মেলার ত্রয়োদশ দিনে উচ্ছ্বসিত তারুণ্যের পদচারণ সে কথাই বলছিল। ঋতুরাজকে বরণের উৎসব আর বইয়ের মেলা এদিন একাকার মিলেমিশে।
বাসন্তি সাজে আসা তরুণ-তরুণীর হাতে থাকা বইগুলোও পরিণত হয়েছিল সাজেরই অংশে।
আনুষ্ঠানিকভাবে শিশুপ্রহরের ঘোষণা না থাকলেও সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকায় শনিবার বইমেলা ফটক খুলে দেওয়া হয় সকাল ১১টায়। সকালের দিকে ক্রেতাদের তেমন আনাগোণা না থাকলেও বিকেলে পুরো এলাকা রূপ নেয় জনসমুদ্রে।
শুধু পাঠক আগতদের মাঝেই না, বসন্তের ছোঁয়া লেগেছিলো স্টলগুলোতেও। বিক্রয়কর্মীরাও সেজে এসেছিলেন বসন্তের রঙে।
মানুষের ব্যাপক সমাগমের সমানতালে বইয়ের বিক্রি বাড়ায় খুশির ঝিলিক দেখা গেছে প্রকাশকদের মুখেও।
বিকেলের দিকে মেলা প্রাঙ্গণে কথা হয় বাসন্তি শাড়ি পরে মেলায় আসা সিটি কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে। মেলার ভিড় ঠেলে অন্যপ্রকাশের স্টলের সামনে দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন তারা। সবার মাথায় ছিল গাঁদা ফুলের মুকুট, সঙ্গে রেশমি চুড়ি।
বিশেষ এই দিনে প্রত্যেকে প্রত্যেককে একটি করে বই উপহার দেওয়ার ‘চিন্তা’ করছেন বলে জানান তিনি।
শুধু অবন্তীদের এই দলটিই নয়, শনিবার পুরো মেলার চিত্র ছিল এমনই। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে মেলা ঘুরে গেছেন অনেকে, কিনেছেন বই। এ দিনের বিক্রিতে নিজেদের খুশির কথা জানিয়েছেন প্রকাশনা সংস্থা সংশ্লিষ্টরা।
“মানুষ বাড়ছে, বিক্রিও বাড়বে এটাই স্বাভাবিক,” বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন সময় প্রকাশনের স্বত্ত্বাধিকারী ফরিদ আহমেদ।
“বেচাকেনা যেমনই হোক, এখন মেলা পরিপূর্ণ। কারণ, বসন্ত আমাদের প্রাণের উৎসব। বিক্রির সঙ্গে একে মেলালে হবে না, উৎসবের এই পরিপূর্ণ আনন্দকে উপভোগ করতে হবে। আমরা সেটাই করেছি।”
বসন্ত আর বইয়ের সমন্বিত এই উৎসবের মধ্যে সকালে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ অবলম্বনে নির্মিত শিশুতোষ গ্রাফিক নভেল ‘মুজিব’- এর মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠান।
বিকেলে একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের রচনাবলীর পাঠ উন্মোচন অনুষ্ঠান। উৎস প্রকাশনী থেকে বের হয়েছে তার লেখা ১০ খণ্ডের এই সংকলন।
এ সময় অর্থমন্ত্রী ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন এমিরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, অর্থনীতিবিদ কাজী খলিকুজ্জামান আহমদ।
মুহিত বলেন, “আমি কখনো ভাবতে পারিনি আমার রচনাবলীর পাঠ উন্মোচন হতে পারে। কারণ আমার কতটি বই আছে, সেটা আমার জানা ছিল না।
“আমি বই লিখি কাজের ফাঁকে। কখনও কখনও সমসাময়িক বিষয় নিয়েও লিখি। যা পরবর্তীতে বই আকারে প্রকাশ হয়।”
তিনি আরও বলেন, “চলতি বইমেলায় ইউপিএল থেকে আমার ‘বাংলার ইতিহাস (খ্রিষ্টপূর্ব ৩৫০ থেকে ১৯৭৫)’ এবং চন্দ্রাবতী একাডেমি থেকে ছেলেবেলার গল্প নিয়ে ‘সোনালী দিনগুলি’ বের হবে। সেজন্য আমি বলতে পারি, এই রচনাবলী আরও বড় হবে।”
বিকেলে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে একসঙ্গে উন্মোচন করা হয় ১৮টি বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির বইয়ের মোড়ক।
বাংলাদেশ সায়েন্স ফিকশন সোসাইটির আয়োজনে বইগুলোর মোড়ক উন্মোচন করেন জনপ্রিয় শিশুসাহিত্যিক মুহম্মদ জাফর ইকবাল।
এ সময় তিনি বলেন, “বাংলাদেশের সাহিত্যে সর্বপ্রথম বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনির বই লিখেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ। এরপর অনেকেই লিখেছে। প্রতিনিয়ত এ ধরনের বইয়ের লেখক বাড়ছে। এটা আশার কথা। আশা করি, সামনের দিনগুলোতে আরও লেখক বাড়বে।”
মেলায় শনিবার নতুন বই এসেছে ১৩৫টি। বিকেলে মেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধচর্চা: অতীত থেকে বর্তমান’ শীর্ষক আলোচনা সভা।