পাহাড়ি গাঁয়ে ৪ ঘণ্টা বন্দি ছিলেন ওয়াসফিয়া

প্রথম বাংলাদেশি হিসাবে বিশ্বের সাত অঞ্চলের সাতটি সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় করা ওয়াসফিয়া নাজরীনের কাছে এভারেস্টের চেয়েও দুর্গম মনে হয়েছে কারস্তেনস পিরামিডকে।

নিউজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Nov 2015, 07:24 AM
Updated : 1 Dec 2015, 01:08 PM

ওশেনিয়া অঞ্চলের এই সর্বোচ্চ চূড়া থেকে ফেরার পথে ‘কুসংস্কারাচ্ছন্ন’ এক গ্রামে চার ঘণ্টা আটতে থাকতে হয়েছিল বাংলাদেশি এই অভিযাত্রীকে। শেষ পর্যন্ত চার হাজার ডলার দিয়ে তার মুক্তি মেলে।

কারস্তেনস জয়ের পথে ভয়ঙ্কর এসব অভিজ্ঞতার কথা বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তুলে ধরেছেন ওয়াসফিয়া।

গত ১৮ নভেম্বর স্থানীয় সকাল ১০টা ১৯ মিনিটে বাংলাদেশের পতাকা হাতে ওয়াসফিয়া কারস্তেনস পিরামিডে পৌঁছান। এর মধ্য দিয়ে প্রথম বাংলাদেশি হিসাবে তার বিশ্বের সাত অঞ্চলের সাতটি সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয়ের অভিযান শেষ হয়।

কারস্তেনস অভিযানে ৩৩ বছর বয়সী ওয়াসফিয়ার সঙ্গে ছিলেন ইন্দোনেশিয়ান বন্ধু জশুয়া নোয়া। তাদের চূড়ায় পৌঁছানোর খবর স্যাটেলাইট ফোনে বাংলাদেশে পৌঁছায় মঙ্গলার রাতে। 

ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়া প্রভিন্সে কারস্তেনস পর্বতমালায় ৪ হাজার ৮৮৪ মিটার উঁচু এই শৃঙ্গ স্থানীয়ভাবে পুঞ্চাক জায়া নামেও পরিচিত। গ্রামের পর গ্রাম হেঁটে, বিভিন্ন জাতি গোষ্ঠীর মানুষ আর সোনার খনিকে কেন্দ্র গড়ে ওঠা মাফিয়াদের বাধা টপকে কারস্তেনস পিরামিডে ওঠার গল্প বিবিসি বাংলাকে শুনিয়েছেন এভারেস্টজয়ী দ্বিতীয় বাংলাদেশি নারী ওয়াসফিয়া।

তিনি বলেন, “পুরো গ্রানাইট পাথরের পাহাড়টির একটি চূড়া থেকে অন্য চূড়ায় যেতে হয় দড়ির উপর দিয়ে হেঁটে।

“বিশ্বাস করেন, আর নাই করেন- কারস্তেনস পিরামিড আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে কঠিন ও দুর্গম পাহাড়। এভারেস্টের চেয়েও।”

পাহাড়ের বেসক্যাম্পে পৌঁছাতে ওয়াসফিয়াদের সঙ্গে দেখা হয় বিভিন্ন ‘কুসংস্কারাচ্ছন্ন ও হিংস্র’ জাতিগোষ্ঠীর মানুষের সঙ্গে।

পর্বত আরোহণ শেষ করে ফেরার পথে তেমনই একটি গ্রামের মানুষ তাদের আটক করে। এক বৃদ্ধের মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয় তাদের।

“গ্রামের মানুষের বিশ্বাস, বিদেশিদের আগমনের কারণেই ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। … এরপর তারা আমাদের ধরে নিয়ে যায়। তারপর চার ঘণ্টা সালিশ হয়। শেষ পর্যন্ত ওদের চার হাজার ডলার দিয়ে আমরা সেখান থেকে আসি।”

ওয়াসফিয়া জানান, ২২০ কিলোমিটার পথ হেঁটে কারস্তেনস পিরামিডের বেসক্যাম্পে যেতে হয়। সেই হিসেবে এভারেস্ট জয় করা অনেক সহজ বলে মনে হয়েছে এই অভিযাত্রীর কাছে।

“হিমালয়ে ওঠার সময় শেরপারা রাস্তা বানিয়ে দেয়। আপনি দড়ি ধরে ধরে উঠবেন। এখানে ও রকম কিছু নেই। সবকিছু নিজের করতে হয়। নিরাপদে পৌঁছাতে পারব কিনা সেটা নিয়ে সংশয় ছিল। সামিটের দিন আমি বাচ্চাদের মতো কাঁদছিলাম।”

কারস্তেনস পিরামিডের আগে ওয়াসফিয়া জয় করেন আফ্রিকার কিলিমানজারো, দক্ষিণ আমেরিকার আকোনকাগুয়া, এশিয়ার এভারেস্ট, অ্যান্টার্কটিকার ভিনসন ম্যাসিফ, ইউরোপের মাউন্ট এলব্রুস এবং উত্তর আমেরিকার ডেনালি চূড়া।

‘দুঃসাহসী অভিযানের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নে নিজের অঙ্গীকার ও কর্মতৎপরতার জন্য’ ওয়াসফিয়াকে ২০১৪ সালের অন্যতম বর্ষসেরা অভিযাত্রীর খেতাব দিয়েছিল ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক।