরা পুনরায় অধিবেশন কক্ষে ফিরে আসেন।

দ্বিগুণ হচ্ছে বেতন

রাষ্ট্রপতি-প্রধানমন্ত্রী এবং সরকারি চাকুরেদের মতো উচ্চ আদালতের বিচারকদের বেতন-ভাতাও দ্বিগুণ হচ্ছে।

বিলটি উত্থাপণের কারণ ব্যাখ্যা করে আইনমন্ত্রী বলেন, “বর্তমান জীবন যাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি, মূ্ল্যস্ফীতি এবং দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটসহ সরকারি কর্মচারীদের জন্য ৮ম বেতন স্কেল ঘোষণা করার কারণে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি, আপলি বিভাগ এবং হাই কোর্ট বিভাগের বিচারকদের জন্য সময়োপযোগী বেতন ভাতাদি নির্ধারণ করা প্রয়োজন।”

প্রধান বিচারপতির বেতন ৫৬ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা, ব্যয় নিয়ামক ভাতা ৭ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১২ হাজার টাকা, ডমেইস্টিক এইড ভাতা এক হাজার ৬২৫ থেকে বাড়িয়ে পাঁচ হাজার টাকা, কার এলাউন্স (অফিসিয়াল গাড়ি সরবরাহের পূর্ব পর্যন্ত ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে) ১৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা, (অফিসিয়াল গাড়ি সরবরাহের পূর্ব পর্যন্ত ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার না করলে) এক হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

আপিল বিভাগের বিচারপতিদের বেতন ৫৩ হাজার একশ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক লাখ পাঁচ হাজার টাকা, ব্যয় নিয়ামক ভাতা পাঁচ হাজার থেকে বাড়িয়ে আট হাজার ডমেস্টিক এইড ভাতা এক হাজার ৪৬৫ থেকে বাড়িয়ে সাড়ে চার হাজার টাকা; রেসিডেন্স অ্যালাউন্স (অফিসিয়াল বাসা বরাদ্দের পূর্ব পর্যন্ত) ২৬ হাজার ছয়শ টাকা বাড়িয়ে ৫০ হাজার ছয়শ টাকা, কার এলাউন্স (অফিসিয়াল গাড়ি সরবরাহের পূর্ব পর্যন্ত ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে) ১৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা, (অফিসিয়াল গাড়ি সরবরাহের পূর্ব পর্যন্ত ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার না করলে) এক হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

হাই কোর্ট বিভাগের বিচারপতিদের বেতন ৪৯ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৫ হাজার টাকা, ব্যয় নিয়ামক ভাতা তিন হাজার থেকে বাড়িয়ে পাঁচ হাজার টাকা,  ডমেস্টিক এইড ভাতা এক হাজার তিনশ থেকে বাড়িয়ে চার হাজার টাকা, রেসিডেন্স অ্যালাউন্স (অফিসিয়াল বাসা বরাদ্দের পূর্ব পর্যন্ত) ২৬ হাজার ৬০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার ৬০০ টাকা, কার এলাউন্স (অফিসিয়াল গাড়ি সরবরাহের পূর্ব পর্যন্ত ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহারের ক্ষেত্রে)  ১৫ হাজার থেকে বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা, (অফিসিয়াল গাড়ি সরবরাহের পূর্ব পর্যন্ত ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার না করলে) এক হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে।

প্রধান বিচারপতিসহ সব বিচারপতিরা বছরে দু’বার মূল বেতনের সমান উৎসব ভাতা এবং ২০ শতাংশ বাংলা নববর্ষ ভাতা পাবেন বলে বিলে বলা হয়েছে।