বঙ্গবাজারের পোড়া ধ্বংসস্তূপের উপর মানুষ আর মানুষ; কেউ এসেছে পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজার দেখতে, কেউবা এসেছে নিজের দোকন খুঁজতে, আর কেউ এসেছে পোড়া টিন ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিতে।

)<div class="paragraphs"><p>বঙ্গবাজারের পোড়া ধ্বংসস্তূপের উপর মানুষ আর মানুষ; কেউ এসেছে পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজার দেখতে, কেউবা এসেছে নিজের দোকন খুঁজতে, আর কেউ এসেছে পোড়া টিন ও অন্যান্য জিনিসপত্র নিতে।</p></div>
বাণিজ্য

ঝুঁকিপূর্ণ বিপণি বিতান থেকে ব্যবসায়ীদের সরতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান

Byজ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

ঢাকার যেসব বিপণি বিতানকে ফায়ার সার্ভিস ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করেছে সেগুলো এখনই ছেড়ে দিতে ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।

পুড়ে যাওয়া বঙ্গবাজারে পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে ‘কাঁচা স্থাপনা না থাকাই উচিৎ’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

দীর্ঘ সময় ধরে জ্বলতে থাকা ভয়াবহ আগুনে ঢাকার কাপড়ের সবচেয়ে বড় মার্কেট বঙ্গবাজারসহ আশেপাশের কয়েকটি বিপণিবিতান পুড়ে যাওয়ার পরদিন বুধবার বিকালে বঙ্গবাজার পরিদর্শনে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

এর আগে দুপুরে ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ঢাকায় ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট ও বিপণি বিতানগুলোয় জরিপ চালাতে মাঠে নামছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।

তিনি বলেছেন, “আপাতদৃষ্টিতে রাজধানী সুপার মার্কেট, গাউছিয়াসহ বেশ কিছু মার্কেটকে ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে। বৃহস্পতিবার থেকে এসব মার্কেটে জরিপ শুরু হবে। জরিপের ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবেই জানানো হবে।”

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ২০১৯ সালে বঙ্গবাজার মার্কেট ঝুঁকিপূর্ণ বলে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে নোটিস টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তারা সতর্ক হয়নি।

সকালের ভয়বাহ আগুনে বঙ্গবাজার মার্কেটের পাশের মহানগর মার্কেট, আদর্শ মার্কেট ও গুলিস্তান মার্কেট পুরোপুরি ভষ্মীভূত হয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পাশের এনেক্সকো টাওয়ার এবং আরও কিছু ভবন।

আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

ঝুকিপূর্ণ বিপণি বিতানগুলোর বিষয়ে সতকর্তার কথা জানিয়ে এদিন বিকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, “আমি আপনাদের মাধ্যমে জানাতে চাই ফায়ার সার্ভিস যেগুলোকে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলো হিসেবে চিহ্নিত করেছে সেগুলো যেন ব্যবসায়ীরা ইমিডিয়েটলি পরিত্যাগ করেন।

“ভবিষ্যতে যেন আর এরকম দুর্ঘটনা না হয় সেজন্য আমি আপনাদের (ব্যবসায়ীদের) অনুরোধ করব আপনারা ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশিকাগুলো মেনে চলবেন। সেই সঙ্গে ঝুঁকিপূর্ণ যদি আর কোনো মার্কেট থাকে ফায়ার সার্ভিস সেটাও নির্দেশনা দেবে। ব্যবসায়ীদেরও এসব বিষয়ে চিন্তা করতে হবে।“

অগ্নিনির্বাপনের সব রকম ব্যবস্থা না থাকায় কোনো বিপণি বিতান ঝুঁকিপূর্ণ হলে তিনি সেখান থেকে ব্যবসা ধীরে ধীরে সরিয়ে নিতেও ব্যবসায়ীদের অনুরোধ করেন।

কিছু কিছু ভবনকে ঢাকা শহরে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে-সেগুলো অপসারণে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে কি না জানতে চাইলে কামাল বলেন, “এটা কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাজ না। এটা রাজউক ও সিটি করপোরেশনের কাজ।“

