গণজাগরণের দাবি নিয়ে প্রশ্ন সাকার আইনজীবীর

যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর শাস্তি আপিলেও বহাল রাখতে গণজাগরণ মঞ্চের দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এই বিএনপি নেতার আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 July 2015, 10:57 AM
Updated : 28 July 2015, 02:09 PM

বিএনপি চেয়ারপারসনের এই উপদেষ্টা বলছেন, সর্বোচ্চ আদালতে বিচারাধীন অবস্থায় আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখার দাবি তোলা আদালত অবমাননার শামিল।

তবে এমনটা মনে করছেন না রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি। মাহবুবে আলমও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ছিলেন।

বুধবার সালাউদ্দিন কাদেরের আপিলের রায়ের আগে গত কয়েকদিন ধরে শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছে গণজাগরণ মঞ্চ, একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে দুই বছর ধরে রাজপথে সক্রিয় যারা।

সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী হিসেবে প্রভাবশালী রাজনীতিক সালাউদ্দিন কাদেরের মৃত্যুদণ্ডের রায় পরিবর্তনে ষড়যন্ত্রের আভাস পাওয়ার দাবি করে তা ঠেকাতে সবাইকে সক্রিয় হওয়ার আহ্বান আন্দোলনকারীদের।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ডের যে শাস্তি সালাউদ্দিনকে দিয়েছে আপিল বিভাগে তা বহাল থাকবে বলে প্রত্যাশা করছেন অ্যাটর্নি জেনারেল। অন্যদিকে খন্দকার মাহবুবের আশা, অব্যাহতি পাবেন আসামি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদেরের আপিলের রায় নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে বেশ আলোচনা চলছে। এর মধ্যেই রায়ের আগের দিন মঙ্গলবার সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দুই পক্ষের আইনজীবী।

খন্দকার মাহবুব হোসেন (ফাইল ছবি)

খন্দকার মাহবুব সাংবাদিকদের বলেন, তারা যে সাক্ষ্য প্রমাণ তুলে ধরেছেন, আপিল বিভাগের রায় তাদের পক্ষে আসবে বলে তারা আশা করলেও এক্ষেত্রে আদালতের উপর ‘চাপ’ সৃষ্টির প্রয়াস দেখছেন তারা।

“দেখা যাচ্ছে আদালতের উপর একটা চাপ সৃষ্টি করার জন্য বিভিন্ন রকম বক্তব্য এসেছে। গণজাগরণ মঞ্চ রাস্তায় নেমে এসে আসামির ফাঁসি দাবি করছে। বিচারাধীন একটি মামলায় সাজা কী ধরনের হবে, রাজপথে পুলিশের প্রটেকশন নিয়ে একটি বিশেষ গোষ্ঠী তা চাচ্ছে।”

“যে মামলাটি দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারের অপেক্ষায় আছে, সেখানে এই ধরনের আন্দোলন করা, আমরা মনে করি, এটা আদালত অবমাননার সমতুল্য। বিশ্বাস করি, সুপ্রিম কোর্ট এ ব্যাপারে কঠোর একটা মনোভাব নেবে।”

এটা আদালত অবমাননা মনে করেন কি না- প্রশ্ন করা হলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, “নিশ্চয়ই না।”

একাত্তরের বর্বরতার জন্য দায়ীদের শাস্তির দাবিতে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে আন্দোলনের কথা মনে করিয়ে দেন তিনি।

অ্যার্টনি জেনারেল মাহবুবে আলম (ফাইল ছবি)

জনগণের প্রত্যাশা তুলে ধরে মাহবুবে আলম বলেন, “যারা স্বাধীনতার সময় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যারা স্বাধীনতার পক্ষের লোক এবং আপামর জনসাধারণ; সবাই এটাই চাইবেন, ট্রাইব্যুনাল যে সাজা দিয়েছেন সেটিই যেন বহাল থাকে।”

এক্ষেত্রে অন্য দেশের নজির তুলে ধরে তিনি বলেন, “আমেরিকায় একজন কৃষ্ণাঙ্গ লোককে মেরে ফেলেছিল পুলিশ, এর বিচার হয়েছিল, রাস্তায় লোকজনও নেমে এসেছিল। বিচারের দাবিতে জনগণের সোচ্চার হওয়া, এটা শুধু বাংলাদেশের ব্যাপার না, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এটা হয়।”

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, বাইরে যাই ঘটুক না কেন, আদালত চাপমুক্তভাবেই বিচার করছে এবং রায় দিচ্ছে।   

“সব কয়জন যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারেই এই দাবি উঠেছে এবং যাকে ফাঁসি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে, দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে, তার ব্যাপারেও তো জনগণ চেয়েছিল ফাঁসি হোক। কাজেই..যদি এই সমস্ত কথা বলেন, সেটা তো কোনো বস্তুনিষ্ঠ কথা না।”

উল্টো বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে সালাউদ্দিন কাদেরের পরিবারের তৎপরতার কথাও তুলে ধরেন রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা।   

“ট্রাইব্যুনালের রায়কে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য একজন আইনজীবীকে দিয়ে তারা রায়ের কপি আগেই ইন্টারনেটে হয়ে গেছে মর্মে যে প্রপাগান্ডা চালিয়েছিল। কাজেই এই বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পক্ষ থেকে বিভিন্ন রকম অপকৌশল গ্রহণ করা হয়েছে। জনগণ এবং আপামর জনসাধারণ তাদের এই সমস্ত কার্যকলাপ সম্পর্কে জ্ঞাত আছে এবং তারা জানে।” 

সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী (ফাইল ছবি)

সালাউদ্দিন কাদেরের রায়ের আগে সুপ্রিম কোর্টের বিচারকদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নের মাধ্যমে চাপ তৈরির একটি প্রয়াসও চালানো হচ্ছে বলে অভিযোগ খন্দকার মাহবুবের।   

“এই রায়ের আগে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্যও একটি দৈনিক একটি বক্তব্য দিয়েছে, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।”

সালাউদ্দিন কাদেরের স্বজনদের সঙ্গে এক বিচারপতির একটি বৈঠক হয়েছে দাবি করে সম্প্রতি একটি দৈনিকে খবর আসে।

এই ধরনের খবরের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অ্যাটর্নি জেনারেল কয়েকদিন আগে বলেন, তিনি বিশ্বাস করেন না যে এই ধরনের কোনো বৈঠক হয়েছিল।

বিচারকদের কোনো বিষয়ে গণমাধ্যমে তাদের নিজেদের বক্তব্য প্রকাশের কোনো ব্যবস্থা নেই।    

চাপ সৃষ্টির নানা অভিযোগ তুললেও খন্দকার মাহবুব আশা প্রকাশ করেন, আপিল বিভাগে ন্যায়বিচার পাবেন তারা।

“আমরা মনে করি, আপিল বিভাগের উপর কোনো রকম চাপ সৃষ্টি করা সম্ভব নয়। এই গণজাগরণের যে দাবি এসব কিছু উপেক্ষা করে আদালত ন্যায়বিচারের স্বার্থে আমাদের আসামিকে এই মামলা থেকে খালাস দেবেন।”

অন্যদিকে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, “আমি প্রত্যাশা করি, ট্রাইব্যুনাল সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে যে দণ্ড দিয়েছে, সেটি বহাল থাকবে বলে আমার প্রত্যাশা।”