তদন্তে প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ পাইনি: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

নিজে তদন্তে নেমে মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের কোনো প্রমাণ পাননি বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Oct 2015, 01:30 PM
Updated : 4 Oct 2015, 05:17 PM

রোববার মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে তিনি বলেন, “অভিযোগ পাওয়ার পর আমি নিজে ইনকোয়ারি করেছি। ইনকোয়ারি করে নিশ্চিত হয়েছি, সামান্যতম কোনো ফাঁক-ফোকর নেই। এর কোনো সুযোগও নেই। যে বিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছে, তা সঠিক নয়।

“স্বাধীন বিচার বিভাগের কাছে রিট আবেদন নিয়ে গেছে। সেটা হাই কোর্ট ও আপিল বিভাগে খারিজ হয়ে গেছে।”

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “পরীক্ষার দিন আমি অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেছি, সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছি, কেউ আমাকে প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করেনি। ফাঁস সত্যিই হয়ে থাকলে সেদিন করেনি কেন?”

ব্রিফিংয়ে এক সাংবাদিক বলেন, “প্রশ্নপত্র হোয়াটস অ্যাপ ও ফেইসবুকে শেয়ার হয়েছে।”

তদন্তে কোনো আইটি ফার্মের বা বিশেষজ্ঞের সহায়তা নেওয়া হয়েছে কি না তা জানতে চাইলে সরাসরি জবাব না দিয়ে এড়িয়ে যান মন্ত্রী।

প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে নতুন করে মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে যে আন্দোলন চলছে তার সমালোচনা করে নাসিম বলেন, “কিছু হলেই রাজপথে যাওয়া ফ্যাশন হয়ে গেছে।

“রাজপথে যেতে হলে যুক্তিতে আসতে হবে। রাজপথে দাঁড়িয়ে কোনো অযৌক্তিক দাবি আদায় সম্ভব নয়। এই আন্দোলনের মাধ্যমে যারা পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে, ভর্তি হচ্ছে, তাদেরকে অসম্মান করা হচ্ছে।”

ফের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলনে যারা সংহতি জানিয়েছেন তাদেরও সমালোচনা করেন মন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমি এখনো জাফর ইকবাল স্যার, সৈয়দ মকসুদ সাহেবকে বলছি- আপনারা সম্মানিত মানুষ। আপনারা আসুন, এসে আমার ডিজির সঙ্গে কথা বলুন। তারপর এ নিয়ে কথা বলুন। আপনারা না জেনে কেন কথা বলবেন? আপনাদের উচিত ছিল, এখানে এসে জিজ্ঞাসা করা।

“আমাকে পাওয়া যায়। আমাকে বললেন না। রাজপথে গিয়ে কথা বললেন। ফাও’র উপরে কথা বললেন।

“এরপরও এই সব সম্মানিত ব্যক্তিদের বলছি, আপনাদের চা’র দাওয়াত দিচ্ছি। আপনারা আসেন, আপনাদের সব প্রশ্নের জবাব দিবেন ডিজি সাহেব। এরপর আপনারা প্রশ্ন করেন। এটা ঠিক নয়, না জেনে কথা বলা দুঃখজনক।”

সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক দীন মো. নূরুল হক বলেন, “কেন্দ্র থেকে কেউ প্রশ্নপত্র অনলাইনে দিলে সেটাকে ফাঁস বলা যাবে না।”

তিনি বলেন, অধিদপ্তরের ডিজি হওয়া সত্ত্বেও প্রশ্নপত্রের (কনটেন্টের) সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।

“সকাল ১০টা বাজতে ১৫ মিনিট আগে আমরাই ৮৪ হাজার ছাত্র-ছাত্রীর নিকট প্রশ্ন ফাঁস করে দিয়েছি। প্রশ্ন দিয়ে দিয়েছি।”

হাজারের উপরে কক্ষে পরীক্ষা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “এখানে কারো যদি কোনো অসৎ উদ্দেশ্য থাকে, প্রতিটা কক্ষে ১০ থেকে ১২টি বা তার থেকে অতিরিক্ত প্রশ্ন থাকে।

“পরীক্ষা শুরুর ৫ মিনিট আগে এই প্রশ্ন বাইরে চলে যেতে পারে। সেটা হতে পারে, সেটা হলে পরে দেখা যাবে। কিন্তু ওইটাকে প্রশ্নপত্র ফাঁস বলা যাবে না।”

“আরেকটা হতে পারে, আজকাল মোবাইলে সাঁই সাঁই করে কয়েকটা ছবি তুলে ফেইসবুকে অনলাইনে দিয়ে দেওয়া যেতে পারে। পরেরদিন দিয়েও আগেরদিন শো করা যায়। ডিজিটাল সিস্টেমে সেটাও করা যায়। সেটা দেখতে হবে।”

যে সব এলাকায় প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ উঠেছে, সেই এলাকা থেকে ভালো মেডিকেলে চান্স পাওয়ার হার কম জানিয়ে তিনি বলেন, “রংপুর থেকে ঢাকা মেডিকেল, মিডফোর্ড ও সোহরাওয়ার্দীতে কম চান্স পেয়েছে। যেখানে যেখানে অভিযোগ উঠেছে, সেখানে সেখানে পারফরমেন্স পুওর।”

গত ১৮ সেপ্টেম্বর সরকারি-বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোর সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হয়। পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৮৩ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে ৪৮ হাজার ৪৪৮ জনকে যোগ্য জানিয়ে ফল ঘোষণা করা হয় ২০ সেপ্টেম্বর।

পরদিন থেকে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে পরীক্ষা বাতিলের দাবিতে দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ শুরু করেন ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের একাংশ। মাঝে তাদেরকে পুলিশের মারধর এবং কয়েকজনকে আটকের ঘটনাও ঘটে।

আন্দোলনরতদের উপর শক্তি প্রয়োগ সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “একদিন একটু ধাক্কাধাক্তি হয়েছে। এরপর আমি নিজে পুলিশ কমিশনারকে বলেছি, এরা কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রী। যেখানে বসতে চায়, ওদের বসতে দিয়েন। এটা ওদের গণতান্ত্রিক অধিকার। এরপর আর কোনো সমস্যা হয়নি।”

শনিবার দুপুরে রাজধানীতে যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মোড় শাহবাগে প্রায় পাঁচ ঘণ্টা অবস্থান করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এ সময় ওই এলাকায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যানজট তৈরি হয়।