উঠে যাচ্ছে পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা

প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ায় পঞ্চম শ্রেণিতে সমাপনী পরীক্ষা না নেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 May 2016, 11:17 AM
Updated : 31 May 2016, 11:31 AM

তবে মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা চালু হওয়ায় তা বিলুপ্তের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তও মন্ত্রিসভা থেকেই নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার।

তিনি মঙ্গলবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা চাই প্রাথমিক সমাপনী একটি হবে, আর তা অষ্টম শ্রেণিতে। অষ্টম শ্রেণির পরীক্ষা শেষে আমরা শিক্ষার্থীদের সনদ দেব।”

প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা চালুর পর ক্ষুদে শিশুদের এই ধরনের প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মুখে ঠেলে দেওয়ায় তা নিয়ে শিক্ষাবিদদের অনেকে আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। অভিভাবক সংগঠনের পক্ষ থেকেও তা বাতিলের দাবি জানানো হচ্ছে।  

জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে প্রাথমিক শিক্ষাকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত উন্নীত করে গত ১৮ মে তা প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্ত করে সরকার।

প্রাথমিকের আওতা সম্প্রসারণের কথা তুলে ধরে ফিজার বলেন, “সবার বিবেচনায় এটা আসবে যে, প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা একটাই থাকার কথা। আমরাও সেই বিবেচনা করব, প্রাথমিক সমাপনী একটাই হবে।

“প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার (অষ্টম শ্রেণির) নাম কী হবে, সেটা সরকারের বিবেচনার জন্য মন্ত্রণালয় মতামত পাঠাবে। পিএসসি বা অন্য নামে হতে পারে, এটা নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি, শিগগিরই এসব বিষয়ে মতামত মন্ত্রিসভায় পাঠানো হবে।”

প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে এই রকম বহু কর্মসূচি পালিত হয়েছে (ফাইল ছবি)

মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্তে ২০০৯ সালে পঞ্চম শ্রেণিতে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষার প্রচলন শুরু হয়। অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য আয়োজন করা হয় জেএসসি পরীক্ষা।

মন্ত্রী ফিজার বলেন, “যেহেতু মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত হয়েছিল তাই উভয় মন্ত্রণালয়ের (শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা) একটি মতামত সেখানে (মন্ত্রিসভায়) যাবে। সমাপনী একটা, না দুটো হবে- মন্ত্রিসভা সেই সিদ্ধান্ত দেবে।

“তবে আমরা চাইব যে প্রাথমিকে যেন একটাই সমাপনী পরীক্ষা থাকে।”

চলতি বছর পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের সমাপনী পরীক্ষা হবে কি না- এ প্রশ্নে তিনি বলেন, “চেষ্টা করছি কত দ্রুত এটা (একটি সমাপনী পরীক্ষা রাখার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত) করতে পারি।

“এখনও ছয় মাস সময় আছে। এ বছরই যেন বাস্তবায়ন করতে পারি সেই চেষ্টা করব। এখন থেকে প্রস্তুতি নিলে এটা বাস্তবায়ন করতে পারব।”

এবারের প্রাথমিক সমাপনীর বিষয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত না হলে ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা অনিশ্চয়তায় পড়ার কথা মন্ত্রীকে বলা হলে তিনি বলেন, “ক্লাস ফাইভের পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, কিন্তু সেই পরীক্ষা না হলে তো কোনো ক্ষতি নেই, ভালো হয়ে তৈরি তো হবে।”

পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা বিলুপ্ত করে প্রাথমিক সমাপনী অষ্টম শ্রেণিতে নেওয়া হলেও তা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন শিক্ষা বোর্ডগুলোর মাধ্যমেই নেওয়া হবে বলে জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী।

“সরকার অভিন্ন, শিক্ষানীতির আলোকে সরকারই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ধীরে ধীরে বাস্তবায়ন পর্ব শুরু হয়েছে।”

প্রাথমিক শিক্ষা অষ্টম শ্রেণিতে উন্নীতের পর বাড়তি দায়িত্ব কী কী পালন করতে হবে, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় তার ‘গ্রাউন্ড ওয়ার্ক’ করছে বলেও জানান মন্ত্রী।

২০০৯ সালে প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষা চালুরে পরের বছর মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের জন্য নেওয়া হচ্ছে ইবতেদায়ি সমাপনী পরীক্ষা।

আগে পঞ্চম শ্রেণিতে আলাদা করে বৃত্তি পরীক্ষা নেওয়া হলেও প্রাথমিক ও ইবতেদায়ি সমাপনী চালুর পর থেকে এই পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের মধ্য থেকেই বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।

ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তরা পাবে নতুন বই

ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো মেরামতের পাশাপাশি ওইসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বই নষ্ট হয়ে গেলে তাদের নতুন বই দেবে সরকার।

ঝড়ে ক্ষয়ক্ষতি

মন্ত্রী ফিজার বলেন, “যত দ্রুত সম্ভব বই দেওয়া হবে। কতগুলো বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আর কতগুলো বই লাগবে সেই তালিকা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে চেয়ে পাঠানো হয়েছে।

“কতগুলো বই প্রয়োজন তার চাহিদা এলেই বই দেওয়া হবে। যদি মজুদ থেকেই বই দেওয়া সম্ভব হয় তাহলে দেওয়া হবে। আর নতুন করে ছাপানোর প্রয়োজন হলেও বই ছাপানো হবে।”

ঘূর্ণিঝড়ে ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বই ক্ষতিগ্রস্ত হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ওইসব শিক্ষার্থীদেরও নতুন বই দেওয়া হবে বলে জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী।

তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ে বিদ্যালয়গুলোর অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্থ হলে সেগুলো মেরামত করা হবে।