তিন দিন আগে এজবাস্টনে অস্ট্রেলিয়ার জন্য আনন্দধারা হয়ে এসেছিল বৃষ্টি। এবার সেটিই বেদনার বর্ষণ। আর বাংলাদেশের জন্য? বৃষ্টি যেন ফোঁটায় ফোঁটায় প্রাণের ছোঁয়া! ভেস্তে গেল ম্যাচ, টিকে রইল বাংলাদেশ।
নিশ্চিত হারের পথে থাকা ম্যাচে বাংলাদেশকে বাঁচাল বৃষ্টি। ওভালে পরিত্যক্ত ম্যাচ থেকে পাওয়া ১ পয়েন্টে এখনও চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে টিকে রইল বাংলাদেশ।
আগের ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে হারতে থাকা ম্যাচে অস্ট্রেলিয়াকে উদ্ধার করেছিল বৃষ্টি। ২ ম্যাচে ২ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা পড়ে গেল শঙ্কায়। শেষ ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ যে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ইংল্যান্ড!
ম্যাচ না হওয়ায় স্বস্তিই তুলে ধরছে বাংলাদেশের বাস্তবতা। যেমন খেলেছে দল, ওই ১ পয়েন্ট অনেক বড় পাওয়া। তামিম ইকবালের ব্যাটিং ছাড়া বাংলাদেশের পারফরম্যান্স ছিল এদিনের লন্ডনের আকাশের মতোই গুমোট।
ব্যাটিং ব্যর্থতায় প্রথম ইনিংসেই হারের পথে এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। গোটা ইনিংসটি এক খুঁটির ঘর। খুঁটির নাম তামিম ইকবাল।
তামিম একাই করলেন ৯৫ রান, অতিরিক্তসহ বাকি সবাই মিলে ৮৭। বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ১৮২ রানেই।
আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান তামিম এদিনও খেলেছেন দারুণ। শুধু সেঞ্চুরিটিই পেলেন না। হলো টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরির দারুণ কীর্তি।
আগে এক ম্যাচে ব্যবহৃত উইকেট পরে মন্থর হবে, ধরবে স্পিন, দুই অধিনায়কের ভাবনা ছিল সেটি। কিন্তু ব্যাটসম্যানরা যা করলেন, তাতে স্পিন ধরলেও বাংলাদেশ ম্যাচ ধরতে পারতো না।
মেঘলা আকাশ আর ঠাণ্ডা বাতাসে অস্ট্রেলিয়ান পেস আক্রমণ সামলানো চ্যালেঞ্জ ছিল বটে। তবে বাংলাদেশের টপ অর্ডারকে আসলে খুব চ্যালেঞ্জ জানাতে হয়নি। নিজেরাই বিলিয়ে এসেছেন উইকেট।
প্রথম ৫ ওভার কেটে গিয়েছিল নির্বিঘ্নেই। এরপরই জশ হেইজেলউডকে জায়গায় দাঁড়িয়ে আলসে খোঁচায় ক্যাচ দিলেন সৌম্য সরকার।
তিনে সুযোগ পেয়ে ক্যাচিং অনুশীলন করিয়েছেন ইমরুল কায়েস। ইনিংস তখন এগোচ্ছে শম্বুক গতিতে। জোড়া ধাক্কায় প্রচণ্ড সাবধানী তামিম। দলের পঞ্চাশ ছুঁতেই লেগে যায় ১৫ ওভার।
বড় ভরসা মুশফিকুর রহিমের শেষটাও হতাশার। ময়েজেস হেনরিকেসের বলে তার ব্যাট ছুঁয়ে প্যাডে লাগার পরও এলবিডব্লিউ দিয়েছিলেন আম্পায়ার। কিন্তু রিভিউ নিলেন না মুশফিক!
সাকিব আল হাসান উইকেটে যাওয়ার পরপরই চাবুক শটে চার মারেন কামিন্সকে। ১১ ওভার পর সেটি ছিল প্রথম বাউন্ডারি!