এ তালিকায় অনেক আগেই ফায়ার সার্ভিসের ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করা কয়েকটি বিপণি বিতান রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “এটাও (বঙ্গবাজার) ছিল তার মধ্যে। অন্যগুলোর কথা আমি বলতে চাই এই সমস্ত ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট যেন আমরা পরিত্যাগ করি।”

বঙ্গবাজারে কাঁচা স্থাপনা না থাকাই উচিৎ

মঙ্গলবার সকাল থেকে কয়েক ঘণ্টাব্যাপী জ্বলতে থাকা আগুনে টিন ও কাঠ দিয়ে তৈরি বঙ্গবাজারের দোকানগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে থাকা পাঁচ হাজার দোকানির জীবিকার সম্বলের পুরোটাই পুড়ে গেছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানা কামাল। ফাইল ছবি

অগ্নিকাণ্ডের সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা গেলেও বিভিন্ন স্থানে শিখা দেখা যাচ্ছিল। এমনকি রাতেও দুটি স্থানে আগুন জ্বলতে দেখা গেছে, তা নেভাতে কাজ করে যান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা।

অগ্নিকাণ্ডে বঙ্গবাজার ভষ্মীভূত হওয়ার একদিন পরও লাগোয়া এনেক্সকো টাওয়ারের আগুন নেভানোর কাজ শেষ হয়নি।ওই ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট বুধবার সকাল থেকে ঘটনাস্থলে কাজ করছে। মই দিয়ে পঞ্চম থেকে উপরের তলাগুলোতে তারা পানি ছিটাচ্ছে।

পুনর্বাসনের নামে আরেকবার একই ধরনের স্থাপনা নির্মাণের সুযোগ দেওয়া হবে কি না এমন প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, “এটা সিদ্ধান্ত হবে।

“এখন সিটি করপোরেশন এখানে ব্যবস্থা নেবেন। তারা প্ল্যান করে এরকম দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সেই ব্যবস্থা করবেন।”

ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করার পরও ব্যবস্থা নিতে না পারা আপনাদের দুর্বলতা কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, “সিটি করপোরেশন নতুন করে একটা ১০ তলা ভবনের জন্য ব্যবস্থা নিয়েছিল। টেন্ডারও করেছিল। আমাদের ব্যবসায়ীরা সময় চেয়েছিল। হাইকোর্ট থেকে তারা একটা স্টে অর্ডার নিয়ে এসেছিল।”

আবারও এক সাংবাদিক এখানে ফের ‘কাঁচা স্থাপনা নির্মাণ যৌক্তিক কি না’ জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, “এখানে কাঁচা স্থাপনা না থাকাই উচিৎ।”

ভয়াবহ আগুনে পুড়েছে ঢাকার বঙ্গবাজার। মঙ্গলবারের সেই আগুনে পোড়া দোকান থেকে বের করা কাপড়ের স্তূপে ভালো কিছু পাওয়ার আশায় এক দোকানি।

অপূরণীয় ক্ষতির উদাহরণ

পুলিশ সদর দপ্তর নিরাপদ জায়গায় আছে কি না প্রশ্ন করা হলে আসাদুজ্জামান কামাল বলেন, সেটাতো নিরাপদ জায়গাতেই আছে। মার্কেটে আগুন না লাগলে তো সেটা নিরাপদেই ছিল। যারা এ ধরনের মার্কেট করবেন তারা যেন পারিপার্শ্বিক বিষয়গুলো খেয়াল রাখেন।

“এই অপূরণীয় ক্ষতি একটা উদাহরণ হয়ে থাকবে। আমরা এই বিষয়গুলোকে কীভাবে প্রটেকশন দেব সেই প্রশ্নও এসে গেছে। এর পাশে পুলিশ হেডকোয়ার্টার, সেটাও অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। পুলিশ হেডকোয়ার্টারে কিছু অগ্নিনির্বাপন যন্ত্রপাতি তারা রাখে। সেগুলোর জন্য তারা কিছুটা হলেও রক্ষা করতে পেরেছে। যদিও কিছুটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বাকি এই চারটি মার্কেট সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে।“

