তিউনিসিয়ার হামলাকারী: ব্রেক ড্যান্সার থেকে খুনি

তিউনিসিয়ার সুস শহরের সাগর সৈকতে গুলি করে ৩৯ জনকে হত্যার দুদিন আগেও হত্যাকারী সাইফ রেজগুই নিজের শহর গাফোরে কফির সঙ্গে ধূমপান করতে করতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিয়েছেন।

>>রয়টার্স
Published : 29 June 2015, 04:49 AM
Updated : 29 June 2015, 01:01 PM

বুধবারের ওই আড্ডায় বন্ধুদের সঙ্গে প্রিয় ফুটবল দল, বান্ধবী আর নিজের ব্রেক-ড্যান্স দক্ষতা নিয়ে কথা বলেছেন। 
 
পরদিন বৃহস্পতিবার এক চাচার সঙ্গে পারিবারিক বিষয়াদি নিয়ে কথা বলেছেন। নিকটবর্তী ঐতিহাসিক শহর কাইরুয়ানে স্নাতকোত্তর অধ্যয়নের এক বিরতিতে বাড়িতে এসেছিলেন তিনি। 
 
এর একদিন পর শুক্রবার, সাইফ শান্তভাবে হেঁটে তিউনিসিয়ার ভূমধ্যসাগর উপকূলীয় অবকাশ কেন্দ্র সুসের ইম্পেরিয়াল মারহাবা বিচ হোটেলে গিয়ে, একটি কালাশনিকভ রাইফেল (একে-৪৭) দিয়ে মাত্র পাঁচ কী ছয় মিনিটে ৩৯ জন বিদেশি পর্যটককে গুলি করে হত্যা করেন। 
 
জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটের (আইএস) নামে এই কাজ করেন তিনি। 
 
নিজেদের এক উচ্চ শিক্ষিত, প্রাণবন্ত তরুণ কীভাবে সামান্য ইঙ্গিত দিয়ে স্বাভাবিক জীবন-যাপনের ভিতর থেকেই কট্টরপন্থী জিহাদিদে পরিণত হল, তা ভেবে বিস্মিত হচ্ছেন তিউনিসিয়ার মানুষ। 
 
ফুটবল ও সঙ্গীতের ভক্ত মধ্যবিত্ত পরিবারের এই তরুণকে ইসলামি জিহাদিরা কীভাবে অল্প সময়ের মধ্যে জঙ্গি বানিয়ে ফেলল তা ভেবেও কোনো কিনারা পাচ্ছেন না রেজগুইয়ের পরিবারের সদস্যরা, বন্ধুরা ও প্রতিবেশীরা। 
 
তিউনিসিয়ার দক্ষিণপশ্চিমাঞ্চলের এক বিচ্ছিন্ন, শান্ত কৃষি শহর গাফোর। এখানে সাইফের পরিবার ও প্রতিবেশীরা নিজেদের এক প্রিয় সন্তান কীভাবে দেশের সবচেয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনাটি ঘটালো তা বুঝতে পারছেন না।
 
কর্তৃপক্ষ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার আগে সৈকতে, হোটেলের সুইমিংপুলে ও রিসিপশনে সাইফ একাই গুলি করে ৩৯ জনকে মেরেছেন। 

মার্চে রাজধানী তুনিসের বোর্দো জাদুঘরে ২১ জনকে হত্যাকারী দুই তরুণের মতো সাইফও নিজের কট্টরপন্থী ধ্যান-ধারণা সম্পর্কে পরিবার ও বন্ধুদের তেমন কোনো ইঙ্গিত দেননি।
 

“সে এ ধরনের ভয়াবহ কিছু করতে পারে তা কে ভেবেছিল? বলেন চাচা আলি রেজগুই, সাইফদের সাজানো-গুছানো একতলা সাদা বাড়িটার সামনে বসেছিলেন তিনি। 

“হতে পারে সে যেখানে পড়তো, সেখানেই তার এসব পরিবর্তন হয়েছিল, অথবা হয়তো ইন্টারনেটের মাধ্যমে এসব হয়েছে। যাই হোক, আমাদের কাছে কোনো উত্তর নেই,” গভীর হতাশার সঙ্গে বলেন তিনি।
 
