ট্যানারি: পরিবেশের ক্ষতিপূরণের আদেশ স্থগিত

হাজারীবাগ থেকে না সরানো পর্যন্ত ১৫৪ ট্যানারিকে প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার যে আদেশ হাই কোর্ট দিয়েছিল, তা স্থগিত করেছে চেম্বার আদালত।

সুপ্রিম কোর্ট প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 June 2016, 07:10 AM
Updated : 28 June 2016, 04:25 PM

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়ার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যানের করা এক আবেদন শুনে মঙ্গলবার অবকাশকালীন চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী হাই কোর্টের আদেশ ১৭ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করে দেন।

ওইদিনই  বিষয়টি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য তালিকায় আসবে বলে আদেশে জানান তিনি।

উচ্চ আদালতের নির্দেশনার পরও যেসব ট্যানারি সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে সরানো হয়নি, সেগুলোর তালিকা শিল্প সচিব গত ১৬ জুন বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের হাই কোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করলে ক্ষতিপূরণের ওই আদেশ আসে।

ক্ষতিপূরণের ওই অর্থ সঠিকভাবে দেওয়া হচ্ছে কি না- তা তদারকির দায়িত্ব দেওয়া হয় শিল্প সচিবকে। তাকে এ বিষয়ে ১৭ জুলাই প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

পাশাপাশি হাজারীবাগের ট্যানারি বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় ফেলে পরিবেশের কী পরিমাণ ক্ষতি প্রতিদিন করা হচ্ছে- তা নিরূপণ করতে বলা হয় পরিবেশ সচিবকে। তাকেও ১৭ জুলাই প্রতিবেদন দিতে বলে হাই কোর্ট।

জরিমানার আদেশে স্থগিতাদেশ চেয়ে দুই সংগঠনের চেয়ারম্যান সোমবার আবেদন করলে মঙ্গলবার তা শুনানির জন্য ওঠে। 

চেম্বার আদালতে আবেদনকারীপক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী। অপরপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ।

মনজিল মোরসেদ পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আদালত ক্ষতিপূরণ প্রদানের আদেশ স্থগিত করেছেন। তবে হাজারীবাগের ট্যানারি বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় ফেলে পরিবেশের কী পরিমাণ ক্ষতি প্রতিদিন করা হচ্ছে- তা নিরূপণ করে পরিবেশ সচিবকে যে প্রতিবেদন দিতে বলেছেন তা বহাল রয়েছে।”

হাই কোর্ট ২০০১ সালে এক রায়ে হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি শিল্প সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়।  এরপর ২০০৯ সালের ২৩ জুন আরেক আদেশে ট্যানারি সরানোর জন্য ২০১০ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় বেঁধে দেওয়া হয়।

সরকারপক্ষের আবেদনে ওই সময়সীমা কয়েক দফা বাড়ানোর পরও ট্যানারি স্থানান্তরের আদেশ বাস্তবায়িত না হওয়ায় ২০১৪ সালের ১৫ এপ্রিল হাই কোর্ট আদালত অবমাননার রুল জারি করে।

এর ধারাবাহিকতায় শিল্প সচিব আদালতে হাজির হয়ে জানান, বার বার তাগিদ দেওয়ার পরও দশটি প্রতিষ্ঠান হাজারীবাগ থেকে সাভারের চামড়া শিল্প নগরীতে কারখানা সরানোর পদক্ষেপ নেয়নি। ওই তথ্যের ভিত্তিতে আদালত দশ ট্যানারি মালিকের বিরুদ্ধে আদালত অবমানার রুল দেয় এবং পরে তাদের তলব করে।

এদিকে ‘হাজারীবাগ ট্যানারি মুক্ত হতে আরও দুই বছর!’ ও ‘নেতাদের ট্যানারির কাজ এগোয়নি’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সেগুলো যুক্ত করে নতুন একটি আবেদন করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ।

তাদের আবেদনেই গত ১৩ এপ্রিল নতুন করে ট্যানারির তালিকা দাখিলের নির্দেশ দেয় হাই কোর্ট। রাজধানীর হাজারীবাগে যেসব ট্যানারি কারখানা কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তার নাম ও ঠিকানাসহ বিস্তারিত বিবরণ জমা দিতে বলা হয় শিল্প সচিবকে।

শিল্প সচিবের প্রতিবেদনে দেখা যায়, হাজারীবাগের ১৫৫টি ট্যানারি কারখানার মধ্যে কেবল রিলায়েন্স ট্যানারি লিমিটেড (ইউনিট-২) কারখানা স্থানান্তর করেছে; অন্যগুলো প্রক্রিয়াধীন।

বাকি ওই ১৫৪টি কারাখানাকেই পরিবেশ দূষণের ক্ষতিপূরণ হিসেবে ট্যানারি না সরানো পর্যন্ত প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা করে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা দিতে নির্দেশ দিয়েছিল হাই কোর্ট।

দুই পক্ষের যুক্তি

হাই কোর্টের আদেশ স্থগিতের আবেদনের বিষয়ে ব্যারিস্টার মোহাম্মদ মেহেদী হাসান চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, সাভারে চামড়া শিল্প এলাকার জন্য রিকভারি ইউনিট, ড্যাম্পিং ইয়ার্ড, স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট, পাওয়ার জেনারেশন সিস্টেম ও সলিড ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের কাজ পুরো শেষ হয়নি। সরকারের সঙ্গে হওয়া সমঝোতা স্মারক অনুসারে ব্যাংকিং সুবিধাও নিশ্চিত হয়নি। এমনকি ভূমির নিবন্ধনও হয়নি।

এ অবস্থায় ১৬ জুন হাই কোর্টের দেওয়া আদেশ বাস্তবায়ন ‘সম্ভব নয়’ বলে ওই আদেশ স্থগিত চাওয়ার কথা জানান মেহেদী হাসান চৌধুরী।

অন্যদিকে মনজিল মোরসেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ট্যানারি স্থানান্তরের বিষয়ে ২০১৩ সালের পর হাই কোর্টের আদেশ বাস্তবায়নের জন্য আর সময় বাড়ানো হয়নি। এ হিসেবে তারা ‘প্রতিনিয়ত আদালত অবমাননা’ করছে।

“আদালত অবমাননার মামলায় সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদ অনুসারে রায় বাস্তবায়নের জন্য হাই কোর্ট ক্ষতিপূরণ দিতে আদেশ দিয়েছে। ট্যানারিগুলো শত শত কোটি টাকার ব্যবসা করছে, ওই অর্থ দেওয়া তাদের জন্য অসম্ভব নয়।”