সোমবার বিকালে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘লেখক-শিল্পী-শিক্ষক-শিক্ষার্থী-সংস্কৃতি কর্মীবৃন্দ’ ওই সংহতি সমাবেশ আয়োজন করে।
সমাবেশে কুশপুতুলে আগুন দেওয়ার সময় আয়োজক পক্ষে সংগঠক রবীন আহসান বলেন, “শিক্ষক শ্যামল কান্তি ভক্তকে জন সম্মুখে অপমানের প্রতিবাদে আমরা ওসমান পরিবারের কুলাঙ্গার সেলিম ওসমানের প্রতীকী কুশপুত্তুলিকা দাহ করছি।”
“এতে তার কোনো চোখ নেই, কোনো কান নেই। কান না থাকায় তিনি একজন শিক্ষককে কানে ধরান এবং চক্ষুলজ্জা না থাকায় একজন শিক্ষককে অপমানিত করতে পারেন।”
১৩ মে ‘ধর্মীয় অনুভূতিতে’ আঘাত দেওয়ার অভিযোগে নারায়ণগঞ্জের পিয়ার লতিফ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে শ্যামল কান্তি পিটিয়ে জখম করে স্থানীয় একদল ব্যক্তি। এক পর্যায়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান তাকে কান ধরে উঠ-বস করতে বাধ্য করেন।
এর আগে সংহতি সমাবেশে প্রগতিশীল বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।
“একদিকে অর্থবিত্তের প্রভাব, অন্যদিকে আধিপত্য রক্ষায় শক্তির দাপট। ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে কেবল নিশ্চিদ্র অরাজকতা নয়, সমাজের ভেতরে সুপরিকল্পিতভাবে লুটেরা পরিস্থিতি তৈরি করা হয়েছে।”
তিনি বলেন, “আমরা গান গাইতাম একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি। এখন সেই ফুল শুধু পদদলিতই করা হয়নি, অপমানিতও করা হয়েছে। মানুষের অধিকার রক্ষার পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের ফুলকে বাঁচাতে আমরা এর প্রতিশোধ গ্রহণ করব।”
এসবের বিরুদ্ধে গ্রামে-গঞ্জে পাল্টা আঘাত হানতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান সিপিবি সভাপতি।
শিক্ষা বার্তা সম্পাদক অধ্যাপক এ এন রাশেদা বলেন, “একজন শিক্ষককে প্রকাশ্যে কান ধরিয়ে উঠ-বস করানোর ঘটনায় এমন ঘৃণা জন্মেছিল, তা নিয়ে কথা বলতে আমি পারিনি। তবুও আজকে এখানে আসায় কিছু বলতে হচ্ছে।”
নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে সেলিম ওসমানের অশ্রাব্য ভাষার টেলিফোন আলাপের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, “ফেসইবুকেএকটি নিউজে একটি অডিও পেলাম, যাতে লেখা ছোট বাচ্চাদের শোনা নিষেধ। আশপাশে কোনো ছোট বাচ্চাকে না দেখে ভাবলাম শুনে দেখি। আমি সেটাতে একটা টিপ দিলাম।
শিক্ষা আন্দোলনের এই নেত্রী বলেন, “ধর্ম অবমাননার কোনো প্রমাণ এখনও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। আসল কারণ ছিল, শ্যামল কান্তিকে প্রধান শিক্ষকের পদ থেকে সরিয়ে নিজেদের লোক বসানোর জন্য। সেটা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে পরিকল্পিতভাবে এমন একটি ঘটনা ঘটানো হলো।”
ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি বাকি বিল্লাহ’র সঞ্চালনায় সংহতি সমাবেশে অন্যদের মধ্যে সিপিবির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আহসান হাবিব লাবলু, জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফয়জুল হাকিম, কথাসাহিত্যিক অদিতি ফাল্গুনী, আইনজীবী খন্দকার আরিফুল হক, হাওর বাঁচাও আন্দোলনের সংগঠক জাকিয়া শিশির, যুব ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক শিশির চক্রবর্তী, চা শ্রমিকদের ভূমিরক্ষা সংহতির নেতা ইফতেখার আহমেদ তুষার বক্তব্য দেন।