চারপাশে গমের ক্ষেত ও জলপাই গাছে ঘেরা এই ছোট শহরটির বাসিন্দারা ও সাইফের বন্ধুরা এক উৎফুল্ল তরুণের কথাই মনে করতে পারেন, যে নিয়মিত নামাজ পড়া ছাড়া ধর্ম নিয়ে আর কোনো আলাপই করতো না। সে অন্য শহরে পড়াশোনা করতো, কিন্তু প্রায়ই বাড়িতে চলে আসতো। 
 
গত বুধবারও সে এসেছিল। শহরের একটি ক্যাফেতে চার কী পাঁচ বন্ধু মিলে আড্ডা দিয়েছিল। ফুটবল নিয়ে কথা বলেছে, এমনকী বন্ধুদের সঙ্গে প্রিয় ক্লাবের দলীয় সঙ্গীতও গেয়েছে।  
 
“সে কখনোই কট্টরপন্থী কোনো ধারণা প্রকাশ করেনি, সে ধরনের কোনো ইঙ্গিতও করেনি। সে ধর্ম নিয়ে কখনো কোনো কথাই বলত না,” বলেন মোহাম্মদ নামে সাইফের এক বন্ধু। 
 
“আপনি যার সঙ্গে এত সময় কাটিয়েছেন, আপনার এক বন্ধু, সে হঠাৎ করে খুনিতে পরিণত হবে, এটি মেনে নেওয়া যায় না,” বলেন মোহাম্মদ। 
 
কীভাবে সাইফ জঙ্গি হয়ে উঠলেন তা এখনো পরিষ্কার নয়। কোনো জঙ্গিগোষ্ঠী তাকে দলে ভিড়িয়েছিল, এমন তথ্যও খুব বেশি নেই। বোর্দো জাদুঘরে হামলাকারী দুজন মসজিদ থেকে কট্টরপন্থীদের খপ্পরে পড়েছিলেন। কিন্তু গফোরের মসজিদটির সঙ্গে অতিকট্টর-ইসলামপন্থীদের কোনো সম্পর্ক নেই।  
 

সাইফ যেখানে পড়তো, সেই কাইরুনে একটি বিখ্যাত মসজিদ আছে। ২০১১-র আরব বসন্তের পর থেকে এই মসজিদটি কট্টরপন্থী ইসলামি গোষ্ঠী আনসার আল শরিয়ার একটি ঠিকানা হয়ে উঠেছে। 
কিন্তু কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সাইফের নাম কোনো সম্ভাব্য সন্ত্রাসীর তালিকায় ছিল না এবং কট্টর ইসলামপন্থীদের সঙ্গে তার কোনো যোগাযোগ আছে বলেও শোনা যায়নি। 
সন্দেহভাজন হিসেবেও পুলিশ তাকে কখনো বিবেচনা করেনি। নিরাপত্তা সূত্রগুলো দাবি করেছে, তার কট্টরপন্থায় দীক্ষা নেওয়ার সময় ছয় মাসের বেশি নয়।    
“তার সঙ্গে তিউনিসিয়ার বাইরের জঙ্গিদের যোগাযোগ ঘটেছিল, ইন্টারনেটের মাধ্যমে,” বলেছেন এক নিরাপত্তা সূত্র। 
আইএসের আহ্বানে ‘লোন উলফ’ জঙ্গি হিসেবে সাইফ একাই কাজ করেছেন বলে ধারণা করছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। সরাসরি তার সঙ্গে কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর যোগাযোগ ছিল না বলেই মনে করছেন তারা।
ফরেনসিক প্রতিবেদনেও সৈকতের হত্যাযজ্ঞে ব্যবহৃত গুলিগুলো সব এক কালাশনিকভ থেকেই ছোঁড়া হয়েছিল বলে নিশ্চিত করা হয়েছে। ওই কালাশনিকভটিই সাইফ ব্যবহার করেছিলেন।