শিশুটিকে ভর্তি করতে হবে রেসিডেনসিয়াল মডেলকে, দিতে হবে ক্ষতিপূরণও

তৃতীয় শ্রেণিতে জানুয়ারিতে ভর্তি হতে না পারা এক শিশুকে ভর্তি করতে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের অধ্যক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে আদালত, সেই সঙ্গে শিশুটির অভিভাবককে ক্ষতিপূরণ হিসেবে এক লাখ টাকা দিতেও বলা হয়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2016, 05:55 PM
Updated : 31 May 2016, 05:55 PM

শিশুটির বাবা মো. ফখরুদ্দিনের করা একটি আবেদনের শুনানি নিয়ে মঙ্গলবার বিচারপতি সৈয়দ মোহাম্মদ দস্তগীর হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম সাহিদুল হকের হাই কোর্ট বেঞ্চ এ রায় দিয়েছে।

আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৬ সেশনে তৃতীয় শ্রেণিতে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিয়েছিল ওই শিশুটি। ফল প্রকাশের পর আসন আসনের বিপরীতে একশ জনকে ভর্তি করা হয়। বাদ পড়ে শিশুটি।

কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেও ফল না পেয়ে ফখরুদ্দিন হাই কোর্টে রিট আবেদনটি করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৩ এপ্রিল হাই কোর্ট রুল দেয়। তাতে আবেদনকারীর সন্তানকে ভর্তিতে নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছিল।

পরে শিশুটিকে ভর্তির নির্দেশনা চেয়ে সম্পূরক আবেদন করেন তার বাবা। এসবের উপর শুনানি শেষে মঙ্গলবার হাই কোর্ট রায় দেয়।

রিট আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হাবিবুল ইসলাম ভূইয়া ও আইনজীবী মো. মতিউর রহমান। অন্যদিকে কলেজের অধ্যক্ষের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী জহুরুল ইসলাম মুকুল ও এস এম আব্দুর রউফ। রাষ্ট্রপক্ষে উপস্থিত ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়।

মতিউর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, রেসিডেনসিয়াল মডেলে কলেজের নীতিমালায় আছে কারও একটি সন্তান ওখানে পড়লে, আরেকটি সন্তান থাকলে তার ন্যূনতম যোগ্যতা থাকলে সেও ভর্তির সুযোগ পাবে। ওই শিশুটির বড় ভাই বিদ্যালয়টিতে নবম শ্রেণিতে পড়ে। কিন্তু সে ভর্তির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়।

“পরে বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারি শিশুটির ন্যূনতম যোগ্যতা ছিল, তখন অধ্যক্ষের কাছে লিখিত আবেদন করা হলেও জবাবে অধ্যক্ষ জানান, শিশুটির ভর্তির যোগ্য নম্বর নেই।”

গত ২২ ডিসেম্বর কলেজ কর্তৃপক্ষ জানায়, ৫০ নম্বরের পরীক্ষায় পাস মার্ক হবে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ২৮, এডুকেশন কোটায় ৩০, স্টাফ কোটায় ২০, সাধারণ কোটায় ৩২।

রিট আবেদনকারীর আইনজীবী মতিউর বলেন, “ফলাফল শিটে দেখা যায়, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় আবেদন করা শিক্ষার্থীকে নির্ধারিত ২৮ মার্ক না পাওয়া সত্ত্বেও স্টাফ কোটায় ভর্তি করা হয়। এমনকি কোনো কোটা উল্লেখ না করে দরখাস্ত করা আরেক শিক্ষার্থীকে ২৭ নম্বর পাওয়ার পরেও কোনো কোটা ছাড়াই ভর্তি করা হয়েছে।

“শিশুটি পরীক্ষায় ৩০.৫ নম্বর পায়। নীতিমালা অনুসারে স্টাফ কোটার জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা ২০ নম্বর নির্ধারণ করা হলেও একটি সন্তান পড়লে অন্য সন্তান ভর্তির ক্ষেত্রে পাস মার্ক নির্ধারণ না করে তাদের সাধারণ কোটার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে, এটি বৈষম্যমূলক।”

তিনি বলেন, “ভর্তির যোগ্যতা সত্ত্বেও জানুয়ারিতে ভর্তি হওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ায় শিশুটির জীবন থেকে পাঁচটি মাস চলে গেছে। এ দিক বিবেচনা করে হাই কোর্ট ক্ষতিপূরণ হিসেবে কলেজের অধ্যক্ষকে সাত দিনের মধ্যে শিশুটির বাবাকে এক লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দিয়ে অবিলম্বে তাকে ভর্তি করতে নির্দেশ দিয়েছেন।”

অন্যদিকে অধ্যক্ষের কৌঁসুলি জহুরুল ইসলাম মুকুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “শিশুটি সাধারণ কোটায় ভর্তির জন্য নির্ধারিত ৩২ নম্বর পায়নি।

“যে দুটি প্রসঙ্গ আবেদনকারীপক্ষ উপস্থাপন করেছে, তা শুধু তালিকায় এন্ট্রি করার সময় ছাপায় ভুল। হাই কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে।”