মেয়র পদে একক প্রার্থিতা নিয়ে বিরোধী শিবিরে শঙ্কা

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একটি দলের একাধিক প্রার্থীকে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ দিলেও দলীয় প্রতীকে পৌর নির্বাচনে সেই সুযোগ রাখেনি নির্বাচন কমিশন।

মঈনুল হক চৌধুরীবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 Nov 2015, 03:46 PM
Updated : 25 Nov 2015, 08:03 PM

পৌরসভায় মেয়র পদে একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে কেবল একজন প্রার্থীর মনোনয়নপত্রই জমা নেওয়ার বিধান রেখে বিধিমালা তৈরি করেছে ইসি। ফলে কারও মনোনয়নপত্র বাতিল হলে সেখানে ওই দলের কোনো মেয়র প্রার্থী থাকবে না।

এই বিধান রাখাকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতারা স্বাগত জানালেও এতে অন্য সন্দেহ দেখছেন বিএনপি নেতারা। তারা বলছেন, ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ ইসি এটাকে বিরোধী জোটের প্রার্থীকে বাদ দেওয়ার হাতিয়ার করতে পারে। 

দলীয় প্রতীকে প্রথম পৌর ভোটে সংসদ নির্বাচনের মতোই সুযোগ রাখার আহ্বান  জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান; যদিও তারা এখনও ভোটে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত এখনও নেননি।    

সংসদ নির্বাচনে একটি দলের অন্তত তিনজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সুযোগ পান। বাছাইয়ের পর প্রত্যাহারের শেষ সময় পর্যন্ত দলের প্রার্থী মনোনয়নের সুযোগ রয়েছে।

৩০ ডিসেম্বর ভোটের দিন রেখে মঙ্গলবার পৌর নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।

তখনই তিনি বলেন,পৌর মেয়র পদে একাধিক ব্যক্তিকে দল মনোনয়ন দিতে পারবে না। একাধিক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র জমা দিলে তা বাতিল বলে গণ্য হবে।

ইসির যুগ্মসচিব জেসমিন টুলী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান, নতুন নির্বাচন বিধি ও আচরণবিধির বিষয়টি উল্লেখ করে মেয়র পদে দলের মনোনয়নে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নাম পাঠাতে নিবন্ধিত ৪০টি দলকে চিঠি পাঠানো হয়েছে।

“সংসদে একাধিক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারলেও নিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দলের একাধিক ব্যক্তি মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারবে না পৌর মেয়র পদে,” বলেন তিনিও।

ঘোষিত ২৩৬ পৌরসভায় ৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমার শেষ দিন। তার আগে শনিবারের মধ্যে মেয়র পদে দলের প্রার্থী মনোনীত করার ক্ষমতাবান ব্যক্তিদের নাম রাজনৈতিক দলগুলোকে পাঠাতে হবে ইসিতে। 

দলের প্রত্যায়ন নিয়ে প্রার্থীরা ৩ ডিসেম্বরের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। অর্থাৎ ওই সময়ের মধ্যে মেয়র প্রার্থী চূড়ান্ত করে ফেলতে হবে দলগুলোকে।

সংসদ নির্বাচনে জোট শরিকদের প্রতীক ব্যবহার করতে দিতে পারে যে কোনো দল। তবে পৌর নির্বাচনে সেই সুযোগও থাকছে না।

পৌর নির্বাচনের এসব বিধানের সমালোচনা করে বিএনপি নেতা মাহবুবুর রহমান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংসদে তো একাধিক ব্যক্তি মনোনয়ন দিতে পারত, তখন বাছাইয়ে অন্তত একজন টিকে থাকলে দলের হয়ে লড়তে পারত। কিন্তু পৌর নির্বাচনে একজনই মনোনয়নপত্র দিতে পারলে ভোটে থাকা নিয়ে শঙ্কা বেড়ে গেল।”

“শেষ পর্যন্ত চূড়ান্ত প্রার্থী একজন থাকবে এটা ঠিক, কিন্তু বাছাইয়ের পর এ সুযোগ রাখলে ভালো হবে,”

মন্তব্য করে তিনি জানান, এনিয়ে দলীয় ফোরামে আলোচনা করবেন তারা।

তবে ইসির একক প্রার্থীর বিধিকে স্বাগত জানিয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “চূড়ান্তভাবে তো একজনই মনোনয়ন পাবে।

“সংসদের মতো না হলেও পৌর নির্বাচনে আগেই তা চূড়ান্ত করতে হবে আমাদের। এটা আরো ভালো হয়েছে বলে মনে করি।”

ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগেই প্রার্থী চূড়ান্ত হলে ‘মনোনয়ন বাণিজ্য’ কমবে। এতে দলের মনোনয়ন না পাওয়া প্রার্থীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ থাকবে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমও একক প্রার্থী মনোনয়নকে ভালো উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন।

“দল তো একজনকেই চূড়ান্ত করবে। এখন সময় বেশি না নিয়ে আগেই চূড়ান্ত করতে হবে,” বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন তিনি।

তবে এই বাম নেতা একইসঙ্গে বলেন, “মনোনয়ন বাণিজ্য কিংবা পেশি শক্তির ব্যবহার ও টাকার খেলা বন্ধে ইসির কোনো উদ্যোগ নেই।”

পৌর নির্বাচনে মেয়র পদে ১০০ ভোটারের সমর্থনসূচক ব্যক্তির তালিকা দিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারবে আগ্রহীরা। সাবেক মেয়রদের স্বতন্ত্র মেয়র পদে দাঁড়াতে সমর্থন তালিকার দরকার নেই।

সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্দলীয়ভাবে ভোট হবে।