রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মধ্যে সংযোগকারী ফুট ওভারব্রিজটির এমনই জীর্ণ দশা।
দেখে মনে হবে এই বুঝি ইট-সুরকি খসে হুড়মুড় করে ভেঙে পড়বে এই রাস্তা পারাপারের বিকল্প সেতু থেকে। তাই এখন আর এটি ব্যবহার নিরাপদ মনে করেন না পথচারীরাও।
অবশ্য সিটি করপোরেশন বলছে, বাহ্যিক দিক থেকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলেও কাঠামোগতভাবে এটিতে কোনো ঝুঁকি নেই।
ডিম্বাকৃতির এই ফুট ওভারব্রিজটির বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এটিতে কোন সিঁড়ি নেই; এমনভাবে তৈরি যেন হুইল চেয়ারসহ সহজে ওঠা যায়, যা প্রতিবন্ধী পথচারীদের জন্য বিশেষ সহায়ক।
নব্বইয়ের দশকে কয়েকটি প্রতিবন্ধী সংগঠন ও নাগরিক সমাজের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন অবিভক্ত সিটি করপোরেশন ১৯৯৩ সালে ওভারব্রিজটির নির্মাণ শুরু করে। দুপাশে প্রতিবন্ধীদের চলাচলের উপযোগী র্যাম্পসহ তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত দৃষ্টিনন্দন এ সেতুটি ১৯৯৭ সালে চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
কংক্রিটের তৈরি পিলারহীন এ স্থাপনাটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১০০ ফুট।
রোববার সরেজমিনে দেখা যায়, ওভারব্রিজটির মেঝের অংশ অক্ষত থাকলেও কার্নিশসহ এর বহিরাবরণ ও নিচের অংশ জীর্ণ হয়ে পড়েছে। ফাটল সৃষ্টি হয়েছে কয়েকটি জায়গায়, আছে গর্ত। ব্রিজের নিচের যে ফলস সিলিং আছে, তাও কোথাও কোথাও খসে পড়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুসতাকিম নাফি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “দেখেই মনে হয় ওভারব্রিজটি কখন না জানি ভেঙে পড়ে। এজন্য এ রাস্তায় নিয়মিত যাতায়াত করলেও এটি দিয়ে রাস্তা পার হই না।”
গত বর্ষা মৌসুমের পর থেকে ওভারব্রিজটির এই অবস্থা বলে জানালেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনের চা বিক্রেতা কেরামত।
তিনি বলেন, “অহন আর এডি আমরা ব্যবহার করি না। ডর লাগে, যদি ভাইঙ্গা পড়ে।”
মতিঝিল থেকে মোহাম্মদপুর চলাচলকারী রাজা সিটি বাস সার্ভিসের চালক মো. ইব্রাহিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা নিয়মিত এই রাস্তায় বাস চালাই। এই ওভারব্রিজের নিচে দিয়ে যাওয়ার সময় যদি জ্যামে আটকাতে হয়, তাহলে মনের মধ্যে বেশ আতঙ্ক কাজ করে; যদি ভেঙে যায়!”
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এক নম্বর অঞ্চলের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রকৌশলী তানভির আহমেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মূলত ওভারব্রিজটির মূল স্ট্যাকচারের বাহিরে সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য যে অংশ রয়েছে সেটি বৃষ্টির পানি জমে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।”
“ক্ষতিগ্রস্ত অংশগুলো যেন কারও মাথায় ভেঙে না পরে এ জন্য আমরাই দুর্বল অংশগুলো ভেঙে দিয়েছি। এর কারণে মূল স্থাপত্যের কোনো ক্ষতি হবে না। আর এটিকে সংস্কারের জন্য একটি প্রতিবেদন ইতোমধ্যে দেওয়া হয়েছে, আশা করি খুব শিগগির এটি সংস্কার করা হবে।”
দেখে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলেও এটিতে চলাচলে কোন ‘ঝুঁকি নেই’ বলে মন্তব্য করেন এই কর্মকর্তা।