এ বিষয়ে দুটি কমিটি করা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে একটি কমিটি করা হয়েছে যাতে করে জানা যায় কেন এই দুর্ঘটনা ঘটল এবং ভবিষ্যতে করণীয় কী সে বিষয়েও কমিটিগুলো আমাদের দিকনির্দেশনা দেবে।”

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ঘটনাস্থলে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সমবেদনা জানান।

তিনি বলেন, “এই ব্যবসায়ীরা তৈরি হয়েছিলেন ঈদের বাজার ধরতে। আমরা এটাও জানি এই ব্যবসার জন্য তারা সারা বছর বসে থাকেন। সেজন্য তারা বিভিন্নভাবে পণ্য সংগ্রহ করেন। তাদের বন্ধুদের কাছ থেকে সহযোগিতা নিয়ে এই পণ্য সংগ্রহ করেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত দুঃখপ্রকাশ করেছেন। এটা সবসময় মনিটর করছেন। এটা কী করা যায় তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন পরবর্তীতে।”

বঙ্গবাজার ইসলামিয়া মার্কেট ভবনের ভেতরে দুপুরে আগুন নেভাতে তৎপর ফায়ার সার্ভিসের কর্মী।

ফায়ার সার্ভিসের দপ্তরে হামলায় মামলা হবে

মঙ্গলবার সকালে বঙ্গবাজারে আগুন লাগার পর রাস্তার উল্টো দিকের ফায়ার সার্ভিস সদরদপ্তরে হামলার ঘটনা ঘটে।

এতে ফায়ার সার্ভিসের ১৪টি গাড়ি নষ্ট হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “আমি মনে করি তাদের ধৈর্য্য ধরা উচিৎ ছিল। তাদের যদি কিছু বলার ছিল পরে তারা বলতে পারত। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা জীবন বাজি রেখে অগ্নিনির্বাপনের কাজ করছে।“

হামলায় রোবোটিক সিস্টেমে চলে ফায়ার সার্ভিসের এমন একটি দামি গাড়িও নষ্ট হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আহত হয়েছে অনেকেই।

দুর্ঘটনার সময় সবাইকে সংযত থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “যদি কোনো সংস্থার গাফিলতি আমরা দেখি তাহলে তো অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব। দুটি কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। কমিটির মূল্যায়নে যদি কারও গাফিলতি পাওয়া যায় তাহলে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেব।

“ফায়ার ব্রিগেডে ভাঙচুরের ঘটনায় তারা মামলাতো একটা করবেই। এটা আমরা দেখছি।”

আগুন লাগার পরের ঘটনা তুলে ধরে কামাল বলেন, “আমরা যতটুকু শুনেছি ৬টা ১০ মিনিটে আগুন ধরে যাওয়ার পর ২-৩ মিনিটের মধ্যেই ফায়ার সার্ভিসের লোকেরা আসে। তারা আগুন নেভানো শুরু করে। কিন্তু আপনারা দেখেছেন আগুন কিন্তু চোখেন নিমিষেই অনেক বিস্তার করে। ফায়ার সার্ভিসের এক্সপার্ট লোকেরা কাজ করতে এলেও নানা বাধার সম্মুখীন হয়েছেন। তারা প্রাণান্ত চেষ্টা করেও দীর্ঘ সময় পরে আগুন নেভাতে পেরেছেন।“

কাপড় ও কাগজে আগুন লাগলে তা নেভাতে সময় লাগে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ফায়ার সার্ভিসের বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। ব্যবসায়ীরাও অগ্নিদগ্ধ হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনীর সদস্য ও স্থানীয় মানুষ মিলে সম্মিলিত ব্যবস্থা নিয়েছিল।

পানির ব্যবস্থাপনা পর্যাপ্ত নয়- ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ফায়ার সার্ভিসকে আমরা ঢেলে সাজাচ্ছি। কিন্তু তারা অসহায় হয়ে যায় যখন পানির আধার না থাকে। ২০ বছর আগে এখানে অনেক পুকুর ছিল। আমরা নিজেদের প্রয়োজনে সব ভরে ইমারত করে ফেলেছি। সবসময় পানি সরবরাহ থাকার জন্য আমি মনে করি সিটি করপোরেশন ও রাজউক এটার ব্যবস্থা নেবে।”

আরও পড়ুন:

SCROLL FOR NEXT