বাংলাদেশের সেরা সময়টা আসে তামিম-সাকিবের জুটিতেই। ১১ রানে ক্যাচ দিয়ে বেঁচে যাওয়ার পর সাকিব খেলছিলেন সতর্কতায়। সেই ভরসায় তামিম পান একটু ডানা মেলার সাহস। হেনরিকেসকে বেরিয়ে এসে কাভার দিয়ে ছক্কা মারার পর ওই ওভারেই বাউন্ডারি আরও দুটি।
আরেক পাশ থেকে চেপে ধরা ট্যাভিস হেডকেও টানা দু বলে ছক্কায় ওড়ান তামিম। কিন্তু বড় সর্বনাশও ওই ওভারেই। দু কদম বেরিয়ে এসে খেলার চেষ্টা করলেও সাকিবকে বিস্ময়করভাবে এলবিডব্লিউ দেন আম্পায়ার নাইজেল লং। রিভিউয়ে সেটি থেকে যায় আম্পায়ার্স কলে। হয়ত দশবারের নয়বারই এটি আউট দেবেন না কোনো আম্পায়ার।
এই ম্যাচের উইকেট বিবেচনায় একাদশে ফেরানো অ্যাডাম জ্যাম্পা তখনও বোলিংয়েই আসেননি। যখন এলেন, বাংলাদেশের বিপর্যয়ও আরও ধেয়ে এল।
বড় রানের আশা ততক্ষণে উড়ে গেছে, দুইশ ছোঁয়ার জন্যই দল তাকিয়ে তামিমের দিকে। কিন্তু তার দারুণ ইনিংসটিও শেষ হলো আক্ষেপে। ক্যারিবিয়ান পুলটা সবসময়ই দারুণ খেলেন, এদিনও খেলেছেন অসাধারণ। কিন্তু স্টার্কের বলে সেটির চেষ্টায়ই বল উঠে গেল আকাশে। ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ১১৪ বলে ৯৫।
নিজের মানের বিবেচনায় বেশ বিবর্ণই ছিলেন স্টার্ক। রক্তের স্বাদ পেয়েই তেতে উঠলেন। ওই ওভারেই দুটি গোলায় বোল্ড মাশরাফি বিন মুর্তজা ও রুবেল হোসেন। পরের ওভারে বোল্ড মেহেদী হাসান মিরাজও। ১ রানে তুলে নিলেন শেষ ৪ উইকেট!
এই রানেও বাংলাদেশের জয় অসম্ভব ছিল না। তবে সেটি কেবল ক্রিকেটীয় অনিশ্চয়তার ভরসায়। বাস্তবতার বিবেচনায় অস্ট্রেলিয়ার বাধা ছিল কেবল আবহাওয়া।
নতুন বলে মাশরাফি ও মুস্তাফিজ খারাপ করেননি। বেশ কয়েকবারই বিপাকে ফেলেছেন ডেভিড ওয়ার্নার ও অ্যারন ফিঞ্চকে। তবে আউট করা যায়নি তাদের। সুযোগমত দুজন বাড়িয়েছেন রানও।
রুবেল এসে প্রথম ওভারে ফিরিয়েছেন ফিঞ্চকে। তাতে প্রভাব পড়েছে সামান্যই। ছুটছিলেন ওয়ার্নার ও স্মিথ।
বাংলাদেশের ড্রেসিং রুম নিশ্চয়ই তখন থেকেই তাকিয়ে ছিল আকাশের দিকে। শেষ পর্যন্ত সেখান থেকেই এসেছে স্বস্তির ধারা।
১৬ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার রান ১ উইকেটে ৮৩। চার ওভার, আর চারটি ওভার হলেই ফল আসত ম্যাচে। জিতে যেত অস্ট্রেলিয়া। ১ উইকেটই থাকলে ২০ ওভারে অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজন ছিল ৪৮ রান, ২ উইকেট হারালে ৫৮, তিন উইকেট হারালে ৬৯।
কিন্তু এক দফা বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ থাকার পর আবার যখন শুরুর ঘোষণা এলো, তখনই আবার বৃষ্টি। আর থামাথামি নেই। মাশরাফিদের জন্য সেটি সুখের ধারায় অবগাহন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৪৩.৩ ওভারে ১৮২ (তামিম ৯৫, সৌম্য ৩, ইমরুল ৬, মুশফিক ৯, সাকিব ২৯, সাব্বির ৮, মাহমুদউল্লাহ ৮, মিরাজ ১৪, মাশরাফি ০, রুবেল ০, মুস্তাফিজ ১*; স্টার্ক ৪/২৯, হেইজেলউড ১/৪০, কামিন্স ১/২২, হেড ১/৩০, হেনরিকেস ১/৩০, জ্যাম্পা ২/১৩, ম্যাক্সওয়েল ০/৯)।
অস্ট্রেলিয়া: ১৬ ওভারে ৮৩/১ (ওয়ার্নার ৪০*, ফিঞ্চ ১৯, স্মিথ ২২*; মুস্তাফিজ ০/২৭, মাশরাফি ০/৩০, রুবেল ১/২১, মিরাজ ০/৪)।
ফল: ম্যাচ পরিত্যক্ত