গণভবনের সামনে দাঁড়ানো যুবকের ভাই গ্রেপ্তার

‘জমি দখলের’ প্রতিবিধানে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণে গণভবনের সামনে অবস্থান নেওয়া যুবকের ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

নিজস্ব প্রতিবেদকও নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 August 2015, 07:24 PM
Updated : 2 August 2015, 07:24 PM

রোববার রাতে বাড়িতে ঢুকে মারধরের পর র‌্যাব তার চাচাত ভাইকে ধরে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ করেছেন নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের পঞ্চমীঘাট আবুল কালাম আজাদ।

তবে র‌্যাব নির্যাতনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, সোহেল নামে ওই যুবককে মাদক রাখার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

‘ন্যায় বিচার চাই’- একটি কাগজে এই কথা লিখে রোববার সকালে ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাড়ির সামনে দাঁড়িয়েছিলেন আজাদ।

গণভবনের পশ্চিম পাশের ফটকের উত্তর পাশে শ’ খানেক গজ দূরে তিন ঘণ্টা অবস্থানের পর তিনি ফিরে যান। আজাদ বলেন, পুলিশ তাকে সরে যেতে বলেছিল বলে তিনি চলে আসেন।

এরপর রাতে পঞ্চমী ঘাট এলাকায় বাড়িতে র‌্যাব সদস্যরা অভিযান চালায় বলে আজাদ টেলিফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানান।

তিনি বলেন, “রাতে হঠাৎ র‌্যাব আমাদের বাড়িতে হানা দেয়। তারা আমাকে বেদম মারধর করে। আমার ভাই ও চাচাকে তারা ধরে নিয়ে যায়।”

পরে চাচাকে ছেড়ে দিলেও চাচাত ভাই সোহেলকে র‌্যাব গ্রেপ্তার করেছে বলে জানান আজাদ।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “যাকে ধরেছি, সে ইয়াবা ব্যবসায়ী।

“ওই যুবকের পকেট সার্চ করে ইয়াবা পেয়েছে আমার টিম। পরে তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আরও ইয়াবা পাওয়া গেছে। তার বাড়িতে প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনের উপস্থিতিতেই অভিযান চালানো হয়েছে।”

১০০টি ইয়াবা পাওয়ার পর সোহেলকে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

এই অভিযানের সঙ্গে আজাদের গণভবনের সামনে অবস্থানের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে দাবি করেন এই র‌্যাব কর্মকর্তা।

গণভবনের পাশে দাঁড়িয়ে আবুল কালাম আজাদ (রোববার সকালের ছবি)

“প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে কে প্ল্যাকার্ড নিয়ে মানববন্ধন করেছে, এই ঘটনার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই।”

আজাদের দাবি, স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি গ্রামের দরিদ্র কিছু মানুষের ৬০ থেকে ৭০ বিঘা জমি বালু দিয়ে ভরাট করে দখলের চেষ্টা করছেন। তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে জমির মালিকরা আক্রমণ ও হুমকির শিকার তারা।

র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক আনোয়ার লতিফ বলেন, “আমরা জমি-জমার কোনো সমস্যা সমাধান করতে যাইনি, তা আমাদের কাজও নয়। আমরা ইয়াবাসহ আসামিকে ধরতে গিয়েছিলাম।”

তবে আজাদ মনে করেন, র‌্যাবের এই অভিযানের পেছনে তার প্রতিবাদী ভূমিকাই কারণ। 

“সবাই যখন নীরব ছিল, আমি প্রতিবাদ করার চেষ্টা করেছি। এটাই কি আমার অপরাধ? আমি তো কিছু করিনি, শুধু চেয়েছি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার কথা পৌঁছে দিতে।”

বর্তমানে নিরাপত্তা সঙ্কটে ভুগছেন জানিয়ে তিনি বলেন, “আমি এখন কী করব ভাই? আমি কি ঢাকায় চলে আসব? আমি গরিব বলে কি প্রতিবাদও করতে পারব না।”

“আমার আর্জি প্রধানমন্ত্রীকে পৌঁছে দেন ভাই। আমার একটু সাহায্য করেন,” বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম প্রতিবেদককে বারবার অনুরোধ করতে থাকেন এই যুবক।

র‌্যাব কর্মকর্তা আনোয়ার লতিফ বলেন, “একজন সন্ত্রাসী যখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যায়, তখন তারা অনেক কিছুই বলে।”

রোববার সকালে গণভবনের পাশে প্ল্যাকার্ড হাতে আজাদকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে তার সঙ্গে কথা হয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের, তা নিয়ে একটি প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়।

গণভবনের সামনে কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেছিলেন, “আমি গরিব মানুষ। আমাদের কথা কেউ শোনে না। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার কথা পৌঁছে দিতে চাই। তিনি যদি চান, তাহলে আমিসহ গ্রামের গরিব মানুষরা উপকৃত হব।”

</div>  </p>